বাঙ্গালী আড্ডা আর পশ্চিমা  আড্ডায় বেশ  তফাৎ আছে ।  শুধু তাইই বলব কেন , য়ুরোপ আমেরিকার মানুষগুলো আমাদের মতো আড্ডাবাজ নয় , অন্ততঃ এখনকার সময়ে । তবে সাহিত্য চর্চা বিষয়ে যে আড্ডা -তা চলে , চলছে চিরকাল জুড়ে । কেবলই আকার প্রকার  পরিবরতন হচ্ছে বা হয় কালে কালে , মূল কিন্তু থেকেই যায় ।


আড্ডায় কি কেবলি পরপর্চা হয় ? আড্ডার ইংরেজী প্রতিশব্দ বোধকরি ‘ gossip’   । গসিপ এর বাংলা অর্থ পরচর্চা ,  রটনা , খোশগল্প । খোশগল্প মন্দ না । কিন্তু এর পাশাপাশি পরচর্চা বা রটনা আসলে তা ভয়ঙ্কর ।


আর এই রটনা বা পরচর্চাকে মাথায় রেখে  যেসব বিদেশী কবি কবিতা লিখেছেন আর দু একটার নমুনা তুলে ধরছি ।


একজন নাম না জানা কবি লিখেছেন-
‘’নাম আমার গসিপ
চিনিনা জানিনা ন্যায়পরায়ণতা
খুন না করেই করি মানুষ খুন
ভেঙ্গে দেই হৃদয় আর জীবন
ধুরন্ধর আর বিদ্বেষপূর্ণ আমি বড়ই
সময় বাড়ে আমার ক্ষমতা  বাড়ে !’’
এ কিন্তু অতি ভয়ংকর মেসেজ !


কেউ আবার লিখেছেন-
‘’এটা নয় খেলা খেলা
ঝড় , আগুন আর কান্না সারা বেলা
যুদ্ধ থেমে গেলে , কেবলি হেরে যাওয়া !’’
এটিও আগের মতই প্রায় একই বার্তা বহনকারী ।


Criticism  তাহলে কি , এর কিইবা সম্পর্ক gossip  এর   সাথে  ? সমালোচনা বা খুঁতসন্ধান বা criticism  শিল্প সাহিত্যের জন্য অপরিহায্য , কিন্তু criticism এক অর্থে  gossip  এর  আত্নীয় । সখা । Objection to Literally Works and Defense  এ বিষয়টি কিন্তু যুগে যুগে শিল্প সাহিত্যের চর্চা যারা করেন তাঁদের সৃষ্টির ক্ষেত্রে এসেছে । এর ফল সব সময় যে ভালো হয়েছে তা নয় ।  অনেক হতভাগ্য কবি  বা লেখক তাঁদের জীবদ্দশায়  স্বীকৃতি  পান নি  হাজারো defense  করেও ! তাই বলা যায়  gossip এর মতো criticism ও গুপ্ত ঘাতক !


বাঙ্গালী আড্ডা প্রিয় । যুবক বা তরুনদের আড্ডায় যা আলোচনা বা সমালোচনা হবে তা  নিশ্চয়ই পৌঢ় বা বৃদ্ধদের আড্ডায় নয় । আসলে বৃদ্ধরা কি আড্ডার সময় পান , জানি না । আঁতেল বা রাজনৈ্তিক নেতা হলে অনেক গুরুত্ব পান তাঁরা কথা বলবার বা শোনাবার  ।  সেই একই বয়সী আম জনতা পান না ।  রঙ হীন সময় কাটে তাদের  শেষ বেলা । কবি –সাহিত্যিক আর শিল্প চেতনার মানুষগুলোর গুরুত্ব  কিন্তু কোনদিন একেবারেই কমে  যায় না । বরং বাড়েই ।


যাহোক এতো গেল সব  সুবেশী কথাবার্তা । যদিও কেবলই হাঊজ ওয়াইফ  নই , তবুও স্ত্রি বা মহিলাদের আড্ডায় প্রবেশের বা আগুনে আরও ঘি  ঢালার সুযোগ আমার ঢের হয়েছে । কেননা , আমি তো মানুষ । কেমন হয় সে আড্ডা ?


স্বামীকে নিয়ে শুরু হলে সব মহিলাই  বিশেষতঃ মধ্য বয়সী , তাঁরা অকাতরে বলা শুরু করেন - আমার কর্তার মতো ভাল মানুষটি আর ত্রিভুবনে নাই ।  তিনি পরহেজগার , সদা সত্য কথা বলেন , ক্লাব পার্টি করেন না । ছেলেমেয়েদের দেখেন । ঠিক সময় মতো অফিস ফেরেন । আর ঘুষ ছুয়েও দেখেন না ইত্যাদি ইত্যাদি !


অনেকেই এসব বলে টলে মাথা উঁচিয়ে চলে যান । কিন্তু পরে যারা থেকে যান , তাদের এ ঘোর মিথ্যে সইবে কেন ? ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’- অনেকটা এই রকম । বাবা ঘুষ ই যদি না খাবি , তাহলে তোমার  এ অঢেল সম্পদের  উৎসটা কি ?  নিরভেজাল আড্ডায় তখন criticism  এসে হাঁটু গেঁড়ে বসে তো বসেই , আর যেতে চায় না !


তাও ভালো , আমাদের  এই  ওয়েবের কবি আড্ডা এখন পর্যন্ত অকৃত্রিম ।  প্রাণময় । দু একজন  সাধু বেশী কবিতা চোর এর অনুপ্রবেশ ঘটেছিল বটে ,
মাননীয় এডমিন তা কঠোর হস্তে দমন করেছেন। এর ভিতর আমার নিজেরও ‘ সম্পর্ক ‘ নামে একটা কবিতা সেই কবি  চোর কোথা থেকে ভালবেসে নিয়ে যেন নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছিলেন । আর তার উৎস খুঁজে পেতে আমাকেও বেশ সময় দিতে হয়েছিল । যা হোক শেষ রক্ষে হয়েছে ।


আবার কোন এক বন্ধু আমাকে নারী না ভেবে  ছদ্ম নামধারী পুরুষ  ভেবেছিলেন । আর সে সময়ে নারী মহাত্ন বর্ণনা করে , ‘জনমে জনমে নারী’ এমন একটা কবিতা লিখে পোস্টও করেছিলাম । তাতে  রাগ হয় নি বটে , কিন্তু  কিছুটা দুঃখ পেয়েছিলাম । সেদিন ফেইস বুকে দেখলাম , এক ‘ফেবু ‘ গবেষণায় দেখা গেছে , মেয়েরা আর যাই করুক ( যদিও আর যাই করুক বাক্য টাতেও আমার ঘোর আপত্তি ! ) ফেক আইডি /ছবি দেয় না । তারমানে অন্য পক্ষ তা করলেও করতে পারেন !


আরেকটু বলে শেষ টানি । মনে আছে , একবার এক কবিতা লেখার ওয়েবে একজন কবির নাম দুবার ভুল করে লিখেছিলাম । রেফ অভ্রতে না আসার কারণে । আর তার জন্য আমাকে কম নাকানি চুবানি খেতে হয় নি । সে আসর ছেড়ে দিয়েছি  একেবারে । কিন্তু  তাতে তাঁদের কোন ক্ষতি হয়নি জানি । কিন্তু আমার হয়েছে । অনেক সুন্দর কবিতা, আলোচনা আর যুক্তি নির্ভর সমালোচনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি । অনেক পুরানো বন্ধু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি । তবে  একটা লাভ হয়েছে ।  বিপদে পড়ে কে আসল মানুষ তাও চিনতে পেরেছি । এ ব্যাপারে কিন্তু একজন নারীই তাঁর সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে সত্য উদ্ঘাটন করে আমাকে সে যাত্রায় রক্ষা করেছিলেন।  আমি তাঁর কাছে আজীবন ঋণী ।


তাই আশা করব , আমাদের এ আড্ডা যেন  নির্ভেজাল আর প্রাণময় হয় । একে অপরকে বৃথা আক্রমণ করে আমরা যেন আমাদের সুহৃদ আর বন্ধুদের প্রাণ অকালে সংহার না করি !