পঞ্চাশটা টাকা দে না
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।


মোক্ষ্যদা বুড়ি বয়স হবে
প্রায় তিরাশি বছর
তিন পুরুষ ধরে আছে গ্রামে
দেখেনি কখনো শহর।
গ্রামের সরু খালের ধারে
বসে বসে সয়ম কাটায়।
পথচারী দেখে ডেকে ডেকে কয়
বলনা আজি কি বার? ,
সময় কত বেলা যে যায় বয়ে।
একাদশী পালন করেন বুড়ি
নিষ্ঠাভরে নির্জলা হয়ে।


দাঁত গুলো যায়নি পড়ে
চকচকেআছে শক্ত হয়ে,
গাল দুটো ঝুলে গেছে
শুধু বয়সের  ভারে।
অশক্ত শরীরে বল নেই তাই
চলাফেরা লাঠি সম্বল করে।
সোজা হতে পারেন না
চলে ঝুঁকে ঝুঁকে শক্তি নেই কোমরে।
কত কি তিথি নক্ষত্র
তাঁর চেনা জানা।
কত ঘটনা নিয়ে গল্প করেন বুড়ি।
গল্প আর শেষ হয় না
বলেন তিরাশি বছরে জমে আছে
কত কথা কত জানা অজানার গল্প ঝুড়ি  ঝুড়ি।
চোখের রশ্মি এখনো আছে
পত্র,কাগজ পড়েন গড় গড়িয়ে।
বলেন চশমা সেটা আবার কি জিনিস?
তোদের এখন চশমা লাগে
বলে ওঠেন চড়বড়িয়ে।
গল্প বলেন চোখের জলে,
এই যে খালটা দেখছিস
মরদ মোর পড়লো জলে
ভেসে গেল বানের তোড়ে।
তিন দিন পর শরীর এলো,
কুমিরে আধা খুবলে খেলো
বন কর্মী দিয়ে ছিল
কাপড়ে মুড়ে।
জানিনা সে কে ছিল ?
মোর মরদ না অন্য কেউ !
চোখের দেখা দেখতে পেলাম কই?
গ্রামের প্রধান,দেওর,শ্বশুর,ভাসুর
বলল শাঁখা, সিঁদুর ফেলে দিতে,
সেদিন থেকে বিধবা হলাম মুই।


সুখেই ছিলাম মরদের ওই বাস্ত ভিটেয়,
যা আজও আছে,
শুধু মালিকানা বদলে গেছে।
ছেলে দুটো বড় হলো শশুর,
বাড়ীর সঙ্গ পেল
বিধবা মাকে ভুলে গেল।
জোর জবর দস্তি টেনে হেঁচড়ে
বাড়ির থেকে বের করে দিল।
সেদিন থেকে ঠিকানা মোর
এই রেয়াপাড়া খালের ধারে।
একদিন এক বাড়ে !
মোর মরদের মরদেহ পাওয়া
গেছিল এই খালের পাড়ে।


শুনতে শুনতে সন্ধ্যে হয় সময় যায়
মোক্ষ্যদা বুড়ির গল্প
তবুও না ফুরায়।
বলেন,
এক বাড়ে মরদ গেল,
আজকের বাড়ে খালের পাড়টাও গেল,
বেঁচে থাকার ভিটাও নিল।
এই বয়সেও এই শাস্তি বোধহয় বাকি ছিল।
বাবু তুই এখন কোথায় যাবি?
তোকে একটা কথা বলব
মোকে পাঁচশটা টাকা দিবি,
বাঁচার ইচ্ছা নেই রে আর
পৃথিবীতে কে কার?
অনেক দিলাম
অনেক পেলাম!
অনেক দেখলাম।


বাবু তোর হাতে ধরি পায়ে পড়ি,
পঞ্চাশ টা টাকা দে না
বিষ কিনে খাব মরবো।
যম দুয়ারে যাবো,
যমের কাছে কিছু কথা
জানতে চাইবো।
এই জীবন আর রাখতে চাইনা।
সত্যি বলছি,
বিষ খেয়ে মরবো,
পঞ্চাশ টা টাকা দে না