চারিদিকে জীবনের ছন্দ।
ব্যস্তলোকের পদচারণের ছন্দ,
অসহায় ভিক্ষুকের মিনতির ছন্দ;
নির্মমের অট্টহাসির ছন্দ-
আর নিষ্প্রাণের নিস্তব্ধতার ছন্দ।


নারীর টানে পুরুষের প্রেম বুলির ছন্দ,
ভালবাসার সুউচ্চ চুড়োয় এসে থমকে যাওয়ার ছন্দ,
অগভীর দূরত্ব টেনে হৃদয় ভাঙার ছন্দ,
কালে কালে প্রাণ শিখা নিভে যাওয়ার নির্মম ছন্দ।


গ্রীষ্মের বনে কালবৈশাখীর উত্তাল হাওয়ার ছন্দ,
গগনলোক ছেড়ে বর্ষাদের ভূপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার ছন্দ,
বর্ষাদের জমাটে জমাটে বন্যাস্রোতের ছন্দ,
আশ্বিনে কাশ;মেঘের শিশু যারে বলি,
হাওয়ার আলিঙ্গনে তার জমিনে ঢেউ খেলানোর ছন্দ।
হেমন্তের পিঠে চেপে কুয়াশার ঝাঁক বাসা বাঁধে নগরে,গ্রামে,শহরে,মফস্বলে,
ধীর পায়ে শীতের আগমনের ছন্দ।
এ জগতে বড়ই মধুময় বসন্তের ছন্দ,
কোকিলের নিয়ম করে গান গাইবার ছন্দ,
ডালে ডালে নতুন কুঁড়ি আসবার ছন্দ,পৃথিবীর কোনো এক কোণে চেরিব্লোসমের হেলে-দুলে খেলার মনোমুগ্ধকর ছন্দ।


মায়ের কোলে শিশুর অগাধ প্রশান্তির ছন্দ,
মায়ের সম্মুখে পৃথিবীর সকল ফরিয়াদ ব্যক্ত করার ছন্দ,
পছন্দ-অপছন্দের সীমানাকে আগলে নিয়ে জড়িয়ের থাকা মায়ের স্নেহের ছন্দ,
মায়ের ডাকে দিনের শুরু থেকে তারই আজ্ঞায় নিদ্রায় প্রবেশের ছন্দ।


বনের অতলে প্রাণের রক্ষায় প্রাণনাশের ছন্দ,
(তবে এ ছন্দ আজকাল মানুষের রক্তকণিকায় মিশে গেছে অধিক হিংস্রতার সাথে,)
সিংহের লোভাতুর দৃষ্টিতে সুবিশাল জিরাফও গায় মৃত্যুর ছন্দ।


গভীর সমুদ্রটাও যেন শিখেছে বনের স্লোগান,
হয়তো না;বন শিখেছে সমুদ্রের সান্নিধ্যে,
প্রাণ রক্ষার্থের তরে প্রাণনাশের ছন্দ,
খুব নির্মম সত্য;নির্মম নিয়ম ধরণীর মাখলুকাতের মধ্যে।


শহর নগরে ইঞ্জিন মেশিনের কানফাটানো আওয়াজের প্রতিযোগিতামূলক ছন্দ,


শহরেরা নিষ্প্রাণ,হৃদয়হীন;
শহর মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচার মাধ্যম বটে,
তবে শহর মানুষকে বাঁচার মতো বাঁচতে শেখায় না,
চারিদিকে যেন শুধু অর্থ লুটে নেয়ার ছন্দ।


মানুষ জীবনকে ভুলে গেছে,
ভুলে গেছে সেই পুরোনো মানুষিক স্বভাবসমূহ,
বাঁচতে গিয়ে তারা জীবনের পথে বাঁচার মতো বাঁচতেই ভুলে গেছে।
আপন করে নিয়েছে শুধু স্বার্থের মাঞ্জাবিহীন ঘুড়ি।


তবুও দেখি সহসা মাঝেমধ্যে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর নির্ভেজাল ভালবাসার ছন্দ,
অসীম বিশ্বাস,আশ্বাসপূর্ণ বন্ধুত্বের অতি নগন্য  ছন্দ,
তবুও নির্মম সত্য বলতে হয়,আজকাল বড্ড অস্থায়ী এই বন্ধুত্বের ছন্দ।


বড্ড আনন্দদায়ক রেললাইনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রেলের ঝিকঝিক ছন্দ,
দৈত্যাকার যান্ত্রিক সর্প বলা চলে তারে,ঝিকঝিক ঝিকঝিক ঝিকঝিক  আওয়াজে চলে তার চলাচলের ছন্দ।
পেটে তার হাজারো প্রতিক্ষারত লোকের নিশ্বাসের ছন্দ।
বাড়ির পথে কিংবা বাড়ি থেকে দূরের পথে গমনের ছন্দ,
সবার ইচ্ছে-পূরণে অবিরাম ছুটে চলে হাওয়ার বেগ চিড়ে দৈত্যাকার যান্ত্রিক সর্প ঝিকঝিক ঝিকঝিক আওয়াজ তুলে।


ছন্দে ছন্দে মুখরিত এই মহাকাল,
সকাল হলে চারিদিকে সূর্যের আলো ছড়াবার ছন্দ,
প্রাতপুষ্পদের ফোটার ছন্দ;
আর গোধূলি বুক চিড়ে আঁধারদলের পৃথিবী দখলের ছন্দ।
ছন্দের সমুদ্র এ ধরণী,ছন্দে ছন্দে লিপিবদ্ধ বহুনিয়ম,শুরু থেকে শেষ সবটা জুড়ে যেন রাজ করছে ছন্দ।