ইছামতির কাব্য কথা
আল আমিন চৌধুরী স্বপন


আমি স্বপ্ন জলে সাঁতার কাটি, বিষন্নতায় শুকিয়ে গেছি। আমি কি আর আমার আছি। আমি জলকুমারী, জলের ছলে কোমল হাসি, জলে ভাসী, ঝাপ দেই, ডুব  দেই, সাঁতারাই, জলে আমার পুলক উঠে, জল জগতে মৎস পুষি, আমার আছে দীঘলা শরির, লম্বা বেনী, বর্ষা আমার হাসি-খুঁশি, চৈত্র এলে ফাঁটি।
এখন জল বিনা তাই ডাঙ্গায় মরি, আমি নও নেহালের ঝরনা ধারা, জল প্রপাতের জলপরী, জলের নেশায় বিনা স্রোতে জলের তৃষ্ণায় মরি, যেমন বৃষ্টি বিনা এক চাতক পাখী। আমি তো সেই শুকিয়ে যাওয়া ইছামতি। আমি এখন জবর-দখল কপাল পুরা, ঘাটে-বাটে ধুয়া-মুছি। অনেক বছর জান চলে না, বান ডাকে না, খালে-বিলে  ডুবা-জলে মীন আসে না। আষাঢ় এলে বিশুদ্ধ হই, চৈত্র এলে শুকিয়ে যাই।    
সেই যে কবে থেমে গেছে জল প্রবাহ আমি এখন নামে মাত্র ইছামতি।  
ঐ নীল আকাশের মেঘের ভেলায় মেঘরপরী উড়ে বেঁড়ায়, নদী শুধায়, বিল- বাওরে ঝুম বাদলে, আয়রে আয় বৃষ্টি-বাদল নেমে আয়, নাও-না তর-না যে  নদীর বুকে শুধুই কচুরী-পানা। আমি এখন ক্লান্ত নদী, আমার বুকের তরঙ্গ নাই, মাঝি-মাল্লার বৈঠা-বাওয়ার আওয়াজ নাই, ইঞ্জিন চালিত বোড্‌ চলে না, গাঙ  চিলরা গাঙে নাই, সু মেরে মাছ ধরে না।
এক পেছানো শাড়ী পড়ে বৌ-ঝিরা নাইতে আসে না। এক-ডুব, দুই-ডুব, তিন-ডুব, শান্তি মত নাইতে গেলে মন ভরে না। মৎসরা সব দমে-দমে ফুটকুলি ছাড়ে না, ইছামতির বে-মতিগতি দেখে কেউ আর বর্শি পেতে মাছ ধরে না। জেলেরা সব ঝাটা ফেলে মাছ শিকারে কেউ আসে না।  
আমি ইছামতি মৃত প্রায় তবুও স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি। বড্ড স্বাদ জাগে, আবার   ফিরে যৌবন এলে, ক্লান্ত আমি উদাস নদী স্রোতের টানে সব দূর হবে যে।    
আমি হতে চাই না কোন কবির কাব্য-কাবিন, গদ্য-পদ্য পদাবলি, আমি বুঝি নদীর ভাষা, নদীমাতৃক দেশের কথা। আমি বুঝি সাগর জলের লবনাক্ত কষ্ট,   আমি আরও বুঝি পদ্মা নদীর ঘোলাটে পানির ভাংগা-গড়ার কষ্ট। আমি প্রান্তিক নদী ইছামতি, অসংখ্য গ্রামের ভীতর দিয়ে বয়ে চলছি, আমার বুকে মিঠা পানির বহমান ঢেউ থেমে গেছে । আমার চলার পথে শুধু আছে অনুভূতি।  আমি হারিয়েছি বলে, কেউ যেন আর না হারায়। আমি শুধুই ছবি দৃষ্টিনন্দন চিত্রকলা, কবি'র কাব্য পুংক্তিমালা তোমাদের প্রিয় নদী ইছামতি।  
তোমরা আমায় সচল করো, জুলি কেটে পানি আনো। শস্য ভরা ক্ষেত-খামারে  পানির নহর বয়ে দিবো। শাক-সবজী ফলে-ফুলে পানির অভাব মটিয়ে দিবো, আমিষ-প্রটিন-সর্করাতে পুষ্টি এনে ভরে দিবো। স্বইচ্ছেই মত বন্ধু হবো।  
বর্ষা এলে জলের পরী আসবে নায়র , আমি হবো ছলনাময়ী, কুম্ভ কুমের খেয়াল থেকে জলোচ্ছাসের বীন বাঁজাবো। পদ্মা এসে হানা দিবে, ঘর-বাড়ী সব ডুবিয়ে দিবে, আকাশ থেকে গর্জে উঠে, নামবে এসে মেঘের ঢল। বৃষ্টি-বাদল মেঘের মাদল, ভাসিয়ে দিবে জল-স্থল। উবচে পরা নদীর জলে, হবে জল প্রবাহে ভরা  তল। জলদি করে বেড়ী বাঁধের দার খুলে দাও। স্রোতের ধারায় প্লাবন আনো।  
আমি আছি, আমি থাকবো, একদিন-না-একদিন জলোচ্ছাসে ডুবিয়ে দিবো। বুঝবে সেদিন বুঝবে ইছামতির ছলা-কলা।
© ঐ,২১ নভেম্বর ২০১৭, ৭ অগ্রান ১৪২৪