ঘুপসি গলিগুলোর গোলকধাঁধা বারবার এদিক-ওদিক
করে পার হয়ে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়া পুরোনো
মসজিদের রঙচটা দেওয়ালে; এবার? “এবার আপনি
বাঁ-পাশের গলি দিয়ে পেছনে চলে যান, ড্রেনের
ওপারে একটা চায়ের দোকান দেখতে পাবেন, তার
সোজাসুজি একতলা ঘরেই ওকে পেয়ে যাবেন, আর হ্যাঁ,
বেশীক্ষণ থাকবেন না এ জায়গায়, ভালো নয়।“
চুনকাম করা পাকা একতলা ঘরের দেওয়াল থেকে
ঝুলছে মান্ধাতার আমলের একটা ফ্যান যা হাওয়ার
থেকে আর্তনাদ করে বেশী দেওয়ালে টাঙানো কৃষ্ণের
ক্যালেন্ডারের কাছে মুক্তির জন্য বোধহয় … আর কিছু
সেলাই মেশিনের বিরক্ত আওয়াজ ছাড়াও ভেসে আসে
শাহরুখ খানের নতুন সিনেমার কিছু রঙীন আলোচনা।
স্কুলছুট আয়েশা খাতুন, লক্ষ্মী মন্ডল আর অন্যান্যদের সাথে
এমব্রয়ডারির কাজ করে বিধবা সীমা চুনারি প্রায় সাতবছর
হতে চললো; হ্যাঁ ওকেই আমার অকারণ দরকার ছিল ...
স্বামী মারা যাবার চারমাস পর থেকে এই ঘরেই সকাল
থেকে সন্ধ্যা কাটে, তারপর বাড়ী ফিরে ছেলে-মেয়েকে
পড়তে বসিয়ে আবার বেরিয়ে আসা ... তবে এবার আর
দমবন্ধ ঘরে নয়, একেবারে মহানগরীর চওড়া রাস্তায়
হাজারো আলোর মেলায় ছাপোষা জীবনের
কত স্বপ্ন-কত চাওয়া-পাওয়া পিষে যায় অসংখ্য
যানবাহনের চাকার তলায়; মোবাইলে নতুন আলাপ
হওয়া একজনের সাথে তিন-চারদিন হোটেলের ঘরে,
সস্তা খাট গেছে আগের জায়গা থেকে কিছুটা সরে।
সেলাইয়ের কাজ কামাই দেওয়া চলেনা একদম,
অথচ যন্ত্রণা ... ছেলেমেয়ের জিজ্ঞাসু চোখ ... হাত
হাতড়ে বেড়ায় দু’মাস আগে শেষ হওয়া মলম।
রাত শেষ হয়ে কখন যে আবার ভোর নামে নীরবে
শরীর টের পায়না, মসজিদের পিছনে একতলা ঘরে
সীমা চুনারিকে দেখতে পাওয়া যায় প্রতিদিনের মত ...
আমি ফিরে আসি ভারী হৃদয় আর অপারগ হাত নিয়ে;
এরকম লাখ লাখ সীমা চুনারি ছড়িয়ে আছে
এই দেশের হাজার হাজার বস্তিতে। ক’টা কবিতা লিখবো?
ক’জনকে জায়গা দোবো পাতলা পাতার সংকীর্ণ গন্ডিতে?
ক’টা দামী পেন-খাতা ফালতু শেষ করবো?
ওদের আধজনের জীবনও বদলাবে না ...
একটা আধুলিও কামানো যাবেনা ...
যদিনা ... যদিনা ...!