আমার শহর
~~অদিতি চক্রবর্তী
---
সেইতো আমার শহর
খুব মনোহর, বাহুল্যহীন আধফোঁটা যুঁই ফুল
মিষ্টি সুবাসে ছড়ানো ছেটানো সবুজ মাঠের স্কুল
দীঘির জলে পানকৌড়ি,চোরকাঁটাদের দল
পীচরাস্তার ফুটপাথে ওড়ে স্কুল ফেরতার আঁচল
সেইতো আমার শহর
পাতা ঝরঝর শীতের রাতে
শ্রীলতা আর বাসন্তীতে যাত্রাদলের তাঁবু
"খোঁড়া বাদশা" দেখতে যাবে দলবেধেঁছে হাবু।
পাড়ার মানু গোবর সারে টব সাজাতে বিজি
ফ্লাওয়ার শোতে ফলফুলেতে ফাস্ট হবে সে ইজি
সেইতো আমার শহর
সর জমিয়ে গাওয়া ঘিতে,কখনো আবার ক্ষীর
রেবা কাকির দুধপুলিতে সংক্রান্তির ভিড়
মালপোয়া আর পাটিসাপটা খেতে হলে সোজাসাপটা
একটু বেশী তারিফ পেলে পিঠেয় ভরবে ঘর
সেইতো আমার শহর।
জোর শোরগোল হলে তখন নতুন ছবি শোলে
পাড়ার দাদা,বৌদিরা তাই চলছে দলে দলে
ব্ল্যাকার ভাইও দশ এর টিকিট বিক্রি করতে সত্তরে
পুলিশ ফাঁকি দিতে লুকায় চাএর দোকান চত্তরে।
বইমেলাতে কমিকস বইএ ছোট্ট খুকির চোখ
খোকার দিদার রান্নার বই,ডিজাইন বই এর ঝোঁক
সেইতো আমার শহর
খবর এলো গতরাতে রাস্তা নম্বর চল্লিশে
গণেশের বউ পালিয়ে গেছে হাতধরেছে চোর বিশে
জোট বেঁধেছে মেয়ে,বউ,ঝির কানের থেকে কান
বিশের বউটা ভর পোয়াতি, কিভাবে গুজরান!
সেইতো আমার শহর
ফুটবল জ্বর মাঠে মাঠে ছেলে বুড়োর জোট
গোলকিপারের গলায় ঝোলে টাকার মালার নোট
হাওয়াই মিঠাই,আইসক্রিম আর বাদামভাজার ঠ্যালা
জোরকদমে এগিয়ে হাঁকে শেষ গোধুলির বেলা।


এইতো আমার শহর
ঘরের ওপর বছর বছর সভ্যতা ভূত বসে
কিলিয়ে কাঁঠাল পাকিয়ে দিলো এক লহমায় কষে
আধফোঁটা যুঁই কখন যেন হলদে হয়ে গুঁড়ো
স্মৃতির ঘরে সেসব দিনের রোজনামচায় ঝুরো।
টিভির চ্যানেল সরিয়ে দুনিয়া দেখছি একলা ঘরে
সেদিন রেডিও বাজলে  গোটা পাড়া হিপহিপহুররে
এখন আমার শহর
ছোটোবেলা ভর করলে কেবল হাহুতাশ
লম্বা একটা ছায়ার দোলা এপাশ থেকে ওপাশ।