তখন পাবনা সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ে যে মেয়েই পড়তো , সে নিজেকে ‘সুচিত্রা সেন ‘ ভাবতেই ভালবাসতো ।


তবে ক্লাস নাইন টেনের সুন্দরী মেয়েদের দাপটে নবীন শিক্ষকগণ মাঝে মধ্যেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠতেন ! এই সব কতিপয় মেয়ের দল , স্যারদের বিভিন্ন নামে অভিষিক্ত কোরতে ভালবাসতো ।  অবশ্যই তা বড় আপার কান বাঁচিয়ে । তাঁর কানে গেলে , সারাদিন বাহিরের রোদে কান ধরে  দাঁড়িয়ে থাকা !


ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তাঁরা মাঝে মধ্যেই জানালার পাশে ( যেখান থেকে সেই  টারগেটেট  স্যারকে দেখা যায় ) আলাপচারিতায় মেতে উঠতো আর ঘন ঘন ক্লাস রুমের দিকে নজর ফেলত ! তবে  বিষয়টাকে সারা ক্লাস বেশ উপভোগ করতো ।  এই যেমন ; স্যারের ঘন ঘন বাহিরে তাকানো  (তিনি বা তাঁরাও বোধকরি ব্যাপারটা এনজয় করতেন) , রুমোল দিয়ে অযথা মুখ মোছা , চুল পরিপাটি করা  , চশমা ঠিক করা ! আর মাঠে বসা মেয়েদের সুরভিত হাসি !


সেসব মেয়েরা  ঠিক কি চাইতো তা বোঝা যেত না । দুর্বোধ  ! তবে বড় আপা বেশী ভাগ সময়ে  ইয়াং টিচারদের  স্কুলে রাখতেন না , বদলী করে দিতেন । আর তখনই সুন্দরী মেয়েদের যাতনা শুরু হতো । আড়ালে আবদালে বদলী হয়ে যাওয়া স্যারকে স্কুলে ফিরে পেতে তদবিরও শুরু করতো তারা ।


আমাদের মত একটু পড়ুয়া ছাত্রীরা হ্যাঁ তেও ছিলেম না , না তেও না ! তবে আনন্দ যে পেতাম না তা  হলফ করে বলতে পারব না । তবে ইম্পরট্যান্ট ক্লাসগুলোতে এ ধরণের  ঝামেলা  ভাল লাগতো না । পড়া বুঝতে বেশ অসুবিধা হতো !


একবার প্রাইমারী অধিদপ্তরে ‘ ডেপুটেশান’ এ উপ-পরিচালক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে ঢাকা থেকে ‘নাটোর’ এক ওয়াকশপ এ গেছি । দেখলাম বেশ বয়সী একজন সুন্দর চেহারার মানুষকে ‘ বিশেষ অতিথি’ করা হয়েছে । মনে হলো , কোথায় যেন দেখেছি তাঁকে । ঘোষিকা নাম ঘোষণা করতেই  তৎক্ষণাৎ বুঝে গেলাম , ‘আমাদের  স্কুলের তখনকার দিনের উত্তম কুমার স্যার  ‘ । স্যার , স্যার বলে বিনীত ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ ধরে তাঁর সাথে কথা বললাম । বেশ একটু চিনতেও পারলেন তিনি আমাকে  !  বড় ভাল লাগলো ।  


সুন্দরী মেয়েগুলোর সাথে  আর স্যারের দেখা হয়নি  কিন্তু আমার সাথে হয়েছে ,তাও কত যুগ পর !  এ কারণ তিনি ! হয়তো মনের অজান্তে তিনিই আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে বড় হতে হয় !