এই সেই তুরাগ বংশী শাখা নদীর মোহনা
যা বহমান আজ অবধি ।
এই সেই লোহার পুল যা স্থাপিত ১৯০৮ ।
পশ্চিমে হিজলা আমিন বাজার , পুর্বে কোটবাড়ি মিরপুর ।
শতাব্দীর বহু সাক্ষী জীর্ণ শীর্ণ নীরবে আছে দাড়িয়ে ।
১৯৭১ এর বেদনাপুর্ণ সাক্ষী এই লোহার পুল ।
সাথে আলি মিয়া সহ অনেকেই ।
এই পাথরের পুল তখন ছিল না ।
এতো গাড়ি,জাহাজ,মানুষের কোলাহল তখন ছিল না ।
ছিল না এত কনক্রিট,অট্টালিকা,দালান কোঠা,
গ্রাম ছিল গ্রামের মত ছায়া ঘেরা সবুজ গাছে ভরা ।
নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ,পরিস্কার,সুপেয় ।
হঠাত বদলে যায় ১৯৭১ এর ২৫ শে মে মার্চের পর ।
মিলিটারি বাহিনী প্রায়ই হানা দিত হিজলা গ্রামে
ওদের বুলেটে ঝাঝরা হয় বুক লাট মিয়ার
বাদ পড়েনি পাগলা রহমান ও সিরু মিয়া ।
ধররে নেয়া যুদ্ধাহত আমসু গোয়ালের বীভৎস
ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায় মিরপুর বাগবাড়ি ।
স্বাধীনচেতা নূর মোহাম্মদ কে জামাল্পুর থেকে
বাড়ি ফিরতে দেয়নি রাজাকারেরা ।
বিহারিদের সাথে পুলের এপার ওপার
বন্দুক যুদ্ধ হয় কয়েকবার ।
এক সকালে বিহারিরা আগুন দেয় হিজলা গ্রামে ।
গ্রামের একাংশ পুড়ে,লুটপাট করে সম্পদ ।
তারপর থেকে গ্রাম প্রায় জনশুন্য ।
বর্ষায় গ্রামের চারদিকে পানি থৈ থৈ ।
মাত্র কিছু মানুষ গ্রাম পাহারা দিত ।
তাদের একজন আলী মিয়া
প্রায় রাতেই ঘুম হতো না তার
মিলিটারীর গাড়ির শব্দে পিলে চমকে যেত
প্রাণ করতো ধরফর ।
নিভিয়ে কুপি থাকতো চোখ কান পেতে
গাড়ির হেডলাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা যেত
হাত মুখ চোখ বাধা মানুষ ।
এক এক করে গাড়ি থেকে পুলের মধ্যখানে নামিয়ে
বেয়নেটে খুচিয়ে ফেলতো নদীতে
হাত মূখ চোখ বাধা মানুষেরা
বেয়নেটের খোচা খোয়ার মুর্হুতেই মৃত্যু যন্ত্রনায়
চিৎকারের গোঙ্গানীর আওয়াজ  ‘মা’---
আবার কোন কোন দিন মিলিটারীর ট্রাক ভর্তি
লাশ ফেলতো নদীতে ।
পুল থেকে পানিতে লাশ পড়ার শব্দ শুনে
আলী মিয়া গুনে এক,দুই পাচ,সাত বারো ।
কোন দিন কম কোন দিন অনেক বেশী ।
নুরু মিস্ত্রী ভোরে কাজে যেত ঢাকা শহরের ভেতর
লোহার পুল পার হতে স্যান্ডেল প্রায় ডুবে যেত রক্তে
পুল পরিস্কার করা হতো
জমাট বাধা রক্তের স্তুপ পানি ঝাড়ু দিয়ে ।
লাশ স্রোতে ভেসে যেত তুরাগ বুড়িগঙ্গা হয়ে দূর বহু দূর ।
নদীর আনাচে কানাচে খালে ভেসে থাকা অনেক লাশ
মাছ,শেয়াল,কুকুর,শকুনে খেত ।
মিলিটারীর ভয়ে সব লাশ দেয়া যেত না কবর ।
কয়েক বছর নদীর পানি,মাছ খাওয়া
বন্ধ করেছিলো আলী মিয়ার মত অনেকেই ।
কি বীভৎস সেই মর্ম বেদনার দিনগুলি
মাঝে মাঝে এখনো খোয়াবের ভেতর
বৃদ্ধ আলী মিয়া দেখতে পায়,
পুল থেকে নদীতে লাশ পড়ার দৃশ্য,
শুনতে পায় বেয়নেটে খোচা খাওয়া মানুষ
মুহুর্তে মৃত্যুর যন্ত্রনায় চিৎকারের গোঙ্গানীর
আওয়াজ  ‘মা’---------