প্রিয় নদী
আল আমিন চৌধুরী স্বপন


ইছামতির পাড় ঘেষে দূর থেকে দূরে হেটে যায় আমার ছায়া কায়া মায়া , স্বপ্নরা ফুটকলি ছাড়ে হৃদয়ের গভীর অন্তস্তল থেকে। বাঁকা পায়ে হেটে
যাই নদীর পাড় ভাংগা পাড় দিয়ে, পায়ের ডলানি খেয়ে দুব্বা ঘাস দুমরে
মুচড়ে উঠে, হুচট খেয়ে পরেছি কতবার পানির কিনারে, তবুও মাছ ধরা
ছাড়িনি অকপটে। আমার প্রতিদিনের সঙ্গি যাকে বলে, সে ছিল আমার
প্রিয় নদী ইছামতি।


নির্জনে বসে আমার মেমরী সাঁজাই , ভালবাসার নদীকে আপন করে পাই।
ছোট ছোট সভ্য ঢেউগুলি কচুরী-পাঁনা দুলায়ে চলে, আমি ভাসি সাঁতার
কাটি, ঝাপ দেই, ডুবাডুবি করি, নৌকা  ভাসাই  বৈঠা বাই, আমার ফেলে
আসা স্মৃতিগুলি ঢেউ খেলে আমার ভাবনার সাথে। আমি হারাবো না ডুবে
যাবো দিশা খুঁজে না পাই।


ছুটে চলা সেই ইছামতির তরী বেয়ে শৈশবের ইচ্ছেগুলি হেসে উঠে-  
নিঃশব্দ জলরং তরংঙ্গে, গাং চিলের উড়াউড়ি ছৈয়া নৌকার বৈঠার টান,
মালবাহি বডবডির আওয়াজ জলের অনুকম্পনে মৌনাতে ভেংগে বেঁধে
যায় হুরুস্থল, দমে দমে ডুবি সাঁতার কেটে উঠি পাড়ে, আমার বলাকা মন
উড়ে যায় প্রিয় নদী ইছামতির সুনীল আকাশে।


ইছামতির বাঁকে বাঁকে আমি স্বপ্নে যাই স্বপ্নে ভাসি, গেদা কালের  স্মৃতি  
আমি কেমনে ভুলি ! এই নদীর অবগাহনে জীবনের শ্রেষ্ট সময় করেছি
পার। ধবধবে জোঁছনায় ভাঁটার টানে শুনেছি কত প্রেমের গান। পূর্ণীমার
জোঁ বুঝে মাছেরা সব আনাগোনা করে, জ্যাইলার ভেঁহালে সাছ্‌রা মাছ
লাফা-লাফি করে, ইছামতির জলস্থলে নুঁচিবাঁইচার বগলে বগলে উড়ে মন
উড়ে ফড়িং আমার মন পবনে । এতটা কাছে থেকে এতটা চোখের সামনে
জীবনকে দেখেছি ইছামতির জল-স্থলে।


ইছামতির নিটল জলে ঢলে পরা কাঁশবনের নরম স্পর্শ আমাকে বার বার
রোমাঞ্চে মাতিয়ে তুলে। সময়ের স্রোতে ভাসা সকাল দূপুর বিকেল
পেরিয়ে শেষ বেলাতে আমি একাকী যে নদীর প্রান্তসীমা থেকে স্মৃতিময়
স্বপ্নে দোল খাচ্ছি, পরন্ত বিকেলে অস্তাচল সূর্যের ঝিকি-মিকি কিরণে প্রিয়
নদী ইছামতির ধ্রূপদী কাব্য লিখি।