দেখেছো মনোবীণা,কি আশ্চর্যভাবে তুমি আমার নিজস্ব বন্ধু হয়ে ফুটে আছো শিরিষ গাছের পাতায় পাতায়-- ঠিক এই মুহূর্তে।


     এই দ্যাখো,বুঝতে পারছো নাতো!! তোমাকেই বলছি গো,সবার সামনে,সবার জন্য রিঙ্কু নামে ডাকলেও মনে মনে তোমাকে মনোবীনা ডেকে ডেকে হয়রান করে ফেলি। বড্ডো জ্বালাই তোমায় সারাদিন।তুমি আমার বোবা ডাকটায় কাঠবেড়ালী হয়ে যাও।শিরিষ গাছের ডালে ওলটপালট করে খুনশুটিতে মেতে ওঠো। আমরা তখন একসাথে রেলকলোনীর তিন টাকলার বাগানের মাচার লাউ ঝুলতে দেখি,কান খাড়া করে শুনি বাঁশিয়ালার সুরের মাতন।


        বিধাতা বড্ডো কঞ্জুষ মনোবীনা,তিনি সুখের ঘর আঁকতে গেলে জানলা,দরজা কম রাখেন,পাছে কালী বেশী খরচ হয়!!নইলে আমি তোমার সাথে কাড়বেড়ালী হয়ে তোমার চেনানো পথে পেড়ে আনতাম গুলঞ্চলতা,ডগা শুদ্ধ কচি লাউ।


       নিঠুর বিধাতার আরো খারাপ নজর পরেছে আমাদের ওপর।মহামারি এনে দিলেন তিনি বছরের শুরুতে। জানলা,দরজাতেও খসখস লাগাতে হলো।এদিকে মনপাখির ডানাদুটো যতোই কাটার চেষ্টা চালাতে গেলেন তিনি, ততোই দাঁড়ে ঝাপটে ঝাপটে রক্তপাতের শুরু।মনখারাপি ধুলো রাঙা হয়ে ঝাপসা হলো পথ।
পথ ভাবতেই মনে পরে গেলো গতবছরের সেদিনের কথা। এইতো এতোটুকু চলো,হাঁটাপথ তো,যাবো আর আসবো বলেই তুমি নিয়ে গেলে দূরের গন্তব্য।তোমার ছোটো পথে আমার পায়ের মাপ মিললোনা।ফলতঃ পা এর কান্নাকাটি শুরু হলো।দোহাই মনোবীনা এবার আমায় কোথাও নিয়ে গেলে ময়ুরপঙ্খীর ব্যবস্থা রেখো। অনেকদূরে হারিয়ে যাবার ইচ্ছে আছে তোমার সাথে।তোমার সাথে নয়তো কি? আর কেউ তোমার মতো করে বলেছে বুঝি, "মহামারিতে তোমার কিছু হবেনা সোনা,ভয় পেয়োনা।তেমন হলে পিপিই কিট পরেও আমি তোমার পাশে থাকবো।" পাশে আছি আর কেউ তো বলেনি তোমার মতো করে।


        পথের বাঁকে যে শাসন জেগে থাকে অষ্টপ্রহর,তাকে অমান্য করার সাহস পাইনে যেন আর।বুকেরও একটা দরজা থাকে।থাকেনা বলো মনোবীনা? সেই দরজার হাতল ছোঁয়না উসখুশ তর্জনী? আমি তর্জনী দিয়ে বন্ধ দেওয়াল জুড়ে লিখতে থাকি তোমার আমার অতীত দিনের কাটানোর সময়কাল। রঙ ভরি,প্রাণ রাখি,ডানা লাগিয়ে পরী বানাই।তারপর তোমার সাথে বোজা চোখ খুলে অচেনা শহরটাতে গোলাপ দিয়ে সাজাই।


       এই শহর আমাকে আপন করতে পারেনি। এই শহরের হাওয়া আমার ডানাকে বেতো করে তুলেছে।এই শহরের আলোয় আমি অন্ধ হবার পথে।তবু এই শহর আমাকে দিয়েছে ইচ্ছেমতো সুরে বাজাবার একটিমাত্র  মনোবীনা।আমার ছোটো ছোটো ইচ্ছেগুলো চাইলেই বেজে ওঠে সেখানে।আসলে মনোবীনা তুমি লালন করেছো বলেই না?


       এই শহরে থাকবোনা বেশীদিন। মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে টের পাচ্ছি।আমার ছোটো ছোটো ইচ্ছে গুলো বাজাবে তো মনোবীণা? সেদিনও লালন করবে,এখনকার মতো? তোমার জন্য কষ্ট লিখবো,ফুলের জলসা রাখবো,চোখের জল দিয়ে ভালোবাসা লিখব।বছরটা শেষ হয়ে এলো। এতোদিনের চেপে রাখা  ইচ্ছেগুলো তোমায় উপুড় করে ঢেলে দিলাম।আমি চলে গেলে অনাথ আশ্রমে পাঠিয়ে দিওনা তাদের মনোবীনা।আমি তোমায় এই এত্তোবড়ো মনের একটা ঘর বানিয়ে দিলাম,এতোটা কম সময়ে।এটুকু আবদার রেখো। সা নি সা সা বেজে ওঠো সময় সময়, কেবল আমার জন্য। আমি বহুদূর থেকে শুনতে পাবো তোমার পায়ের শব্দ, নতুন জামার খসখস, আদুরে কণ্ঠস্বর আর দুপুরের রোদে দেখবো শিরিষ গাছের ডালে কাঠবেড়ালীর খুনশুটি।


      আমার জন্য বাজবে তো মনোবীনা?সা নি সা সা,,, সা নি সা সা,,,