”ওই আর ঘুমাইছনা , ওঠ আযান দিছে ।” ”তুষু পাখি , ওঠ ।“
উফ্, আর পারলাম না ; যেই সুন্দর স্বপ্নটা হুলুদ শাড়ি পড়ে আসছিল …… না আর দেখা হইল না ।
যুগ যুগ ধরে এই রোমিও–জুলিয়েটের আত্মীয়-স্বজনেরা আমার মত প্রত্যাশীদের স্বপ্ন এভাবেই মাঝপথে ভেঙে দেয় । কি আর করা , তাই আর কোন সুযোগ থাকায় আমি হঠাৎ এক কাব্যহত্যাকারী রূপে আত্মপ্রকাশ করলাম । আর নাম নিলাম “বিষ পিঁপড়ে” , যেখানে বিষ নামের দ্রাব্যতা এক অলীক অম্লত্ব ছাড়া আর কিছুই নয় ।
কোন এক স্মরণীয় ১৫ই বৈশাখে আমার আম্মাকে জিজ্ঞাসা বললাম , “আম্মা, আমি কেমনে হইছি?”
বুঝতেই পারছেন আমারই মা , তাই উত্তর দিলেন এভাবে , “তুই হওয়ার ঠিক কিছুক্ষণ পর ফযরের আযান দিছে ।” এটা শুনে যতটা ভাল লাগল তেমনি আব্বার ডায়েরীতে দেখেছিলাম সেখানে লেখা , “আজ ২৮শে এপ্রিল , বুধবার ,১৯৯৩ ইং ; বাংলা ১৪০০ সাল ১৫ই বৈশাখ । আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় আমাদের ঘরে আরেকটি ছেলে হল ।”
কিন্তু দুর্ভাগ্য , আব্বার ডায়েরী আর বাস্তব জীবন এক থাকল না । কারনটা সাধারন , আমি বাঙালি ।
নথিভুক্ত নাম ও জন্মসাল থাকাটা যেমন চাকুরীগত অধিকার , তেমনি পারিবারিকভাবেও এই একই জিনিষ আরো এবকবার থাকা চিরন্তন সত্য ।
নথিভুক্ত নাম পেলাম “তাইবুল ইসলাম” এবং জন্মসাল “২৮শে এপ্রিল , ১৯৯৫” । আর পারিবারিকভাবে নাম “তুষার”।
জন্মটা আমার নানু বাড়িতে , কিশোরগজ্ঞ জেলার বাজিতপুর থানার মহামীরেরবাগ গ্রামে । তবে ছোট থেকেই ঢাকার মানিকনগর এলাকায় মানুষ । তাই কখনও নানুবাড়ির শানবাঁধানো পুকুর কিংবা দাদুবাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মরা নদী আড়িয়ালখাঁ এর কথা আমার মনে পরে না । কিন্তু যখন বাংলাদেশের মানচিত্রে নরসিংদী জেলার নাম দেখি তখন বলতে ইচ্ছে হয় ওইখানের বেলাবো থানার বীরবাঘবের গ্রামে আমার শেকড় ।
শিক্ষা জীবনের কথা বাদ দিলাম , এই একটা বিষয় যা নিয়ে কেউ আমাকে প্রশ্ন করলে মনে চায় ধইরা….।
তবু কিছু কথা মনে হল বলা দরকার । উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যায়নের পর ভার কমাতে চাইলাম , তাই এখন বাণিজ্য নিয়ে পড়ছি । কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস , কলা শাখায় যে কিভাবে এমন “বিষ পিঁপড়ে” হয়ে উঠলাম নিজের অজান্তেই , তা হয়তো আমি নিজেই জানি না ।
এ জানাটা জেনেছিলেন আমার বাবা । যখন ছোট ছিলাম তখন তিনিই প্রথম খেয়াল করলেন তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট্টটা কথা মেলাতে পারে । সেই বছরের ১৫ই বৈশাখে তিনি আমাকে একটা কালো রঙের ডায়েরী উপহার দিলেন , আর আমি আমার জীবনের প্রথম কাব্যপ্রয়াস চালালাম ঠিক এভাবে –
”শিশরা পড়ে  
নোট , খাতা , বই
তারপর খেলা করে
থই , থই , থই ।” (১৩/৬/২০০০ইং)