আমাদের হরিলাল মাস্টোরের ছোট মেয়ে বড্ড পাজি ।
একদিন শরৎ এর বিকেলে হঠাৎ কবিতা লেখার মন করলো ,
কিন্তু... কোথায় যে বসে লিখি ...?
নিরিবিলি একটা জায়গার সন্ধানে ,
সেদিন আর কবিতা লেখা হল না ।
আমি বাবা ওতো বড় লেখক না ...।


আরেকদিন আবারো কবিতা লেখার মন করলো ,
কিন্তু... কি নিয়ে যে লিখি ...?
এক লাইন কবিতার সন্ধানে ,
সেদিন আর কবিতা লেখা হল না ।
আবেগ ছাড়া কি কবিতা লেখা যায় ?
আমি বাবা আবেগহীন ,
ভাবলাম -
ওসব কবিতা লেখা আমাকে দিয়ে হবে না ।


নাহ - হাল ছাড়িনি ,
কবিতা আমি লিখবোই ।
সেদিন দুপুরে ডিঙ্গিতে বসে কবিতা লেখব -
হঠাৎ হরিলাল মাস্টোরের ছোট্ট পাজি মেয়েটা এসে,
খাতা টা দিলো ভিজিয়ে ।
ধুর ছাই ... আজকেও কবিতা লেখা হল না ।
আরে বাবা এভাবে কি কবিতা লেখা যায় নাকি ?


রাগে তো আমার শরীর খটখটে ...
নাহ - এর একটা বিহিত করতেই হবে ,
ভেজা খাতাটা নিয়ে গেলুম মাস্টোরের বাড়ি ,
নালিশ করবো বলে ,
মাস্টোর আমাকে দেখেই বললে - এই যাহ্‌ ভালোই হল  
তুই এসেছিস ,
যা মুবির কাকুর দোকান থেকে দুই টাকার আধি ছটাক কেরোসিন তেল নিয়ে আয় ।
আমি নিজেই যেতুম - তোকে দেখে আর যেতে ইচ্ছে করছে না ।


হায়রে কপাল ।


ও মুবির দাদু ,
দুই টাকার আধি ছটাক কেরোসিন তেল দাও তো ।
হ্যাঁ দিচ্চি দাঁড়া ।
আরে দাঁড়িয়েই তো আছি গো ।
তাড়াতাড়ি দাও আমার আবার সময় নেই ।


তেল নিয়ে কি বাড়ি যাবো ... সেই যে বৃষ্টি শুরু হল -
রাত হয়ে গেলো অন্ধকার ।
যাহ্‌ বাবা যাবো কি ভাবে ?  
ও দাদু একটা ছাতার বেবস্থা করে দাও না গো ।


যাক অবশেষে বুঝি বৃষ্টিটা কমলো ।
ও মাস্টোর কাকু ......  
কিরে তুই বুঝি এলি হাহ ? তা কিছু খাবি না এভাবেই চলে যাবি  ,
আরে কাকু সেই দুপুরে এসেছি , বাড়ি যেতে হবে ,  
তা কেন এলি সেটা তো বলে যাবি নাকি ?
না কাকু  তেমন কিছুই না , আচ্ছা আমি চল্লুম ।


জানালার ফাক দিয়ে
হরিলাল মাস্টরের মেয়ে কইলে ...ঐ ছেলে আমার জন্য একটা কবিতা লেইখ তো  ।
রাগ কি আর কমে ?
এতো টুকু এক ফুচকি মেয়ে , আমাকে বলে কি না
তার জন্য কবিতা লেখতে ...।


পরের দিন সকালে ,
হরিলাল মাস্টরের মেয়ে ডেকে বললে ... কি গো কবি - আমার কবিতা কি হল ?
আমি বল্লেম - কবিতা কি ভাপা পীঠে  ?
ও হেসে কইলে - মশকরাটা খারাপ নহে , পেয়ারা আছে খাবে ?
আমি বল্লেম - তোমার পেয়ারা তুমি খাও , পথ মেপে বাড়ি যাও ।
ও কইলে - তুমি এতো বেরসিক কেন গো ?
আমি বল্লেম - আমি এমনি , জ্বালাও কেনে আমাকে ?
ও কইলে - তুমি এতো জ্বলও কেন ?
বুঝনা ভালোবাসি ।
আমি একটু রেগে তাকালুম ,
ও চলে গেলো ।


কত দিন দেখিনা তারে , কি হল মেয়েটার ?
মন করছে দেখে আসি ,
মাঝ পথে দেখা হল ওর সই এর সনে ,
ও কবি ... কোথায় যাচ্ছো গো ?
না ,মানে ওদিকে যাবো ভাবছি ,
সই কইলে - আর যেয়ে লাভ নাই গো , ওর যে বিয়ে হয়ে গেছে ।


হঠাৎ করে বসে পড়লুম , কিছু কষ্ট রা এলো ,
আমার আবারো একবার কবিতা লেখার মন করলো ,
বসে বসে ভাবছি ,
ভাবছি তো ভাবছি ,
ধীরে ধীরে বেদনা গুলো কবিতা হয়ে বের হচ্ছে ।
বের হচ্ছে তো লাইন মিলে না ,
লাইন মিলে তো শব্দ মিলে না ।
কি এক অসহ্য যন্ত্রণা ,
আমার কেন কবিতা লেখা ?
কি হবে কবিতা লেখে ?


বিকেল টা যায় যায় ,
অমন সময় পেছন থেকে
ও কইলে - কি গো কবি , এবার কি কবিতা লেখা হল ?
আমি আবাক ,
পেছনে তাকালাম , তাকিয়েই রইলাম ।
ও আস্তো করে কইলে - ভালোবাসো ?
আমি আবেগময় কণ্ঠে কহিনু ভালোবাসি ।
হঠাৎ ও বলতে লাগলো না গো না ,
এভাবে তো হবে না ।
আমার যে একটা সর্ত আছে ।
আমি বল্লেম - কি সর্ত বলনা ?
ও কইলে - আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে হবে । তাহলেই ভালোবাসি ।
শুনিয়া তার মুখের বানী ,
আনমনে ধ্বনিত হল , আমার অনাকাঙ্ক্ষিত কবিতাখানি ।


তুমি এসো মোর ঘরে , হে  নারী ,
বসো মোর পাশে , একটু হেসে হেসে , কহো কিছু কথা
ভুলিয়া অতিত প্রণয়ের ব্যথা ।  
এসো মোর ঘরে হে নারী ,
কে জানে কাল দেখা হয় বা না হয় ,
এ মায়াময় বিশ্ব মাতা ছাড়ি , কাল আমি চলে যেতেও পাড়ি ।


কত কথা গাঁথা মনে , বলিব বলিব তোমার কানে ,
কত নিশি তোমার সনে , দেখিনা  চাঁদের পায়চারী ।
tumi এসো মোর ঘরে - হে নারী ,


তুমি রহো মোর সাথে , আজি  এই নিশিভরা রাতে ,
হাতে হাত রবে দুজনার দুজনাতে ।
তুমি রহিও  মোর সাথে ।
ও হাসিয়া হাসিয়া, কাছেতে আসিয়া কহিলো মোর পাশেতে  বসিয়া -
আমি আছি তোমার সনে,
সবক্ষনে, সবখানে।
ভালোবাসি, ভালোবাসি


ধন্যবাদ সবাইকে  কষ্ট করে পড়ার জন্য ।