কে আমি কিবা পরিচয়
         মহঃ সানারুল মোমিন


[“বাংলা ভাষা ও বাঙালী জাতির উৎপত্তি” এর ইতিহাস পড়তে পড়তে মনে গভীর দাগ পড়ে। দাগ আরও গভীর হয় “একুশে ফেব্রয়ারী”এর ইতিহাস পড়ে। লিখিত রুপ পায় শ্রদ্ধেয় কবি “সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা "আমার পরিচয়" থেকে-উনাকে শত কোটি সালাম ও এডমিন সহ আসরের সকল কবিকে, পাঠকে শুভেচ্ছা ও হার্দিক অভিনন্দন। পরম করুণাময় সহায় হোন এই কামনা।]


কে আমি কিবা পরিচয়?
শত হাজার বছর ধরে,রয়েছি অন্তরে।
স্থান? প্রতি জনের কোমল হৃদয়।
রয়েছি গ্রাম পল্লীর পথে পথে।
রয়ে আছি আদি বাংলার চর্যাপদে।
আছি সৃষ্টির বিকশিত নির্মল জ্যোৎস্নায়।
বয়ে আছি গঙ্গা,পদ্মা,মেঘনায় আর মোহনায়।
মিশে আছি বরেন্দ্র, রাঢ়ীর মাটির কণায়।
মিশে আছি সত্য কলমের কালির ঝর্ণায়।
আছি, রবো যুগ থেকে যুগান্তরে।
কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, গল্পের অন্তরে।
ছিলাম আদি মানবের প্রাচীন পাথরের গুহায়।
রয়ে আছি আজও,মহা মনীষী কবীরের দোহায়।
বেজে উঠি বিষাদ অথবা মিষ্টি বাঁশির সুরে।
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে না হয় অজানা শব্দের নূপুরে।


স্থান? প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রাণ,
রাইবেশে আর  ঝুমুর গাণ।
রয়ে আছি ভাদ্রের ভাদু নাচে।
যেখানে গঙ্গা,পদ্মা,মেঘনা, হাজার নদ নালা- ইতিহাস রচে।
ছিলাম,আজও আছি রাঙা মাটির কর্ণ সুবর্ণে-
রয়ে আছি কাব্য, সাহিত্য, ইতিহাস, গল্পের প্রতিটি অমর বর্ণে।
আমি চলি আর চলি,মধুর ভাষায় কথা বলি।
জন্ম ? যেথায় রয়েছে কোমল মাটি- এঁটেল,দোয়াস আর পলি।
রয়েছে হাজার পাখির গান আর চেনা অচেনা নানান কলতান।


রয়ে আছি ভাটিয়ালী,বাউল ফকিরের গানে।
আর চিরকাল থাকবোই মিষ্টি অঘ্রাণের সুমধুর ঘ্রাণে।
থাকবোই বাংলার চির পরিচিত শত শত উৎপাদিত ধানে।


স্থান? কাব্য মনসা মঙ্গল, কবি কঙ্কণের চন্ডী মঙ্গল।
পদ্ম পুরাণ আর ফুল্লারা কালকেতুর শিকারের মহান জঙ্গল।
মিশে আছি বিল পাটুনীর জলে,যেখানে সপ্ত মাধুকরী চলে।
ঘুমায়? উর্বর অনু-উর্বর বরেন্দ্র, রাঢ়ীর মাটির কোমল কোলে।


মিশে আছি মুখে,বুকে হৃদয়ের লাবণ্যে।
আমি অন্ধ বধির বোবা সবার জন্যে।
রয়ে আছি সৃষ্টির মহা হৃদয় অরণ্যে।


কে আমি কিবা পরিচয়?
আমি ভাষা,বাংলা ভাষা।
শত মানবের মনের প্রাণের উচ্চ আশা।
........
গর্বের সাথে চলি, বাংলায় কথা বলি।
বাংলার শত ইতিহাস মেনে চলি।
জন্ম এই মহান সোনার বাংলায়।
আমি বাঙালী এটাই আমার শেষ পরিচয়।
.........