ত্রয়ী
""""'''""""""""”""""""""""""""""""""""""""


মনে পড়ে!!
আমরা ছিলাম  ত্রয়ী'-
লিনা ,ইলিয়ানা, আর ময়ী ।।
প্রতিদিন ,প্রতিক্ষণ,
কথা হতো হরদম,
ক্লাসের ফাঁকে,চলতে ফিরতে মেঠো পথে,
তবুও মনে হতে সময়টা ভীষণ কম ।।


আমার ত্রয়ী ছিলাম -
একে অপরের প্রেরণা ,
হিংসে হতোনা কিন্তু ঈর্ষা করার মতো,
রূপ,গুন,ছিল ইলিয়ানার।


আমি ছিলাম সাদামাটা,
ঘরোয়া ,ঘরকন্যা,
আর ময়ী ছিল অহংকারী রূপে অনন্যা ।।
আমারা ত্রয়ীর মনের মিলের
কোনো কম ছিলোনা ।।


এমনি করে পঞ্চম থেকে
দশম শ্রেণী পার  হয়ে গেল ,
এরই মাঝে এলিয়ানার বাবার
চাকরির বদলির খবর এলো।।
খবর শুনে আমার ,
চোখ ভাসে জলে,
বুক ফেটে যায়।
এদিক ওদিক অনন্যোপায়
দিতে হলো বিদায় ।।


এমনি করে বছর দুই
আরো পার হলো ,
ত্রয়ী থেকে দ্বয়ী দিয়ে ,
যাত্রা শুরু হলো ।।
দেখতে দেখতে দ্বাদশ শ্রেণী
হয়ে গেল পার,
কলেজ পড়ার ছলে ময়ী উত্তরে
আর আমি  দক্ষিণে,
এভাবে পথ চলা শুরু একার ।।


এমনি করে তিরাশিটা
শুক্লপঞ্চমী পার হয়েছে ।
কোলো পরিপাটি
দীপাবলি সাদা হয়ে গেছে । ।
চৌঠা মে স্মৃতির ভেলা
আজও ভেসে রয় ।
সেটা ছিল আমার প্রথম দিন ,
যেদিন আকাশের সাথে দেখা হয় ।।


প্রথম প্রথম একটু খটকা ,
ভয় ,ভয়, লজ্জা ,লজ্জা ছিল।
অল্প দিনে ও জায়গা
দিয়ে জায়গা করে নিলো ।।
বিশ্বাস- অবিশ্বাস ,ভাঙা ,
গড়ায় সব কিছুতেই ওরই কথা ।
আমি তখন অত্মসমর্পিতা,
ওরই ছায়ায় বেঁচে থাকা এক স্বর্ণলতা ।


লোকে বলে নজর লাগলে
সুখ বেশিদিন সয়না ।
সত্যি হলো,
আমার খুশির ভূগোল বদলে দিলো
ছোট্ট এক দুর্ঘটনা।।
চলে গেল আকাশ আর সঙ্গ দিলোনা ।।
কত আঁকি বুঁকি জলতরঙ্গ  
স্মৃতির আঙিনায় ।
মনে পড়লে দুমড়ে মুচড়ে  
পরান নিয়ে যায় ।।


চোখের জ্যোতি কম হয়েছে,
অল্প আলোয় আবছা দেখি ,
সব কিছু এলোমেলো।
সিটি সেন্টার এ নয়ন যুগল
কেমন যেন ভিরমি খেলো ।
আঠারো বছরের ইলিয়ানা যেন ফিরে এলো ।।


হুবুহু মুখ,চোখ, নাক চলন বলন,
একই রকম গড়ন ।
নিমিষে কোথায় হারিয়ে গেল
যখন পথচারীর পর্দা হলো অপসারণ  ।।
মনের ভুল ভেবে ফিরে এলাম বাড়ি।
অবাক হলাম ,যখন দেখি উঠোনে
সবুজ মেরুন এক গাড়ি ।।


প্রনাম করে বলল,
আমি ইলিয়ানর মেয়ে,জুলিয়ানা ।
বাংলা বলে গড়গড়িয়ে,
বললো কতো কথা ,
মায়ের কাছে শুনেছি
তোমার কত কথা ,
সঙ্গে অনেক ব্যাথ্যা ।
বছর দশেক আগে মা
গেছে পরলোকে,
এই বছর পাঁচেক আগে
বাবা গেছে আতঙ্কবাদীর বন্দুকে ।।


এখন আমি একা ,
থাকি ঔরঙ্গবাদে।
কাজ করি দোভাষী ,
অনুবাদ সাহিত্যে ।।
ব্যোমকেশ বক্সীর বইয়ের
পাতায় পেলাম তোমার ঠিকানা ।
মায়ের কথা মনে  পড়লো
চলে এলাম দেরি করলাম না ।।


তোর মধ্যে খুঁজে পাই
ইলিয়ানা আর  আমি।
এখনো একজন দূরে আছে সে যে ময়ী ।।
দিন কতক পরে ফিরে এসে
বললো ময়ীর ঘর দর ।
বিশাল বড় হাবভাব তার,
গাড়ী বাড়ি ,শিল্পপতি বর ।।


তাই বোধ্য় ভুলে গেছে
খোঁজ নেয় না ,
তার  পাই না তার ।
হাজার চেষ্টায় ভুলতে পারিনা,
ত্রয়ী র স্কুল জীবন আর ।।


দিনে দিনে মিলিয়ে
গেল যৌবনের স্মৃতি,হাসি ,
জুলিয়ানার সাথে বেঁচে রইলাম
হয়ে স্বর্ণলতা মাসি ।।