সাগরিকা ষষ্ঠ পর্ব
**********************
দুঃসময়ে সবাই চেয়েছিল,
দিদিমণি আপনার পাশে থাকবে
উল্টে দিদিমনি ছেড়ে গেলেন বিপদ দেখে।
মা ঠাকুরণ দিনে রাতে
ঠাকুরের পায়ে মাথা ঠুকে গেছে।
অনেক পূণ্যির ফলে সবাই
ফিরে পেয়েছি আপনাকে।
মা ঠাকুরণের কিভাবে কেটেছে
সে মা শুধুই জানে।


কত্তা মশাই কত করে বললেন
বৌমা ঘরের লক্ষী,
পতির সহধর্মিনী এই সময়-
তোমাকে আকাশের খুব দরকার।
মুখের উপর বলে দিলেন
ছেলে আপনার আপনি বুঝুন
এই সবের মধ্যে আমি নেই আর।


পতী,সতী, গতানুগতিক
সেকেলে ধ্যান ধারণা।
আমি একবিংশ শতাব্দীর মেয়ে
এই সব পুরানো নাক্যামো,
ব্যাখ্যা মানিনা।
আপনার ছেলে সুস্থ হবে কিনা
কে জানে?
স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে
পারবে কি না সংশয় আছে মনে!
আপনি নিজেই জানেন না ও আর
দাঁড়াতে পারবে কিনা?
এইভাবে আমি আমার মূল্যবান জীবন
একটা পঙ্গু মানুষের জন্য
নষ্ট করতে পারিনা।
দাদাবাবু আপনি এখনও
মিছেই কেঁদে মরেন
দিদিমণি ফিরবেন না আর
এই কথাটা মানেন।


হরিহর সন্ধ্যে হয়েছে অনেক আগে
টের পাইনি আমি।
মেছো নৌকা গুলো ঘাটে ফিরছে
দেখ ওদের হালে নেইকো পানি।
ছোট বড় কত নৌকো সবার
জ্বলছে কেরোসিনের আলো।
তুইও ঘরের বাতি গুলো জ্বেলে দে
যা দূর করে দে ঘরের যত কালো।
তোর হাতে জাদু আছে
কথায় আছে প্রাণ
তাইতো এ যাত্রা বেঁচে এলাম
সবই তোর পুণ্যের দান।


কত্তা মা দিনে রাতে দুটি
চোখের পাতা এক করেন নি।
খাওয়া দাওয়া ভুলে কুল দেবতার
পায়ের থেকে একটুও সরেন নি।
তাই তো ভাগবান তোমার
প্রাণ নিতে পারে নি।


ঘেউ ঘেউ আওয়াজ এলো
ঘরের অন্ধকারে।
দুজনেই চমকে গেল ভুলে গিয়েছিল
টম আছে বারান্দার ঘরে।
হারিহর বলে আমার দেরি
হল এবার যাই।
সন্ধ্যে প্রায় সাতটা হলো
টমের চা বিস্কুট চাই।


দাদাবাবুর প্রিয় কুকুর
নাম রেখেছেন টম।
রাতের বেলায় সবাই আসতে
ভয় পায়,
যেন পুষে রেখেছে যম।
কুকুরটা কত ভালোযা বলি
নিয়ম মেনে চলে।
আর দাদাবাবু যেন বে-নিয়মে
চলতে পারলেই সুখ শান্তি মেলে।


ক্ষুধা,তৃষ্ণা,নিদ্রা,ভুলে দিদিমণি
দিদিমণি দিবানিশি।
বলিহারি যে মানুষটা বিপদে মুখ
ফিরিয়ে চলে গেছে!
দিনে রাতে তাঁরই তরে মরে বাঁচে!


ক্রমশ............…...........