দৃশ্যপটঃ


মা আর বাবা আপিস ঘরে
হাপিস হয়ে থাকে,
কাজের মাসি পাশের বেডে
ঘুমিয়ে নাক ডাকে।


গ্রীষ্মদিনের নিঝুম দুপুর
দৃশ্য আনে চোখে,
মন হেঁটে যায় মেঠো পথের
কোন সে অরূপলোকে।


পথের পাঁচালি বইখানা
সামনে আছে খোলা,
বুকের ভেতর কল্প-সুখের
গল্পরা দেয় দোলা।


আঁখির মাঝে পাখির ডানা-
আকাশি নীল আঁকে,
মন হারানো কোন বাউলা
নিরুদ্দেশে ডাকে?


অট্টালিকার কটমটানির
বন্দি জীবন-গোঠে,
সর্বনাশা ভালবাসায়
মন হাঁফিয়ে ওঠে।


ভাল্লাগে না একলা এমন
ছোট্ট ছেলে তপুর-
মন হতে চায় সঙ্গী কেবল
দুর্গা এবং অপুর।


আঁখির মাঝে পাখির ডানা-
আকাশি নীল আঁকে,
মিষ্টি সুরের বৃষ্টি ঢেলে
হঠাৎ কে গো ডাকে ?


          কণ্ঠস্বরঃ
ভাই রে তপু! বাইরে এসো,
প্রাণের ডানা নেড়ে-
নাই রে বাঁধা, যাই রে চলো 
বন্দি জীবন ছেড়ে!


            তপুঃ
সঙ্গীহারা কারাগারের
নিদয় হৃদয়পুরে-
কে তুমি গো ডাকছো আমায়
অমন মধুর সুরে?


         কণ্ঠস্বরঃ
অমন করে ডাকলে তুমি
কেমন করে দুরে -
থাকব বলো। তাইতো এলাম
তোমার হৃদয়পুরে।


তোমার প্রাণের বন্ধু আমি
নিশিন্দিপুর বাড়ি-
আমিই অপু। ডাকলে তুমি
না এসে কি পারি?


           তপুঃ
সত্যি তুমি দুর্গার ভাই?
কিন্তু কেমন করে-
এই শহরে দুই পহরে
আসলে আমার দোরে?


          অপুঃ
শব্দরেখায় আঁকা তোমার
সামনে রাখা ওই
পথের পাঁচালির ভেতরে
গল্প হয়ে রই।


এবং থাকি তোমার মত
সব ছোটদের মনে-
বেরিয়ে পড়ি চোখ এড়িয়ে
মনহারানোর ক্ষণে।


তোমার মনে লুকিয়ে ছিলাম
মুখিয়ে ছিলাম একা
সুযোগ পেলাম- সামনে এলাম
এবং হলো দেখা।


               তপুঃ
মুক্তিসুখে বুকটি ভরে
পাখির মত উড়ে,
মাঠ-ঘাট-বন ইচ্ছেমতন
বেড়াও তুমি ঘুরে।


ইশকুল এবং পড়ায় আমার
সমস্তক্ষণ কাটে,
ঘোরার সময় পাই না মোটে
যাই না খেলার মাঠে।


রুটিন মানা জীবনখানা
ভাল্লাগে না মোটে,
কষ্টগুলো 'পষ্ট ব্যথায়
বুকের মাঝে ফোটে।


নদীর ধারে মাঠের পারের
দূরের কোনো দেশে,
সমস্তদিন তাধিন তাধিন
বেড়াই হেসে-ভেসে।


সবুজ মায়ায় গাছের ছায়ায়
বুনোফুলের ঘ্রাণে,
খেলবো দু'জন সুজনসখা
ইচ্ছে জাগে প্রাণ।


           অপুঃ
ইচ্ছে যখন দিচ্ছে তাড়া
মনের ভেতর থেকে,
যাই চলো ভাই বেরিয়ে দু'জন
বন্দিজীবন রেখে।


মাঠ-ঘাট-বন ঘুরবো দু'জন
উড়বো ডানা মেলে,
ভাবনাবিহীন সমস্তদিন
বেড়াবো আজ খেলে।


          তপুঃ
নাই রে ছুটি, যাই কেমনে!
হায় রে তোমার সাথে!
আসবে টিচার। আমার কী ছার
সময় আছে হাতে?


গড়তে জীবন পড়তে হবে
মা-বাবার আদেশ এ',
ফাঁকি দিলেই লাল আঁখিরা
সামনে দাঁড়ায় এসে।


ইচ্ছেগুলো দিচ্ছে মেরে
কণ্ঠ চেপে ওরা,
হুলের ঘায়ে ভুলেই গেছি
খেলা এবং ঘোরা।


নাই তো উপায়, যাও তুমি ভাই
পারলে আমায় ভুলো,
আমার এখন গিলতে হবে
বইয়ের আঁখরগুলো।


             অপুঃ
সাচ্চা কথা বলছো তুমি?
আচ্ছা আসি তবে,
রাখলে মনে, ডাকলে আমায়
আবার দেখা হবে।


          দৃশ্যপটঃ
যাচ্ছে ফিরে  ধীরে ধীরে
আপন দেশে অপু,
কষ্টে-শোকে নিষ্পলকে
দেখছে চেয়ে তপু।


ভাবছে মনে এই জীবনে
নেই মজা-সুখ কিছু,
ভালই হতো যেতাম যদি
অপুর পিছুপিছু।


খেদ ও রাগে হঠাৎ জাগে
অদম্য জিদ মনে,
এই কারাগার ভেঙে এবার
যাবেই মাঠে-বনে।


"দাঁড়াও অপু" - বলল তপু
চেঁচিয়ে জোরে জোরে,
"চাই যেতে ভাই, নাও না আমায়
তোমার সাথি করে।"


বলেই দাঁড়ায়। এক পা বাড়ায়।
যাবেই অপুর কাছে,
তাকিয়ে দেখে চোখ পাকিয়ে
স্যার দাঁড়িয়ে আছে।