তিন ঠ্যাং এক বুড়ী
%%%%%%%%%%


ও পাড়ার ঐ কমলা কাকী
আশি তিরাশির বুড়ী
এখনো দিব্যি জোয়ান আছেন
মাঘের শীতেও ঘুরে বেড়ান
দিয়ে শালমুড়ী
এই গাঁয়েরই একমাত্র তিন ঠ্যাং এক বুড়ী
ঠাওরে ঠাওরে গল্প বলেন
য-খ-ন  আমি ডাগুর ডুগুর
বয়স বছর ষোলো
ভিন গাঁয়েরই ডাঙর মানু শ্যামল
বাবুর সাথে বিয়ে আমার হলো
ছেড়ে এলাম বাপের বাড়ী বসত বাড়ী ঘর
সবাই সবই আমার আপন হলো
কেউ ছিলোনা পর


স্বামী আমার ভালো মানুষ
ছিল অগাধ কদর
সবই ছিল নিকানো উঠোন
বাগান বাড়ি জমিদারী
আর ধান ভরা গোলাঘর
গল্প বলার ছলে জলে ভোরে যায় আঁখি
সামলে নিয়ে বলেন বুঝলি পরে শোনাব ক্ষন
আজ এখন রাখি
এখন উনি বস্ত্র পরেন শুভ্র সাদা
কালো পাড়ের শাড়ী
সে যে এই  গাঁয়েরই তিন ঠ্যাং এক বুড়ী
ডাক্তার ব্যদ্দি হীন গ্রামের
তিন পুরুষের উনই ধাত্রী জননী
সোহেছেন অনেক উত্থানবপতন
আপদে বিপদে উনিই শঙ্কানাশিনি


গল্প করেন
হারিয়ে গেছে পুরানো সময়
নেই রজনীকান্তের গান
নেতাজি-কাজী নজরুল ইসলাম
হারিয়ে গেছে শীতের সকালে
বেগুনভাজা আর চড়ুই ভাতির টান
এমনিকরে স্মৃতির আয়নায় দিয়ে সুড়সুড়ি
দিব্বি হাঁক দিয়ে ঘুরে বেড়ায়
তিন ঠ্যাংআ ঐ বুড়ী ।।


দিন দুপুরে শুকুর বারে
হারানের ছেলের কি জানি কি হলো?
হাঁকডাক কান্না কাটি
সবাই ব্যাস্ত হয়ে গেলো
ডাক্তার নাই ব্যদ্দি নাই
হারানের ছেলে এবার বোধয় গেলো
ছুট্টে গিয়ে নবীন কাকা
ডেকে নিয়ে এলো
কমলা কাকী হাতে লাঠি
কিছু লতাপাতা
জড়ি বুটি খাইয়ে দিলো ।
ক্ষণিক পরে হারানের ছেলে
দিব্বি ছুটে বেড়ায় ।
কাঁপা গলায় কাকী বলে
ওরে হা-রা-ন এখনো আছি দিনে রাতে
প্রয়োজনে একবার তো আয় ।।
এমনিকরে ত্রাতা দাতা
দাপিয়ে বেড়ায় হাতে নিয়ে জাদু ছড়ি,
তিনি আমাদের গ্রামের একমাত্র
তিন ঠ্যাং ওই বুড়ী ।।


গল্প বলেন -
স্বদেশ দেশপ্রেমের টান
শোনায় বন্দেমাতরম গান
সেই যে কবে শ্যামল বাবু
দেশের টানে পা বাড়ালো
ভুলেগেছি মনে পড়েনা
ঠিক সাময় টা কখন ছিলো
এলোনা ফিরে বাড়লো সময়
কোথায় যে উনি হারিয়ে গেলো
আরও বলেন,
বেঁচে থাকার পাইনা আর আশ
বাকি যা ছিলো কলেরা কেড়ে নিলো,
ছড়িয়েছে শুধু প্রাণ হানির ত্রাস
ছল ছল জলে ভোরে যায় আঁখি,
উঠি আজ
শোনাব আরেক দিন
আজ তবে রাখি ।।


এখনো সকাল সন্ধ্যে
হাঁক দিয়ে খোঁজ নিয়ে যায়
কিরে হারান নবীন
কোনো কিছু হয়নি তো বাড়াবাড়ী
আজও দিব্বি ঘুরে বেড়ায় তিন ঠ্যাংআ ওই বুড়ী
গেল মাসের কিছুদিন হ'ল
কমলা কাকী আর আসেনা
খবর নেই কোনো
একে ওকে খোঁজ নিয়ে
গেলাম কাকীর বাড়ি,
তিনদিন হলো ঘুমিয়ে আছেন
ওঠার নেই কোনো জারিজুরি
ভুলে গেল গ্রামের মানুষ দান অবদান তাঁর
আত্ম সুখে মগ্ন সবাই এখন,
কেউ নেয় না
আর কামাল কাকীর নাম
নামটা তাঁর শুধু কমলা
ছিলেন গ্রামের প্রাণ।
এই প্রজন্ম শতক দূরে
জানবে না নিকানো উঠোন
আর কামাল কাকীর সুনাম


কি যে হলো হারিয়ে গেলো
আর আসেনা হাঁক দেয় না
ফেলে গেলো সেই লাঠি
আর কালো পাড়ের শাড়ী
সে যে ছিল আমাদের গ্রামের
তিন ঠ্যাং এক বুড়ী
শুদ্ধি -অশুদ্ধি, শুভ -অশুভ,
সবই ছিল তার নখদর্পনে ,
উপোষ একাদশী বিধবা সাধবা
সবাই যেত নিত্য প্রয়োজনে
স্মৃতি ধূসর গালিচা বেয়ে
সবাই যাবে ভুলে,
আমিও একদিন নাম লেখাবো
ষড় ঋতুর সকালে নয় বিকেলে
ভুলে যাওয়ার দলে
ডাক্তার ব্যদ্দি সবই আছে
গ্রাম নেইকো আর
কামাল কাকীর নেই দরকার
এসেছে নতুন জোয়ার


ঘূর্ণা বর্তে ঘুরে ফিরে
সবাই এখন একা,
জটিল জটিল ঘরবাড়ি সব
গোলাঘরটাই ফাঁকা।
মানুষ আছে শহর ভরে
মন নেইকো কারো ,
আছে শুধু মুখোশ ধারী সব
ঠকাও যত পারো ।।
কমলা কাকীর খুব দরকার
ফানুস চাই না আর,
মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি
ভড়ংবাজি ছাড়ি,
মাগো প্রতিঘর যেন পায়
কমলা কাকী
আর তিন ঠ্যাং ওই বুড়ী।।