আমি ঊষা রানী মাহাত
ভোরের পরথম  আলোই জন্মে ছিলি বলে এমন নামটা ঠিকি,কিন্তু সে আলোর ঝাঁজ কেউ সহে নাই।
আমি ঊষা রানী মাহাত।এম.এ--পি.এইচ,ডি
বাংলা টাকে ভালোবাসে পি.এইচ.ডি করি উপভাষা নিয়ে।


যখন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি
বয়স আঠের হবেক কি নাই
বাপে বিহা দিতে খুঁজল এক মাতালের সঙ্গে।
হামার মা টা পতিবাদ করে ছিলো
বলে ছিল,  বিটি হামার পড়বেক--লেইকবেক!


বাপ হামদের বাইর করে দিয়ে নতুন বিহা করেছিল,
হামারী বয়সী একটা বিটি ছিলাকে।
মামু ঘর,আপন জন সেদিন কেউ দাঁড়ায় নাই,
কেউ সান্ত্বনা দেইনাই হামদের সেদিন।


তারপর প্যাটের দায়ে মা বিটি উঠে গেলি বস্তি পাড়া
এক নতুন জীবন।
বস্তি পাড়ায় থেকে এম. এ করতে বিশ্ব ভারতী...
হামার মুখের ভাষা, আমার চুলের চিটা গন্ধই
আসে পাশের শৌখিন হিরোইন পারা বিটিছিলা গুলা পাশে আসতো নাই।
হামিও উয়াদের নকল করলি,


সেই নকল, হামার হ্যাঁরায় যাওয়া মানতে পারলো নাই
অনির্বাণ, অনির্বাণ চ্যাটার্জি।
হামার সবটা নাকি উ ভালোবাসে,ভালোবাসে আমার ভাষা।
প্রেমের পরশে এই হামি হ্যাঁরাইন গেলি কৈলকাতাই,
হ্যাঁরায় গেল জঙ্গলমহল কৈলকাতাই |
হামি উসারানী মাহাত।এম.এ,পি.এইচ.ডি


হামাকে অনির্বাণ চ্যাটার্জী বিহা করলো ঠিকি,
কিন্তু যে মুখের ভাষা শুনে  বুকে জ্বলন্ত প্রেমের
আগুনে
সে ভাষায় ছাড়তে বললো হামাকে।
আজ আর সে ভাষা ভালো লাগেনাই,
ভালো লাগে নাই আর বাঁকরি বা ঝাড়খন্ডি।


প্রতি মুহূর্তে উপভাষা দলিতের স্বীকৃতি পাই
এ শহর কলকাতা থেকে ও শহর ঢাকায়।


ভাষা হারিয়ে আমি তখন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি কলকাতায়,
ভালোবাসা ও ভাল ভাষা পাওয়ার আশায়।
আমি উসারানী মাহাত আজ বড্ড অসহায়।
সেই অসহায় ধর্মতলার এতটা ভিড়েও আপন কেউ নাই।
সব দুঃখ ভুলে কোলে এলো এক রাজপুত্র সব সুন্দরতা নিয়ে
আমার গ্রামের ঘন মিস কালো চুল
কলকাতার চোখ ধাঁধানো রং নিয়ে।
সিল্কি চুল হয়নি বলে আমার শাশুড়ির সেকি রাগ!
দিব্য সুন্দর সে সন্তানের নাম রাখি সৌম্য
বড্ড সেকেলে বলেছিল ওর বাবা।


আলতো আলতো কথা বলতে শেখ সৌম যখন
"আমার"কে "হামার"বললো
সেদিন আমার আনন্দের সাথে
জুটেছিল আরো অনেক কিছুই।
যেদিন "খাবো নার"বদলে "নাই খাবো"বলেছিল
সেদিন জুটেছিল  প্রহার! বিচ্ছেদ-- বিভাজন।
ভালোবাসার নাটক থেকে--প্রহসন থেকে।


উপভাষা হীন ভীষণ ভাবে দীন
তুমি কথা বললে ট্রামে বাসে লোক ভুরু কুঁচকে তাকাবেই।
উপভাষার নেই কোনো সম্মান
দেয়নি তথাকথিত কোনো গুণী জন তার মান,
গুরু চন্ডালি দোষের মতো।
আমি ঊষারানী মাহাত,এম. এ--পি.এইচ.ডি
একলা  দাঁড়িয়ে আছি ভাষা নিয়ে সৈনিকের মতন।