রাত বাড়তেই নিকষ কালো রেল কলোনির বস্তি
তপন জানার চুল্লু দোকানে পাঁচটি যুবার মস্তি
মদন খুড়োর লটারি টিকিট ছিঁড়েছে আজকে শিঁকে
রাতভোরের হুল্লোড় জমে মহল্লাতে পিকনিকে
খিস্তি-খেউর, নাচা গানায়,জমে উঠেছে দোস্তি।


ময়নার আজ পুজোর ছুটির শেষে কলেজ খোলা
পোড়োঘরে মা রয়েছেন একলাটি আলভোলা
চালিয়ে নিতে হবেই পড়া কোনোমতে ছটা মাসের
বন্ধুর হাবি চাকরী দিতে ডিগ্রী চেয়েছে বি.এ. পাসের
কিভাবে এপথ পেরিয়ে যাবে এই আশাতে পথ চলা।


দিনকে দিন মায়ের শরীর ভাঙতে ভাঙতে রুগ্নদশা
ডাক্তার চাই, ওষুধ,পথ্যি,ইত্যাদিতে ফর্দ ঠাসা
তারও আগে দাদুর তৈরী পোড়োবাসা ছাড়ার পালা
ময়নার পা এঁদো গলি, সাবধানী তাই,খুব নিরালা
বনগাঁ লোকাল সময়মতো এলেই জোটে বেশ ভরসা


একঘণ্টা আগেই হয়তো পৌঁছে যেতো ট্রেনটা পেলে
জলকাঁদাতে প্যাঁচর প্যাঁচর শব্দটাও বেআক্কেলে
আওয়াজ তুলে কাঁদছে যেন চটির ফাঁটা শুকতলি
ময়নার আজ একুশ পেরোয়, কাল বাইশের ফুলকলি
ময়না পেরোয় তপন জানার চুল্লু দোকান পাশ ঠেলে


পাঁচ যুবাতে মাতাল তখন, গ্রীষ্ম ভাসে বৃষ্টি মাসে
মদের নেশা শরীরটাতে দফায় দফায় হালচাষে
ময়না হাঁটে হনহনিয়ে, গটমটিয়ে বলা ভালো
লম্বা মাথা পিছু কি নেয়? নজরে যেন আটকালো!
ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেলো বারান্দার ঐ কার্নিশে।


জানলা গ্রীলে মায়ের উঁকি, মেয়ে আসবে প্রতীক্ষাতে
ময়না এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বেশ রাতে।
সকাল হতে খবর এলো,বন্ধু গলা টেলিফোনে
দেবারতির একমিনিটে একটি মাত্র বাক্য শুনে
প্রথম পাতার খবর দেখে দাঁত লাগলো দাঁতে


স্পষ্ট ছবি কাগজ জুড়ে তপন জানার চুল্লু দোকানঘরে
কাল রাতের পাঁচ মদ্যপ উটকো চালে পিছু নেবার পরে
অবাক হওয়া তারও ছিলো একটিও চুল না ছুঁয়ে শয়তানে
হঠাৎ করে থামলো কেন, কি ছিলো তার মানে?
তবে কি ঐ লম্বা মাথার কারসাজিতে পাঁচ মদ্যপ মরে?


কিন্তু কে এই লম্বা মাথা? বিপদ ঠেকায় বারংবার
ঠিক যেন পাশের বাড়ির সোনা জেঠু অকৃতদার
কলেজে ফেরত সহপাঠী যেদিন সঞ্জু পিছু নিলো
নিষেধ সত্বেও গোপন অঙ্গ গায়ের জোরে হাতিয়ে দিলো
ময়না সেদিন রেললাইনে গলা, গলার অলংকার।


সেদিনও এক লম্বা মাথা টেনেছিলো বুকের ভেতর
জ্ঞান ফিরতে হাসপাতালে, ওটুকু ভুলে থাকার পর
খবর কাগজে সঞ্জুর সেই ট্রেনে কাটার দৃশ্যটা
ভাবিয়েছিলো কেমন করে কি থেকে হয় নিঃস্বতা
এখানেও কি তবে সোনা জেঠা? বাড়ির পাশের ঘর?


দাদুর খেয়াল মা'র পৃথিবী লুঠ করেছে লাগামছাড়া
সোনাকে তার চোখের আড়াল করতে গিয়ে, মা বেচারা
কলেজমুখো না হতেই পুরুষালি জোর খাটিয়ে
বন্ধুর এক বেকার ছেলের হাতে ওপর হাত সাটিয়ে
বীরপুঙ্গব খেতাব দিয়ে দাদুর সমাজ আত্মহারা।


পরের বছর শিশুকন্যা বুকে ফিরতে হলো মা' কে
বেকার স্বামীর কিডনি দুটো বিকল ছিলো আগে থেকে
তারও ওপর জুটেছিলো মেয়ে সন্তান প্রসবজ্বালা
তখন থেকেই শুরু মেয়ে কোলে একলা থাকার পালা
সোনাজেঠুই বাবার নাম, ময়না জেনেছে মায়ের থেকে।


দুপুর বেলায় চিলেকোঠার বই এর ধুলোর ঝড়ে
ময়নার মা সতেরো সেদিন ,সোনা জেঠু কুড়ির ঘরে
সোনার মা ঘরকন্না, গোপাল শোয়ায় ব্যস্ত হাতে
ময়নার মা মাঝদুপুরে সোনা জেঠুর বুকের সাথে
সেদিনই হয়তো ময়না এ সমস্তটায় সাক্ষ্য গড়ে !


সেদিন থেকে আজ অব্দি আগলে গেছে লম্বা মাথা
আয়ুর লম্বা রেখাটিকে এক পৃথিবী আড়াল দাতা
বিনি সুতোর এক মালাতে সময়টাকে জুড়ছিলো
ময়নার মা বুকের ভেতর একটু একটু পুড়ছিলো
ময়না যে তার পর্ণমোচীর একটিমাত্র শেষপাতা।