সাগরিকা  দ্বিতীয় পর্ব
।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।


হরিহর এসে বলে,
বাবু খাবার ঢাকা আছে অনেক ক্ষণ হলো।
গরম করে  দেবো বোধয় ঠান্ডা হয়ে গেল ।
না না আজকে আর ইচ্ছে নেই তুই নীচে যা।
যাবার সময় চাদর টা একবার দিয়ে যাস।


হারিহর ,আকাশ অস্ফুটে ডাকে,
হ্যাঁ বাবু আর কিছু আনতে হবে আমাকে।
দিদিমনির কথাকিছু তোর মনে পড়ে?
থাকনা বাবু ভাবলে শুধু মন খারাপ হয়।
তাই কাজের মধ্যে ডুবে থাকি
যাতে মনে করতে না হয়।


একদিন ওই রাতির বেলায়
আমি হ্যারিকেন হাতে
যাচ্ছিলুম গোলাঘরে।
চাবি দিতে ভুলে গেছিলুম
দরজা খুলা ছিল হাটকরে।
হ্যারিকেন টা দুলছে মোর
পায়ের তালে তালে।
তাই না দেখে দিদিমণি
চেঁচিয়ে ওঠে ভুত বলে।
কানে শুধু আওয়াজ এলো
ভেবে পাইনা দিক।
আমিও ভয় পেয়ে বাতির আলো
কম করে দিই।


ভয়ের চোটে দাঁড়িয়ে গেলাম আমি
তিন পুরুষ ধরে আছি এই ঘরে
কোনো দিনও ভুত কখনোও দেখিনি।
ওপর তলায় তাকিয়ে দেখি দিদিমণি চেঁচায়।
চেঁচানিতে ভয়ে আমার প্রাণটা এই বুঝি যায়।
বাতি বাড়িয়ে চেঁচিয়ে বলি
দিদিমণি আমি চাকর হরি।
রেগে গিয়ে বলল আমায়
তুই এত রাতে হ্যারিকেন
নিয়ে কি করিস?


বললাম গোলাঘরে চাবি দিতে
গেছিলুম তাই এত রাতে ঘোরাঘুরি।
তোর চাবির চক্করে আমার প্রাণে
লেগে যাচ্ছিল চাবি।
এবার থেকে যখন যেখানে যাবি
আমায় বলে যাবি।


জানিস অন্ধকারে আমার
ভীষণ ভয় করে।
আর একটু হলেই আমি যাচ্ছিলাম মরে।
মরে গেলে তোর দাদাবাবুর কি হত?
জানিস তুই বিপদ ডেকে এনেছিলি কত?
একটু পরেই বলেন,
এত অন্ধকার আমি আগে কখনো দেখিনি।
তাই এত ভয় আর অন্ধকারে
চলার সাহস হয়নি।


পরের দিন মা ঠাকুরণ
ডেকে পাঠালো বলাইকে।
এই ঘরের থেকে বাস স্ট্যান্ড
বিজল বাতি লাগাতে।
তিন দিনের মধ্যে রাস্তা হলো আলোময়।
গাঁয়ের সবাই সেই প্রথম দেখল
বিজলি উৎপাদক ডায়নামো।
দাদাবাবু রাত্রি হলো
খাবার একটু খয়ে নিন
দিদিমনির কথাই তো ভেবে যাচ্ছেন রাতদিন।


গ্রামে প্রথম যেদিন দেখেছিলেন
ছোট্ট এক ছাগল ছানা
অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন
কি খুশিই হয়েছিলেন
ছিলনা কোনো সীমানা।
আদর করে কোলে নিয়ে
নাম দিয়েছিলেন রুবি।
কখনো কোলে করে ,
কখনো দুধ খাওয়ানোর,
কত ভঙ্গিমায় তুলেছিলেন ছবি।


সব কিছু ভুলে গেলেন
সবাই কে ফেলে গেলেন
শুধু ভুলে গেল না রুবি।
পনের দিন না খেয়ে
দিদিমনির পথ চেয়ে চেয়ে
অবশেষে মরেই গেল অবলা।
পড়ে রয়েছে সেই আদর করা ছবি।


ক্রমশ.....................……