সস্তা কারুকাজ করা সোনালী খামটা
টেবিলের ওপর পড়েছিল নীরবে,
ভাঙা ভাঙা ইংরাজীতে লেখা চিঠিটা
নিয়ে নাড়াচাড়া করেছিলাম বহুবার-
গ্রাপ্পার শেষ পেগটা শেষ করে
ভেবেছিলাম, “যাবোনা …”।


সকালে ছিপ নিয়ে বেরোবার সময়
খামের সোনালী রঙ হাতছানি দিল,
আবার পড়লাম … ।
কশেরুকায় আলস্যের বাসা
দুনিয়া থেকে সরে থাকতে চায়,
আর কতদিন, কতবছর!
আলমারী থেকে পুরোনো কোটটা
বার করলাম,
সঙ্গে দাড়ি কাটার জিনিষপত্র;
দেওয়ালে ঠেসানো ছিপটা কিছু
বলতে চাইছে,
আমি নাকি আবারো পরাধীন।
ক্রীটের গোলকধাঁধার মধ্যে থেকে
উড়বার সিদ্ধান্ত নিলাম,
হয়তো চিঠির কোথাও উষ্ণতা ছিল!


দাড়ি কেটে
পুরোনো কোটটা পরে নোংরা আয়নার
সামনে দাঁড়াতেই মনে পড়ে গেল,
ঘোলাটে নীল অ্যাড্রিয়াটিকের ওপর
ঢেউ ভাঙছে, এগিয়ে আসার সময়
সশব্দে ফেনায়িত হচ্ছে আর
তারপর তারা পিছিয়ে যাচ্ছে,
বালির ওপর রেখে যাচ্ছে ছোটো ছোটো
ঝিনুক আর গুচ্ছ গুচ্ছ সামুদ্রিক উদ্ভিদ।


এপ্রিলের ভেনিস
যেন অলঙ্কারহীন সুন্দরী বিবসনা,
নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে
প্রেমিকের স্থির চোখে … ।
রোদমাখা গ্রীষ্ম যেমন ঐশ্বর্যময়
জেনোয়াকে মানায়, সোনালী আর
গাঢ় লাল শরৎ যেমন রোমকে,
তেমনি ভেনিস কোমল বসন্তের।
হৃদয়ের গূঢ় কামনারা যেন ভাষা পায়
গ্র্যান্ড ক্যানেল বেয়ে ভাসতে থাকে
তন্ময় প্রশান্তির নিদ্রালু গন্ডোলা;
নির্বাক ঢেউয়ের মৃদু রঙ,
সবুজ-ধূসর ছলছলানি আর
নিঃশব্দ মসৃণ গতিতে যৌবন-রূপকথা … !
পেরিয়ে গেলাম রিভা ডেই স্কিয়াভোনি,
পেরিয়ে গেলাম দজের প্রাসাদ, পিয়াজেত্তা;
দু’পাশের মর্মর প্রাসাদ যেন
ভেসে চলেছে ধীরে ধীরে … ।
বহুযুগ পর আজ আবার যেন মনে হল,
“হ্যাঁ, আমি বেঁচে রয়েছি!”



***  প্রথমে ভেবেছিলাম “ল্যাসিয়া মি ভিভেরে” (১১৭ লাইন) পুরো কবিতাটাই একবারে প্রকাশ করবো, কিন্তু পাঠকের মনোসংযোগের কথা মাথায় রেখে কবিতাটিকে দুই পর্বে প্রকাশ করবো ঠিক করেছি।। তাই আজ ৫০ লাইন দিলাম, কাল ৬৭ লাইন দোবো।। “ল্যাসিয়া মি ভিভেরে” একটি ইটালিয়ান কথা যার বাংলা অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় “আমাকে বাঁচতে দাও”।। ***