জং ধরা চাবি
/////////////////////


দীর্ঘ একুশ বছর পর আবার
একবার দেখলাম তাকে।
দু নয়নে যা দেখি কাঁটা দেয়
শিউরে উঠি মন আঁৎকে উঠে।
বধূ একি সাজ আজ তব অঙ্গে,
রংবে রঙের বাহারি ঘাঘরা
নেই তব সঙ্গে?
থমকে গেলাম,
শরীরে শক্তি নেই পা দুটো চলছে না আর আগে,
মন আজ দ্বিধা গ্রস্থ পথ বিভক্ত হয়েছে দুই ভাগে।


বৈরাগ্য দশায় ছেয়ে গেছে দেহ মন,
অঙ্গে অঙ্গে সর্বরাগে ,সর্বাঙ্গে!!
কামিনী কাঞ্চনের ধরাভূমে
কার লাগি হয়েছো আজ নিরাসক্ত,
একদিন এসব ছিল আকুণ্ঠ,
তোমার মায়াবী রসে আদ্যপান্ত রসসিক্ত।


ওই নেশা ধরানো চোখে,
আজ আর নেই কোনো নেশা।
বধূ একি আজ তোমার চোখের ভাষা!!
পটল চেরা চোখে কত প্রাণ হারিয়েছে প্রাণের ভাষা,
কারো ভেঙেছে বাসা,কেউ বা
বুনেছে কত রঙ্গিন আশা।
প্রহরের পর প্রহর কেটেছে তোমার দুয়ার পরে,
কখনো মুখ তুলে তাকাও নি
তাচ্ছিল্যে সরিয়ে দিয়েছ দূরে।
প্রতীক্ষায় কেটেছে কত দিন
মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো অহংকারে।


বধূ আজ একি দশা তোমার গৃহবাসের,
বাহারি রঙের নেই ছটা,
নেই বিলাস বহুল জনস্রোত,
নেই কলরবের ঘনঘটা।
চারিধারে দেখা যায় বুনো ঘাসের  গুলবাহার।
প্রবেশ দ্বারে মাথা তুলে আছে
নাম না জানা দীর্ঘদেহী ক্যাকটাস।


ঘাসগুলো-
ভীষণ অগোছালো কারো নাম নেই জানা।
দরজার উপরের চৌকাঠটা শুধু দেখা যায় ।
যেন বিধি করছে দাঁত খিঁচিয়ে পরিহাস!!


দালানের নেই আর সেই জৌলুস
খসে খসে পড়ছে রূপ।
দাঁত বের করে আছে কিছু
চুন শুরকির স্তুপ।
এক জামানায় তোমার মত দেখিয়েছে
কত অহংকারির অহং রূপ।
অবকলন করছে আজ শুধু পরিহাস আর বিদ্রুপ।


তুমি নেই ,
কোনো কিছু নেই সময়ের স্রোতে,
সব কিছু হয়েছে পতিত জমিন পরে।
দামি দরজায় জং ধরা দামি তালার
মুখ বন্ধ,ঝুলছে অকাতরে।
দরজায় তাকালে আজও ফুটে ওঠে
সেই মায়াবী মুখ সাথে আমার দেওয়া নাকছবি।
ঘোলা চোখের মায়া কাটিয়ে দেখি
সবই মায়া চৌকাঠে ঝুলছে জং ধরা চাবি।