ভাঙা সংসার


কাব্যগ্রন্থঃ ঘুনপোকা
- মো. আব্দুর রাজ্জাক


সংসার ভেঙে গেলো; ঠিক চারপাশে-
আহ্লাদিত সুখের চিহ্ন ছাড়িয়ে ছিটিয়ে,
মনের অজান্তে রেখেছে বিষ মাখা তৃণীরে -
হৃদয়ের যত সব যন্ত্রণা, ব্যথা, বেদনার ঝড়!


জানালার পর্দাগুলো এলোমেলো মাথা নাড়ে,
বাতাসের সাথে দোল খেলে, সুখে নেই বোঝা যায়!
বৈদ্যুতিক পাখাগুলো ঘুরে ফিরে থেমে থাকে,
মাথা খুটে বাতাসের সাথে শূন্য ঘরে উপরের পানে।


মশারীর কোণগুলো চেয়ে দেখে একাকী পথিকের কষ্ট,
অপলক চেয়ে থাকা, কষ্টের মাত্রা আর অন্ধকারের যাত্রা!
দেড় ফিট বারান্দার টবগুলো বুঝে গেছে মরু সংসারে,
পানি নেই, করুণা নেই; আছে শুধু বুক ফাটা হাহাকার!


চায়ের পেয়ালাগুলো একাকী পরে আছে,
শুকিয়ে গেছে কবেকার চা, কফির দাগ!
অগোছালো প্লেট গ্লাস কানাকানি করে,
থালা বাটি শব্দ করে কিছু বলে কি না!


ফাঁকা রান্না ঘর কান পেতে থাকে,
কেউ আসলো কী না রান্না ঘর জ্বালাতে!
আশায় আছে ঘরনী ফিরবে কবে!
শুকনো কড়াই একটু ফোড়নের শব্দ অথবা;
মরিচের ঝাঁজ পেতে মড়িয়া আগুনের হাহাকার!


তরকারির খুনতিটা মরিচা ধরেছে,
ক্ষয়ে ক্ষয়ে রঙ বদলে কালো হতে চলেছে-
তবুও ঘরনীর খোঁজ নেই, সংসার ভাঙলো বলে!


দোটানায় থেকে থেকে খাটের বিছানাটা এলোমেলো,
কাপড়গুলো সখ্যতা করে নিয়েছে নিজেদের সাথে,
মানুষ শূন্য বেডরুম আজও উষ্ণতা খোঁজে,
একটু আরাম আয়েশের দেশে যাবে বলে।


চিনে মাটির ফুলদানি লক্ষীর কেনা ছিল,
তারাও স্বরণ করে বিগত বছরের উৎসবের কথা!
পড়ার টেবিলে পড়ার কেউ নেই তারাও মনে করে
জীবনানন্দ, রবি ঠাকুর আর নজরুলের লেখনীর,
গভীরে জীবন তত্ত্বের সারসত্য আর প্রেম কথা।
বারবার ডুকরে কাঁদে বারোয়ারী কলহাস্যের স্বরণে!


প্রিয় জানালার গ্রিলগুলোও উপহাস করে বলে-
দেখো দেখো আধুনিক সুখ কত সহজে হয়ে যায়
এক লহমায় মরিচিকা বনসাই আর শূন্যতা!
কত সহজে মানুষ মানুষকে করে বড় বেশি একা!
কত সহজে উপরে উঠায় কত সহজে নিচেও নামায়!
রোলার কোস্টারের মতো উত্থান-পতন।


রকিং চেয়ারটা একা একা দোল খায়,
যেন অতৃপ্ত আত্মার স্মৃতিগুলো আন্দোলনে নেমেছে আবার!
শূন্য বারান্দা, চারটে ফুলের টব নিরবতার আড়ালে ভাষা খুঁজে,
আবিষ্কার করতে চায় সাংসারিক ভুলে ভরা শব্দ সুর,
শুধরে নেওয়ার শপথ!
যেখানে প্রেম ছিল, ছিল উন্মাতাল শরীরি সুখ,
ছিল বাধ ভাঙা জোয়ারের মতো অনর্গল বিভ্রান্ত শব্দ গুচ্ছ!


কত আদরের ঝুলে থাকা পাখিটি বিদায় নিতে চায়
সেও থাকবে না এই নৈ:শব্দের তীক্ষ্ণতর ছোবলের নিচে!
লক্ষ্মীর আশায় এখনো আছে, যদি কোন দিন ফিরে আসে!
তবে কথা ঠিক ভাঙা সংসারে থাকবে না সে!


জলের কলগুলো তৃষ্ণার্ত নয়নে এখনো অপেক্ষায় থাকে,
ভ্যান্টিলেটরে বাসা বাধা চড়ুই পাখি মুচকি হাসে!
তার ভালো সংসার আছে দিন শেষে বাড়ী ফেড়ে।
বারবার বলে যায় তোমার লক্ষ্মীটা ভালো নয়,
এমন সুখের সংসার কী করে বানায় বিরানভুমি!
কী করে বেঁচে আছে একাকী পথের ধারে!


হোক সে লক্ষ্মী, তবুও অসম্পূর্ণ স্বপ্নের মৃতদেহ নিয়ে
সাধের ঘর, স্বপ্নের খোল সব ফেলে কী করে চলে?
বারবার বলে যায় ভ্যান্টিলেটরের জোড়া চড়ুই!
দেয়ালে ঝোলানো জোড়া ছবি আজও অপলক চেয়ে থাকে,
শুধু আমাকে দেখে মাঝে মাঝে ডুকরে কাঁদে,
ভালোবাসা কতটা গভীর হয় চেয়ে চেয়ে পরিমাপ করে,
কার কী করার আছে ভেবে ভেবে চুপ থাকে।


প্রতিদিন অপলক চেয়ে থাকে-
আর; আশঙ্কায় থাকে নতুন কে এসে তাকে নামিয়ে দেবে!
আমি তাকে বলেছি
আর কেউ আসবে না, তোমাদের ধরবে না।


আমি তো একাকী, তোমাদের কষ্ট হবে না,
আমার সাথে চিরদিন থেকে যাবে না?
দেয়ালে হাত কাউকে দিতে দেবো না,
বহু কথা তবুও জোড়া ছবি আজও বিশ্বাস করে না।


(আমার খুব প্রিয় একটি কবিতা, বলতে পারেন আমার সন্তানের মতো।)