এই ভাঙা সব ফাঁটল ধরা রাস্তায় –
আমি খুঁজে বেড়াই…….
খুঁজে বেড়াই আমারই বড় হওয়ার মানে ।
এই রাস্তাটা কাঁচা ছিল ।
পাঁশে ছিল বাঁক ধরানো ঝিল ।
ভাঙা সমজিদ কিংবা কখনও টিনের চালা দেয়া ।
কাঁচা বাশের সাঁকো ,
থরথর করে কাঁপে -
নিথর মানব মনে ,
কখন যে সাকোর বাঁশ পাকবে
সাঁকো নিজেই জানে ।
আশা , একদিন হবে কালভার্ট !
এই সাঁকোর তলে
নিম-কালা জলে
বস্তি মাছের বাস ।
এরা বস্তিও নয় ,
মানুষও নয় ,
থাকে নিম-কালা ময়দানে ,
সত্যিকারের জিওল মাছ !


হঠাৎ একদিন নগর বড় হল ,
মানিক এসে জুটলো কপাল খোঁজে ।
হায়রে , কপাল পোঁড়া ,
ঝিল হজম হল ,
ঐ কপালের ভোজে !


আবার কোন এক দুঃস্বপ্ন মাঝে
স্বপ্ন দেখায় নগর ।
ছুটে দ্রুত -
এক – একটা রোড রোলার
কিংবা সিটি কর্পোরেশনের
ময়লা বোঝাই গাড়ি ।
বিদ্যুৎ খাবে পেট ভরে ?
হাঁ করো !!
না হয় এ ”নামার রাস্তা”য়
খুন হবে তাড়াতাড়ি ।
খুনি তো তারাই -
যারা খুব ভুল করে স্বপ্ন দেখেছিল ।


স্বপ্নে তো আর বেঁচে থাকে না ,
মরে যায় হুট করে ।
যেমন করে স্বপ্ন দেখেছে
আমাদের ”ওলী ভাই” ।


এইখানে রাস্তার এপাশে – ওপাশে ,
মুগদা মাণ্ডা হয়ে ,
ঝিল তলে একাকার ।


আর মাঝখানে ওলী ভাই -
চায়ের কাপ হাতে ,
হাসিমুখে ;
তার গেঞ্জির ফুটো দিয়ে
বেড়িয়ে পড়ে হাসি ।
ঐ হাসিগুলো ভাঙা স্বপ্ন ।
স্বপ্ন ভেঙেছে রাস্তার ওপারে থাকা
”পলাশদের”ও –
একই জাতের চা বানাতো ওরা ।


কিন্তু স্বপ্ন হাতে থেকেও
ভেঙে যায় অনেকের ।
এই অনেকেরা কখনও কখনও -
আমাদের “কাবিলা মামা” ।
গান গায় দুই হাতে গলা ছেড়ে –
মাথা নেড়ে , মাথা নেড়ে ,
কখনও আবার বোঝা যায় কথাগুলো
”সাহাবী কি খবর ?”
”আমার মা নাই ………….“
মাঠ নামের সেইসব প্রান্তরে ,
শূণ্য নামের অলীক বস্তুর মধ্য দিয়ে ,
প্রতিধ্বনি হতে চায় –
”মামু”র কোরাসি-গজল ।


গজল না ছন্দ চলে এই –
পুকুরপাড়ের বাজারে ।
বাজার বলতে এই এলাকার কিছু নেই ।
কোনদিন থাকার প্রয়োজনও পড়েনি ।
তাই এইখানে রাস্তাই সব মানুষের পথ দেখায় ।
সকালে আর ভোরে –
এখান দিয়ে এলাকা ছাড়ে কাজের প্রয়োজনে -
স্কুলে , অফিসে , গার্মেন্টেসে –
নানান জনে নানান ধান্দায় ছোটে ।


কষ্ট সয়ে যায় এই মানিকনগর ,
প্রতিবার , প্রতিপদক্ষেপে ।
এই নগরায়নে আকৃষ্টদের মুখে ,
খাবার তুলে দিতে দিতে -
নিজের হৃদপিণ্ড , যকৃত , ফুসফুস
একে একে দুষিত করে ;
আর যত নালা ছিল ,
যত নাড়ী-নক্ষত্র ছিল ,
সব বন্ধ করে দিয়ে-
এই এলাকা দাড়িয়ে থাকে
ঠিক মতিঝিলের মত করে ।
সংগ্রামীরা অস্ত্র হাতে তুলে নেবে বলে ,
নিজের বুকে স্বযত্নে
বাঁচিয়ে তোলে কিছু ন্যাড়া ডাল-পালা ,
তাতে বাসা বাঁধে কাক ।
আর সাহস এবং সান্ত্বনা জোগায় –
প্রতিদিনকার মত করে ,
মসজিদ হতে ভেসে আশা ,
বহু মধুর আযানের ধ্বনি ।


রচনাকালঃ ১১ই মাঘ , ১৪২০ ।