একহাতে একটি বিশালাকার শঙ্খ,
অন্যহাতে জালবন্দী গোটা পঞ্চাশেক ছোটো বড়ো নানান রঙের শাঁখ।
পা ডুবিয়ে বসেছিলেম সাগরের জলে
হঠাৎ দেখি আমার পাশটিতে বসে পড়ল।
আমার এতো শঙ্খপ্রীতির কথা জানলো সে কেমন করে?
বুঝতে না দেবার ছলে দরদাম হলো শুরু।
লোকটি শাঁখ বাজায় আর দামের সাথে দমের মিশেল বোঝাতে থাকে।
তালিমারা জামা,ছেঁড়া লুঙ্গির লোকটার দুধসাদা দাঁতের অনাবিল হাসি।
বলতে থাকে, শঙ্খগুলি নিলে ঠকবেননা দিদিমণি,
না নিলে আজ তার ছেলেকে ঠকিয়ে আটার পায়েস খাওয়াতে হবে।
একটা,দুটো করে জিতে নিতে থাকি মোট আটটি শাঁখ।
ফিরে গিয়ে কিছু হাতে তুলে দিলে মুখরক্ষা অন্তত হবে।
হাসিমুখে পেছন ফেরে শঙ্খআলা।জিগেস করি,বাড়ি ফিরছো?
কতোটা দূরে? আজ ক্ষীরের পায়েস দিও ছেলেটাকে।
আবার আকর্ণ হাসি। আমার হাতে মঙ্গল শাঁখ তুলে দেওয়া লোকটা
সমস্ত অমঙ্গল তুলে নিয়েছিলো নিজের মাথায়।
কেউ বুঝতে পারেনি পুবের ঘণিয়ে থাকা কালো মেঘ
আসলে কতোখানি কালসর্পযোগ পুষেছিলো।
রাতারাতি ফিরে গেছি কলকাতা।
আবহাওয়াবিদের নির্দেশ মতো।
লোকটা কি ঘরে ফিরেছিলো দুধ, চাল, কিশমিশ সাথে নিয়ে?
ঘরের খুঁটি উপরে যায়নি তখনো? ছেলেটা মায়ের আঁচল ধরে রেখেছিলো মুঠোয়?
সমুদ্র নাকি ফিরিয়ে দেয় সবকিছু।লোকটাই বলেছিলো।
তবে যে খবরে বলছে,সাগরপাড়ের শাঁখারী বস্তির সকলে নিরুদ্দেশ!  লোকটা মিথ্যুক আসলে।
কিন্তু প্রতিটা শাঁখ ভালোই বাজছে আজও।
আজ দশ বছর হয়ে গেলো।আটখানি শাঁখের একটিও দিতে পারিনি অন্যহাতে তুলে।
নিজের বরাদ্দ শাঁখটি যদি না বাজে আর!
মিথ্যে হয়ে যায়! লোকটি যে মিথ্যুক।
----------
কবিতাটি একটু অন্যভাবে লিখলাম। জানিনা কোনটি বেশি গ্রহণীয় হবে।


সে ছিলো মিথ্যুক লোক
একহাতে ধরেছিলো মস্ত সে শঙ্খ
অন্যহাতের জালে ছোটো বড়ো নানারঙ শাঁখ একজোট
হুট করে বসেছিলো পাশটিতে,সাগরের তটে
কিকরে জেনেছিলো শঙ্খে আমার চীরকাল ভালোবাসা ঝোঁক!
সে অতি মিথ্যুক লোক।
তালিমারা ফাটা জামা,মলিন ধুতি
দুধসাদা অনাবিল হাসি
বুঝিয়েছিলো,দমের সাথেই নাকি দামের মিশেলে বাড়ে শঙ্খের মূল্যরাশি।
মিথ্যুক বলেছিলো,
বিক্রিবাট্টা হলে ঘরে নিয়ে যেতে পারে পোয়াটাক দুধ,কিশমিশ
নইলে কপালে আছে আটার পায়েস,
ছোটো ছেলেটার  জন্মদিনের প্রিয় ডিস।
কিনলাম মোটমাট আটখানি শঙ্খ যা হোক--
তখনও কি জানতাম সে ছিলো মিথ্যুক লোক!
হোটেলে ফিরেই শুনি সুনামি আসছে তীব্র বেগে
তড়িঘড়ি সকলেই ছুটলাম নিরাপদ
আস্তানা দেখে
পরদিন খবরপাতায় রেখে চোখ
বুঝলাম সে ছিলো অতিশয় মিথ্যুক লোক।
আমাকে বুঝিয়েছিলো সাগর কিছুই নেয়না নিজ বুকে,সবটা ফেরত আসে।
বড়ো বড়ো অক্ষরে প্রথম পাতায় ছিলো লেখা "শাঁখারি বস্তির  মানুষেরা সুনামির গ্রাসে।"
ফিরেছিলো মিথ্যুক লোক? খেয়েছিলো ছেলে তার ক্ষীরের পায়েস?
শাঁখগুলো প্রতিটার আওয়াজ কিন্তু ভালো, পাক্কা সরেস।
আটখানি শাঁখ কেনার সময় বলেছিলো সেই লোক, আটখানি কেন?
"দিতে হবে মা, মাসি, পিসি, কাকি পরিবারে আরো যারা গুরুজন হেন।"
এই কথা জানিয়েছিলাম তাকে।
আটখানি শাঁখ রাখা আজও শোকেসের থাকে।
তুলে দিতে পারিনি তা আর কারও হাতে
মিথ্যে রয়েছে লেগে তাতে
বাজলেই নেমে আসে সুনামির ভয়াবহ শোক
হতভাগা ছেলেটির পিতা এক  মিথ্যুক লোক।