সাধের ক্যাপ্রির জীবনও বিরক্তিকর
লাগতে শুরু করেছিল-
সকাল থেকে মাছ ধরা,
বিকেলে সেগুলোকে নানাভাবে রান্না করে
গ্রাপ্পার সাথে মুখরোচক … ।
সন্ধ্যেতে বালির চরে শুয়ে
স্ট্রেগার বোতল হাতে নিয়ে
জ্যোৎস্নাপ্লাবিত ফ্যারাগ্লিওনি দেখা,
রাতে কাঠের কেবিনে ফিরে
ভবঘুরে জীবনের কবিতা লেখা আর
সপ্তাহান্তে সেগুলো রোমে বিক্রি করা,
প্রতিবেশীর ছেলেটাকে দিয়ে … ।
কোনো সম্পর্ক নাই,
ভালোবাসা-আশা-আকাঙ্খা নাই,
কেবল আমি আর স্বাধীনতা … ।
সেবারের গ্রীষ্মে সমুদ্রতটে
আলাপ হয়েছিল এক যুবতীর সাথে
বাড়ি তুরিন, পেশায় অপেরা গায়িকা;
অনেকদিন থেকেছিল ক্যাপরিতে,
আমার জীবনযাত্রা দেখে অবাক হয়েছিল।
আমার থেকে ঢের ছোটো হয়েও
বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল,
আমি হেসেছিলাম … ।


এখন যেসব অপেরা চলছে তাদের
শিল্পীরা সব মধ্যম মানের,
প্রাণপনে চেঁচিয়ে জীবিকা চালায়।
ভেরদি’র লেখা “লা ট্রাভিয়াটা”,
ভায়োলেত্তার ভূমিকায় সেই যুবতী অ্যানা;
কম দামী-রুচিহীন পোশাক,
চুলের ওপর একটা লাল জাল,
সাটিনের ম্লান নীল রঙের ফ্রক
রক্তহীন বুকটাকে চেপে ধরেছে
আর সোয়েডের দস্তানা কনুই অবধি … ।
বেরগামো রাখালের মেয়ে,
অভিনয় জানেনা-জানেনা স্টেজে
কিভাবে দাঁড়াতে হয়-অসমান গলা!
হাতে গোনা দর্শকের মাঝে
অস্বস্তি বোধ করেছিলাম,
কিন্তু ধীরে ধীরে তার সরলতা
আর আন্তরিকতা দেখলাম
যা শত শত ভালো অভিনেত্রীর
মধ্যেও দেখা যায়না!
অ্যালফ্রেদোর প্রবেশ ঘটলো,
ভায়োলেত্তার প্রেমিক অ্যালফ্রেদো,
ভায়োলেত্তার কন্ঠে উল্লাসধ্বনি,
উল্লাসধ্বনিতে ফেটে পড়লো ঝড়;
ফ্যানাটিসমো!
অমনোযোগী দর্শকেরা তখন
বিমোহিত হয়ে পলকহীন-
মন্ত্রমুগ্ধের মত … ।


ছোটো ছোটো লাল বাতি জ্বালানো
গন্ডোলায় চেপে যখন
রাতের ভেনিসে ভেসে ফিরছিলাম,
চাঁদের আলোয় ধুয়ে যাওয়া গম্বুজ
আর নীলচে সীসের ওপর জ্যোৎস্নার ছোপ,
ক্ষণিকের জন্য মনে হল
গন্ডোলার কোনো একটা ইস্পাতের প্রান্ত
ঝলমল করে উঠলো,
ঠিক যখন অ্যানা কাতর
আকুতির সময় একবার তাকিয়েছিল
আমার চোখে,
একবিন্দু জল ঝলমল করে উঠেছিল!
চঞ্চল রূপোলী স্রোতের মাঝে
তখনো গমগম করছে
শক্তিহীন মরিয়া প্রেমের শেষ আকুতি,
“ল্যাসিয়া মি ভিভেরে … মোরির সি জিওভানে!”



***  “ল্যাসিয়া মি ভিভেরে…মোরির সি জিওভানে!”, একটি ইটালিয়ান কথা যার বাংলা অনুবাদ করলে অর্থ দাঁড়ায় “আমাকে বাঁচতে দাও…এত অল্প বয়সে কি মরে!”।। ***