(এটি একটি বট গাছের আত্ব জীবনীমূলক লেখা)


আর বয়স আমার ?
বয়স যে কতো তাতো ঠিক মনে নেই !
তবে এক মহান স্বাধীন অস্তিত্বের পরাজয়ের পর
কিছু সাদা চামড়ার লোক এসেছিলো দেশে;
তখন একদিন মধ্য দুপুরে কিছু ক্লান্ত পথিক
স্বগোত্রের ছায়ায় বসে যে গল্প করেছিলো
তা আজো মনে আছে ঠিকঃ


      ১ম ব্যক্তি  - নবাব খুব ভালো মানুষ থাকছল্-রে...
      ২য় ব্যক্তি  - উইতো আর হামাকেরে বংশ লয়, হামাকেরে              
                      বংশ ঐ শয়তান মীরজাফর।..........শয়তানের  
                      চ্যাল বুজবার চ্যালে
                    মীরজাফরের মতো শয়তান হওয়া লাগলোনি....


তখন আমি খুব ছোট্ট ছিলাম বলে
দু’পাশের কৃপণ দুটি স্বগোত্রের আকাশ ছোঁয়া দাম্ভিকতায়
সূর্যের আলো দেখিনি অনেক দিন;
তাই সেদিনের কথা তেমনটি আর মনে নেই।
শুধু এটুকু মনে আছে, পশ্চিমের দীঘির পাশে দুটি বাড়ী
আর নুনজিলির ওপাড়ে গোটাকয়েক বাড়ী ছাড়া ছিলোনা
কিছুই।


একদিন কিছু কাঠুরে এসে
দুপাশের স্বগোত্রীয়দের কেটে নিয়ে গেলে
স্বাধীন চিত্তে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার
আর পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগ করার আনন্দে
                                    মেতে উঠেছিলাম।
এরপর কিছু দিন বেশ সুখেই ছিলাম,
বেশ সুখে !


কিন্তু একদিন গভীর রাতে,
পশ্চিমের আকাশ ধ্বংসজজ্ঞে মেতে উঠলে
বৈশাখির প্রমত্ততার শোঁ-শোঁ শব্দে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি....
জ্ঞান ফিরে দেখি, সমস্ত শরীরে পরাজয়ের ক্ষত চিহ্ন
                                              লেগে আছে;
আমার আরো দুটি আমি এখানে সেখানে বিভৎস
                              পড়ে আছি ইতঃস্বত।
তখনি বুঝতে পারি, স্বগোত্রের সগৌরব দাম্ভিকতায়
হয়ত দেখতে পাইনি সুর্যের আলো, হয়ত পাইনি প্রকৃতির নির্মল বাতাস,
তবে বেঁচে ছিলাম সূর্যের অসহনীয় উত্তাপ থেকে
বেঁচে ছিলাম প্রকৃতির অবুঝ তান্ডবতায় ।
তখনি বুঝেছি এ পৃথিবীতে দুর্বলেরা এমনি ভাবে নির্যাতিত
হয় প্রতিদিন।


কিন্তু আজ !
আসুকনা পূর্ব দিগন্ত গভীর অন্ধকার অমানিশায় ঢেকে
পশ্চিম থেকে আসুক গোধূলীর রক্ত চক্ষু জলশ্বাসে
দক্ষিণ থেকে আসুক প্রলয়ংকরী ঝড় সমুদ্র গর্জনে
উত্তর নিয়ে আসুক শীতল সূর্য হিমাঙ্কের নিচে
তবুও ভয় কিসে ?


অনন্ত অন্ধকার বৈরীতায় হাবুডুবু খেতে খেতে
অবশেষে সুতীক্ষ্ন শেকড় সন্ধান পেয়েছে মাটির,
তাইতো মনের আনন্দে চারপাশে ছড়িয়েছে
                      অজস্র সাবলম্বি প্রশাখা ।



(‘নুনজিলি’ একটি নদীর নাম)


চলবে...