দিনটি ছিল ১৫ জুলাই ২০১৬ তারিখ। সর্ব সম্মতিতেই বনভোজনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল, ঐতিহাসিক পুন্ড্র নগরীর রাজধানী নামে খ্যাত মহাস্থান গড়ে।  ই-মেইল ও মোবাইলে সব কবি বন্ধুদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, ঐদিন সকাল ৭টার মধ্যেই যেন সবাই যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এসে উপস্থিত হয়। সকাল ৭টায় ভাড়া করা শ্যামলী পরিবহনের নন-এসি বাসটি ছাড়ার কথা। আমি সকাল ৬টার মধ্যেই এসে হাজির। অবশ্য ইতোমধ্যেই বাসটি চলে এসেছে, ড্রাইভার নাস্তা করছে ফুটপাতের একটি হোটেলে। বাসের আশে পাশে কয়েকজন লোককে ঘুরাফেরা করতে দেখলাম। তবে বুঝতে বাকি রইল না যে, এ লোকগুলোই আসরের আমন্ত্রিত কবি বৈকি। যেহেতু কোন কবির সাথেই আমার আগে থেকে কোন প্রকার পূর্ব পরিচিতি নেই, তাতে কি? আসরের অনেক কবিদের ছবি দেখে দেখে তাদের কয়েকজনের চেহারা মনের মধ্যে ঠিকই গেঁথে গিয়েছিল। তাই খুঁজতে লাগলাম, দেখি পরিচিত কাউকে পাওয়া যায় কিনা...। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেনো ডাকলো ‘আরে লোকনাথী ভাই না’? আমি পেছন ফিরে তাকালাম, চেনা চেনা লাগছে-কোথায় যেনো দেখেছি লোকটাকে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অবশ্য চিনে ফেললাম, কবি অতিরঞ্জন (ইথার)। আসরের ছবির সাথে চেহারার মিল থাকলেও ক্লিন সেভ করায় চিনতে কিছুটা খটকা লাগছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও বেশ কয়েকজনের দেখা মিলল। কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী, শাহীন আহমেদ রেজা, খলিলুর রহমান, রক্তিম, অতনু দত্ত, গৌরাঙ্গ দা, সুমিত্র দত্ত রায়, অনুপম মন্ডল, স্বপন গায়েন, অজিত কুমার কর, রনি-ই-রানি, গোপেশ দে, দীপঙ্কর দা’র সাথে পরিচিত হলাম। দেখতে দেখতেই ৭টা প্রায় বাজা বাজা, গাড়িতে উঠে বসলাম একেবারে পেছন সিটের একসিট আগে। ৫২ সিটের গাড়ি। ৭টা বেজে গেলেও অনেক কবি এখনো এসে পৌঁছাননি দেখে গাড়ি ছাড়তে কিছুটা দেরী হবে তা বোঝাই যাচ্ছিল। দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই শ্রদ্ধেয় কবি প্রনব মজুমদা (প্রনবদা) এসে হাজির। তিনি এসেই কয়েক মিনিট দেরি হওয়ায় কড়জোড়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন, রাস্তায় কি যেন একটা সমস্যা হওয়ার কারণেই তার নাকি এই দেরি। আসরের ছবিতে প্রনব দা’কে যেমনটা দেখেছি তিনি ঠিক তেমনই, তবে মাথায় ও গোঁফে আসার আগেই হয়ত কালি (কলপ) করেছেন বলে মনে হলো। এক্কেবারে ইয়াং লাগছিল। সে যাই হোক, প্রনব দার সাথে সাথেই  নূরুল ইসলাম, আদৃত কবি ও আছির মাহমুদ’কে আসতে দেখলাম। প্রনবদা বাসের সিটে বসা কবিদের গণনা করতে শুরু করলেন, উপস্থিত মোট ২০ জন। তার মানে এখনো ৩২ জন আসার বাকি। ততক্ষণে সোয়া সাতটা বেজে গেছে। আমরা সবাই ধৈর্য ধরে বসে-দাঁড়িয়ে একে অন্যের সাথে কথাবার্তা বা পরিচিত হতে লাগলাম। কিন্তু হঠাৎই একজন কবির ধৈর্য্যের বাঁধ মনে হয় ভেঙে গেল। কিছুটা উচ্চস্বরেই প্রনবদা’কে বললেন, ‘না না প্রনব দা, আর দেরি করা সম্ভব নয়, যারা এখনো এসে পৌঁছাইনি তাদের ছাড়াই গাড়ি ছেড়ে দিন’। উত্তেজিত হওয়া এই কবিই হলেন আসরের অমায়িক কবি পরিতোষ ভৌমিক। তার সাথে সাথে শ্রী তরুণ, হরষিত দেবনাথ, প্রবীর কুমার পাল’কেও সুর মেলাতে দেখলাম। আমরা সবাই অমায়িক কবির সাথে ঠাট্টা-তামাশায় মেতে উঠলাম। অবশ্য এরই ফাঁকে নাজমুন নাহার, শ্রাবণী সিংহ, সোমালী, তানিয়া সরকার, রুনা লায়লা ও রাহনূমা সবাই একসাথে এসে হাজির। কবি কবীর হুমায়ূন, সহিদুল ইসলাম, বিকাশ দাসও আসলেন এক এক করে। কবীর হুমায়ূন বনভোজনের ব্যানার বানিয়ে এনেছেন, গাড়ির সামনে তা লাগাতে গেলেন, স্বপ্নীল নয়ন, অনুপ মজুমদার, মুন্না স্বন্দিপী ও গোলাম রহমান। অনির্বান শান্তারা ও অনিরুদ্ধ বুলবুল প্রনব দা’র কানে কানে কি যেনো বললেন। তাঁকে খুব চিন্তিত ও ব্যস্ত দেখাচ্ছিল। যারা যারা এখনো এসে পৌছাননি তাদের সাথেই যে মোবাইলে বারবার কথা বলছিলেন তা বোঝায় যাচ্ছে। জানা গেলো, মিমিদি’র বাসা থেকেই নাকি রান্না করা প্যাকেট খাবারগুলো আসবে। সেগুলো আনার জন্য ভোরেই নাকি কয়েকজন (শ.ম শহীদ, হাফিজুর রহমান চৌঃ, সাবলীল মনির ও যোগেশ বিশ্বাস) মিমিদির বাসায় চলে গিয়েছে। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই দল বেঁধে আসলেন বিপ্লব সাউ, অমিতাভ ‌শূর, উজ্জ্বল সরদার, মোজাহারুল ইসলাম চপল, ছড়াওয়ালা, অর্নিবান শান্তারা, বিভূতি দাস, দেবসাস ও সৌমেন দা। অবশ্য দেরিতে আসা কবিদের উপর কবি কবীর হুমায়ূন ও প্রবীর কুমার পাল ভীষণ চটলেন। কিছুটা বকাও খেতে হলো তাদের। দেরিতে আসা কবিদের কাচু-মাচু মুখ আমরা সবাই খুব উপভোগ করছিলাম।


সকাল আটটা তখন। যেহেতু পাঁচজন ছাড়া সবাই চলে এসেছে (তারা মিমিদির বাসায় আছে) । তাই গাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। গাড়ি ছাড়লো। গাড়ি যাবে টঙ্গি-গাজীপুর চৌরাস্তা-চন্দ্রা মোড় হয়ে যমুনা সেতুর দিকে। পথে মিমিদি ও আরও চারজন প্যাকেট খাবারগুলো নিয়ে উঠবে কোনাবাড়ি বাজার থেকে।


গাড়ি চলছে....। রাস্তা প্রায় ফাঁকা। একেতো শুক্রবার তার উপর সকালে এ রাস্তা অনেকটা ফাঁকা থাকে। বিশ্বরোড পাড় হওয়ার পরেই দেখলাম কবীর হুমায়ূন সিট থেকে (পেছনের দিকে বসেছিলেন) উঠে মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলতে বলতে গাড়ির সামনে প্রনবদার কাছে গিয়ে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলেন কথা বলার জন্য। আমার পাশের সিটে বসেছিল আমার দীর্ঘদিনের পুরনো বন্ধু কবি চপল, আমি তার সাথে ফেলে আসা পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করছিলাম। তবে গল্পের মাঝেও বাসের পেছন থেকেই আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁদের দু’জনকেই খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে....।


এরপর প্রায় ১৫ মিনিট চলার পর বাসটি এয়ারপোর্ট বাস স্টপিজ-এ গিয়ে থামলো। প্রনব দা, কবীর হুমায়ূনের সাথে আরও তিন চারজন কবি নিচে নামলেন। অচেনা একজন লোককে (খুবই সুদর্শন ও স্মার্ট) বাসের সামনে এগিয়ে আসতে দেখলাম। বাস থেকে নেমে যাওয়া কবিগণ লোকটির সাথে কথা বলছিলেন। কবিগণ কি যেনো বুঝাতে চেষ্টা করছেন সেই আগন্তুক লোকটিকে। আমিও নামলাম....। একটু পরেও জানলাম, ইনিই আমাদের মহামান্য এডমিন পল্লব দা। তিনি বারবার বলছিলেন, ‘আপনারা যেভাবে খুশি, যেখানে খুশি বনভোজনে যেতেই পারেন, তবে ব্যানারে ‘কবিতা ডট কমের সৌখিন কবিগনের বাৎসরিক বনভোজন’-এ কথাটি লিখলেন কেন? ব্যানার খুলুন........।


-------------------------------------
এটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক স্বপ্নীল একটি বনভোজন। এভাবে ভাবতে, স্বপ্ন দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। আসুন না...বাস্তবে না হোক, কল্পনাতেই না হয় এমন একটি বনভোজনে অংশ নিই সবাই।