একমুঠো পান্তা ভাতে এক চিমটি নুন,
আর হালকা করে সরষের তেলের সহিত বহু স্বাদের একটা কাঁচা লঙ্কা ;
কিংবা একটুকরো ঝাঁঝালো পেঁয়াজের গন্ধে ওরা তো বেশ খুশি !
কিন্তু যখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় তখন ওদের চোখেও দেখি আশঙ্কা!
অথচ ওরাই এই সভ্য সভ্যতার কান্ডারী, শুরু থেকে দধীচির বংশধর,
হাড় ভাঙা খাটুনি যেন ওদের কাছে তাই দেবতার পাওয়া শ্রেষ্ঠ বর ;
আর তোমরা, হ্যাঁ তোমরাই তথাকথিত এই সভ্য সমাজের শিক্ষিত মান্যবর,
নেতা, মন্ত্রী, মালিক, হুজুর কিংবা স্বার্থের তাগিদে স্বার্থপর
অন্ন, বস্ত্র, বাসস্হান  তো তোমাদের জন্মগত অধিকার,
আর ওদের বেলা হলেই  -- দু-আনার ভিখেরির দল ;
আমি রোজ রাতে জানলার ক্ষয়ে যাওয়া আর্শিতে,
কান পেতে শুনি অবসন্ন, ক্লান্ত, বিহ্বল মানুষের কোলাহল !
একমুঠো ফ্যান-ভাত ! -- তোমাদের চোখে বড় বিলাসিতা !
তাই শাসনের নামে শোষণের ছড়ি ঘোরাও সমাজের বুকে,
ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলমান জ্ঞানী-মূর্খ তোমাদের সহোদর ভাই,
অথচ ধর্মের দোহাই দিয়ে বিষ ঢালো বক-ধার্মিকের জ্বালামুখে !
যখন পেটের জ্বালায় একমুঠো পান্তা নাড়ি কামড়ে খাই,
একমুঠো ফ্যান ভাতের গন্ধে যখন মনে ব্যাকুল হতে চাই,
তখন তোমাদের সভ্য সমাজের জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ,
দারিদ্রের দরজা দিয়ে এসে জানালা দিয়ে পালায় !
তোমরা তো সভ্য শিক্ষিত মানুষ, কি করে বুঝবে ক্ষুধার জ্বালা
যদি পারো তবে একটিবার শুধু না খেয়ে থেকো সারাবেলা,
দেখো অনুভব করবে ঠিকই, বুঝে যাবে কাকে বলে পেটের জ্বালা!
একমুঠো পান্তা আর একটি চিমটি নুন মাখানো ভাতের থালা,
কত যে তৃপ্তি তাতে, তুমি কি করে বুঝবে হে সভ্য শিক্ষিত মানুষ!
তোমাদের তো আর নুন আনতে পান্তায় ফুরায় নি  !
আমি বুঝি, ওরা বোঝে, শুধু তোমরাই আজও বোঝনি !
তাই শত গরীবের রক্ত চুষেও তোমাদের প্রাণ জুড়ায় নি !