ন্যাড়াদার আসর।
//////////////////////////////////////
সন্ধ্যে ঘনিয়ে এসেছে
ঘরে ঘরে শাঁখ,ঝাঁজ,কাঁসর
ঘন্টার ধ্বনীতে মুখরিত পথ,প্রান্তর
আগরবাতি,প্রদীপের আলোয় পল্লী উঠেছে সেজে।
সন্ধ্যার মজলিশ খুব জমে উঠবে
ন্যাড়াদা আসরের মধ্যমণি
কচি কাঁচার চোখগুলো উৎসুক
মন ভীষণ কৌতূহলী।


গ্রামের সর্বজ্ঞানী,বিপদ অপদের সাহসবাণী
সবকিছুতেই ন্যাড়াদা পরশমণি।
মিষ্টি মধুর ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছে
উন্মুক্ত প্রাঙ্গনে,খোলা আকাশের নিচে
পাতি ঘাসের চাটাইয়ে বসে চেয়ে পথপানে
মিটিমিটি তারারও আছে ধৈর্য্য ধরে
ন্যাড়াদার অপেক্ষায়।
সবার বুকে ছটফটানি কখন দেখা পায়।
অনেক অপেক্ষার পরে এলেন উনি
মুড়ি,বাদাম ভাজা,আলুর চপ
আর সাথে গরম গরম বেগুনি।
মোটা ফ্রেমের চশমা পরা,
ভীষণ মোটা গোঁফ,
চুলহীন মাথা তার রাশ ভারী চোখ।


জমে উঠেছে আসর ন্যাড়াদা মধ্যমনি।
দেশ বিদেশের অনেক গল্প করেন
কত অভিজ্ঞতার কথাও বলেন।
চাষ আবাদ থেকে রাজনীতি,
শিক্ষা সবই উনার নখদর্পনে।
বটুক কাকা বলে উঠলেন
জানেন ন্যাড়া দা,
মনরঞ্জনের ছেলে পড়তে যাবে
নেই কোনো টাকা।
চিন্তা কিসের আমি তো আছি,
ডাক ছোড়া টাকে কেমন ছেলে?
দেখি একবার কি আছে তাতে।
কিন্তু কিন্তু করে গেলাম ন্যাড়াদার পাশে,
পিঠ থাপিয়ে বলে ওঠেন ভয় কিরে
ন্যাড়াদা তো আছে।


আমি এই গ্রামের আর আশেপাশের
দু তিনটি গ্রামের ন্যাড়াদা,
মনে রাখিস তোরও দাদা তোর বাপের ও দাদা।
বিপদ আপদ নিত্য প্রয়োজনে মনে রাখিস সদা।
কি পড়তে যাবি এবার বলত ছোড়া
কোথায় যাবি?
মুখ নিচু করে বললাম শহরে যাবো,
ডাক্তারি পড়তে।
খুশি হয়ে বললেন দাদা বেশতো তবে যা
তবে যাবার আগে একটি কথা দিয়ে যা।
শহর থেকে অনেক দূরে আমাদের এই গ্রাম,
ভালো কোনো ডাক্তার নেই
গ্রামের নেই কোনো নাম!
শিক্ষা শেষে থাকতে হবে আমাদের এই গ্রামে।
দিনে রাতে সবার সাথে জুড়ে যেতে হবে
রোগ ব্যাধির সংগ্রামে।


দাদার কথা মাথায় নিয়ে
তিরিশ বছর ধরে আছি এই গ্রামে
ন্যাড়া দার কথা মতো এখন
চার পাঁচটা গ্রাম আমায়
আর আমার গ্রামকে চেনে।
প্রতিদিন নিয়ম করে দিনের শেষে আসর বসে
মাঠের পারে,বটের তলে
কচি কাঁচার ভিড়,
আজও দেখতে পাই।
আসর আছে ভিড়ও আছে
শুধু ন্যাড়াদা নাই।


ভালো করে তাকিয়ে দেখি
দুটো লাইন লেখা বোর্ডের মাঝে,
জ্বলজ্বল করছে কতগুলো অক্ষর।
আসুন,বসুন,গল্প করুন ,
একে অপর কে সাহায্য করুন
এটা ন্যাড়াদার আসর।