থানার লকআপের পাশের বেঞ্চটাতে
নির্বিকার বসেছিল সে,
হাড়জিরজিরে শরীরের ওপর
ফুটপাতের জামাটা এখানে-সেখানে ছিঁড়ে গেছে;
ঘাড়ের কাছে বহু আবছা রক্তের ছোপ
আর ধুলোমাখা প্যান্টে অত্যাচারের চিহ্ন
নিয়েও সে বসেছিল নির্বিকার,
থানার লকআপের পাশের বেঞ্চটাতে।


গাঁয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারে রোজগার কম,
তাই পেটের টানে পঙ্গপালের দলে
পড়াশোনা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিল
কোনো শনিবারের হাটে সেজেছিল সঙ;
তারপর ডোরাকাটা কাপড়ের পোশাকে বহুরূপী
সেজে এর-ওর বাড়িতে পাড়ি দিত চুপিচুপি,
পেছনে লাগতো ছেলের দল কখনো বা কুকুর
সেসবে মাথা না ঘামিয়ে চলতো লাফালাফি,
তর্জন-গর্জনই সার হত-
মেলার ভিড়ে কৌতূহলী পালাগানের আসরে
উলবোনা মোটা চাদরের ভেতর ঘাম ঝরিয়ে
কুড়িয়ে নিত প্রশংসা আর খুচরো পয়সা,
পেটের টানে হাড়ভাঙা ভাড়াটে সঙ,
গাঁয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারে রোজগার কম।


সদয় প্রতিবেশীর ডাকে শহরে আসা,
সিরিয়ালে ডোরাকাটা পোশাক পরে একবার
খুব সামান্য-তবে ঐ একবারই,
তবুও শিল্পের ভরে হাজারো আশা
নিয়েই রাজকীয় বিয়েবাড়ির সামনে দামী
পোশাক পরে হাত-পা নাড়া;
চামড়ার রোমশ ভেক আর বড়ো মুখোশের
নীচে এক আজব শিহরণের হাতছানি,
দিনে-রাতে, পায়ে-হাতে তারা চাইতো সাড়া;
নিজেকে সবার থেকে আলাদা
উপলব্ধি কাঁপিয়ে দিয়ে যেত কশেরুকা,
ছুটে যেত সে বারবার চিড়িয়াখানায়-
ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতো
ডোরাকাটা খাঁচার সামনে পলকহীন,
আপনমনে কথা বলে যেত তাদের সাথে,
সার্কাসে ছুঁয়েও দেখেছিল একবার হাতে,
তারপরই শেষমেষ … ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছিল
বিধ্বংসী বানের জলের মত
সে খাঁচার ভেতর ঢুকে পড়েছিল,
সেই প্রথমবার কোনোমতে শেষরক্ষা হয়েছিল
বটে তবে সে হাল ছাড়েনি,
আবার … আবার … আবার … চারবার
এবং শেষবার তাকে “পাগল” ঘোষণা করা হল;
ধরে আনা হয়েছিল থানায়,
চালান দেওয়া হবে মানসিক হাসপাতালে
জেনেও সে নির্বিকার বসেছিল,
থোকা থোকা বোকা চোখের ধারণার বাইরে
একমাত্র সে-ই জানতো তার আসল পরিচয়:


বাঘ!