ঝড়ের রাতে বসুদেব শ্রীকৃষ্ণকে মাথায় তুলে,
কংসের কারাগার থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন গোকুলে।
রাজা ধৃতরাষ্ট্র পুত্রস্নেহে এতই অন্ধ ছিলেন,
দ্রৌপদীর অপমান-পাণ্ডবদের বনবাস মেনে নিলেন।
বাদশা বাবর শাহজাদা হুমায়ুনকে এতই ভালোবাসতেন,
জীবন দিয়ে পুত্রের প্রাণ ফিরিয়ে আনেন।
সুদূর আফগানিস্তান থেকে আগত কাবুলিওয়ালা রহমত,
মেয়ের হাতের ছাপ নিয়ে পেরোতো পথ।
মায়ের মহিমার নীচে বাবা চিরকালই ঢাকা,
তুমি রামসুন্দর রূপে মিটিয়েছো পণের টাকা।
বাবা-মানে একটা আস্ত বিনামূল্যের দোকান,
যা সারাজীবন দেয় সন্তানের চাহিদার যোগান।
মা জন্ম দিলেও তুমি দেখিয়েছো আয়না,
তুমি আজীবন পূরণ করেছো আমার বায়না।
তুমি আমার মাথার উপরে কংক্রিটের ছাদ,
মায়ের কোলের পাশাপাশি ছিলো তোমার কাঁধ।
মায়ের কথা মাতৃভাষা বাবা কথা বলেনা,
অথচ বাবা ছাড়া সংসারের খরচ চলেনা।
মায়ের কন্ঠে শুনতাম আমি ঘুমপাড়ানি গান,
তুমি শিখিয়েছিলে আমায় সাঁতার আর স্নান।
যতই ঘামে ভিজে থাকতো তোমার পিঠ,
আমার জন্য মুছতে সাইকেলের সামনের সিট।
পুরানো শার্ট-প্যান্ট পরা ভাবতাম তোমার স্বভাব,
আসলে তুমি আমাকে বুঝতেই দাওনি অভাব।
তোমার কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে করা উপার্জন,
উজাড় করে দিয়েছো আমার স্কুলের বেতন।
গৃহশিক্ষকের বাড়ি যেতে পুড়িয়ে স্কুটারের পেট্রোল,
তুমি চেয়েছিলে পরীক্ষায় আমার ভালো ফলাফল।
অথচ নোটের জায়গায় পরে থাকতো নোট,
টিভি দেখতে ঝগড়া করতাম নিয়ে রিমোট।
হয়তো একটু বেশীই করে ফেলেছি বাড়াবাড়ি,
পত্রিকা নিয়ে তোমার সঙ্গে করেছি কাড়াকাড়ি।
তোমাকে ঠকানোটা আজও আমার একটা স্টাইল,
পুরানোটা তোমায় দিয়ে কিনেছি নতুন মোবাইল।
সামনাসামনি বলতে পারিনা ক্ষমা করে দিও,
তাই লিখছি এভাবেই আমাকে আগলে রাখিও।