ভাট ফুলের গন্ধ মেশানো বিকেল
মোজাহারুল ইসলাম চপল

যাও, ইচ্ছে ঘুড়ি, মেঘের ওপারে
যেখানে বৃষ্টি নয়, স্বপ্ন বোনে চোখের অতল জলে।
প্রতিটি ফোঁটা যেন এক একটি অভিমান—
ভেসে চলে শূন্যতার দুই কূলে,
নীরব ঝড়েরা প্রচ্ছদ খুলে রাখে,
ছেঁড়া নকশীকাঁথার মতোই
আর সময়ে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ওঠে দৃশ্যমান।

ভাঙাচোরা কামনা, অর্ধেক ভালোবাসা—
সবই তো রয়ে যায় অসুখের ভূমিতে,
অধরা কোনো স্পর্শের অতৃপ্তি নিয়ে।

তবু কতটা অস্থিরতা চায় এই হৃদয়?
রাতের পৃষ্ঠাজুড়ে যখন গাঁঢ় অন্ধকার হাসে—
এক প্রকার বুনো উল্লাসে
প্রত্যাশার ঠোঁটে তখন-ই খেলে যায় অস্থির রঙ,
তার মধ্যে কি সুখ পাও?

বাড়ির উঠোন চেনা, ধুলো জমে থাকা সিঁড়ি,
চোখ তুলে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা সন্ধ্যে—
জলরঙ, ক্যাকটাস, আর ভাটফুলের গন্ধ মেশানো এক বিকেল।

মহুয়ার সংসার যেমন চায় স্থিরতা,
তেমনি জলপাই শিহরণে জেগে থাকে অসুখের ছায়া।
এটাই তো জীবন, যেনো এক প্রান্তিক অস্পষ্টতা,
যেখানে প্রত্যাশা মানেই প্রাপ্তি নয়,
আর প্রাপ্তি মানেই পরিপূর্ণতা নয়।

তবুও যদি অপূর্ণতা রয়ে যায়—
থাকে সেইটুকু ঘরপোড়া রোদ,আর একফোঁটা নীল ব্যথা—
তাহলেই না স্থিরতা বোঝা যায়,
একটি জীবনের সবেচেয়ে নিঃশব্দ কবিতার মাঝে।

স্পর্শের ইশারা
মোজাহারুল ইসলাম চপল

রাত গড়িয়ে গেলে ঘরে ফেরে না সেইসব দীর্ঘশ্বাস,
যেভাবে জানালার কাচে আজো রয়ে গেছে তোমার নিঃশ্বাসের দাগ।
বালিশের পাশে চুপ করে থাকা সেই পুরোনো স্মৃতি-
ছেঁড়া মেঘের মতন, যার পথ হারিয়েছে বহু আগে।

তুমি কি এখনো চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাও
আলোর নিচে ছায়া হয়ে গলে যাওয়া সেইসব প্রতিশ্রুতি?
যেদিন বৃষ্টির রাতে ছাতা না নিয়েই হেঁটে ছিলে পাশে—
ভেজা চুলে লেগে থাকা অভিমান, আর থেমে থাকা শব্দে!

আমি এখনো রাত হলে খুঁজে ফিরি সেই কথার ছায়া—
যেখানে কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না, শুধু স্পর্শের ইশারা।
ঘরের কোণে পড়ে থাকা এক জোড়া চশমা,
নীরবতার চেয়ে স্পষ্ট বলে দেয়, কে ছিল এখানে।

আজ আমরা হয়তো পথ ভেঙে হয়ে গেছি আলাদা,
তবুও কিছু রাত, কিছু মেঘ, কিছু গন্ধ
আবার টেনে আনে সেই অন্ধকার ছাউনিতে।
যেখানে জোছনায় ভেজা একটুখানি স্পর্শ,
যা আর কোনোদিন সত্যি হবে না,
জানিনা তবুও কেনো স্বপ্নে আজো ভাসে—
কাঁথার নিচে রেখে যাওয়া অতীতের ঘ্রাণ হয়ে!


পুড়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবি
মোজাহারুল ইসলাম চপল

ভেতরে জ্বলছে এক নিঃশব্দ শিখা,
না সে আলো দেয়, না উষ্ণতা—
শুধু পোড়ায় ধীরে, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।

কেউ হাসিমুখে বহন করে জ্বালা,
কেউ কান্না ঢাকে শব্দের ঝলকে,
কেউ প্রেমে পুড়ে, কেউ ঘৃণায়—
তবুও জ্বলছে, প্রতিদিন, নিভৃত অন্তরে।

দেয়ালে আঁকা স্বপ্ন, রাতে হয় ছাই,
মূল্যবোধ ভাঙে রঙিন বিজ্ঞাপনে।
কারও প্রতিবাদে, কারও নিঃশব্দ বিদ্রোহে—
পুড়ে যায় নিজের  প্রতিচ্ছবি।

এই জ্বলনই যেন আজকের পরিচয়—
ভেতরের আগুনে
ধীরে ধীরে গলে যায়
একটি জাতির আত্মা।