প্রতি রাতে ঘুম আসতেই হবে কেন?
কোনো কোনো রাতে কেন জেগে থাকতে হবে না?
রাত কি শুধু ঘুমানোর জন্য?
না ঘুমিয়ে থাকা যায় না?
সবাই ঘুমিয়েছে বলে তোমাকেও ঘুমোতে হবে?


ঘুমোনোকেই কি সুখ বলে?
জন্তুরা সুখি হবে, সুখে থাকবে জীব,
সেটা না হয় ঠিক আছে।
মানুষ সুখে থাকবে কেন?
সুখের জন্য চুক্তি কেন করতে হবে?


এখন অনেক রাত, রাত আরো গভীর হচ্ছে!
রান্না ঘরে গিয়ে পানি গরম দিয়ে দাঁড়াই
মন দিয়ে বাষ্পের শব্দ শুনছি।
চা বানাই, বেশি করে চিনি দিয়ে
কাপে বেশি করে লেবু চিপে দেই।
গরম পানি ঢালি, বাষ্পের ধোয়া আমাকে ছুঁয়ে যায়।


চায়ের কাপ নিয়ে রাস্তার উপর বারান্দায় বসি।
পাশে রেসিডেন্সিয়াল কলেজ,
রাস্তাটি চলে গেছে ঠিক গণভবনের দিকে,
খুব ব্যস্ত রাস্তা, আজকাল একেবারে ফাঁকা থাকে।
বারান্দায় দাঁড়ালে মিটমিটে জ্বলন্ত তারা দেখি!
তারাদের নাম জানা নেই,
ওদের একটি একটি করে নাম দিতে থাকি!
তুমি আদ্রা, তুমি রোহিণী, তুমি বিশাখা আর তুমি স্বাতী।


তারাদের নাম শুনেছি সেই ছোট বেলায়!
নামের সাথে মিলিয়ে দেখিনি কোনো দিন,
দেখবো কী করে?
আকাশইতো দেখিনি কোনো দিন!


আজ আমার মগজে তারাগুলো ঝিকমিক করছে
চোখের সামনে আদ্রা ঝাঁপিয়ে পড়ছে বিশাখার উপর!
বিশাখা ঝাঁপিয়ে পড়ছে রোহিণীর উপর!
ক্রমেই আকাশ অন্ধকার হয়ে উঠছে!
আমি আরো ঘুমহীন হতাশায় ডুবে যাচ্ছি।


বসে বসে ভাবছি
যদি সিগারেট খেতে পারতাম!
আমি নিশ্চয় চেইন স্মোকার হতাম!
একটার পর একটা সিগারেট ধরাতাম।
অত্যাচার করতে থাকতাম জীবনকে!
বাসায় হুইস্কি, বিয়ার কিংবা ঠাণ্ডা কিছু থাকলেও চলতো!
জীবনকে চুষে চুষে গিলে পান করতাম।


আমি বারান্দা থেকে ঘরের দিকে হাঁটছি
ঘর থেকে আবার বারান্দায় যাচ্ছি!
এটাই আমার রাজপথ!
এখানে আমি একা হাঁটতে পারি, কেউ বাধা দেবে না।
জীবন তুমি আমাকে কষ্ট দিচ্ছ?
শাসন করতে চাও?
পারবে না। আমার জীবনকে
আমি শাসন করবো।
আমি আমার জীবনের প্রভু,
যেমন খুশি, তেমন চালিয়ে নেবো।
জীবন, তুমি আমার ভৃত্য, আমি প্রভু।


আমি কোন মেয়ের সাহায্য নিয়ে বাঁচতে চাই না,
চাই না গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমোতে।
এমনকি টেলিভিশনের চ্যানেল পাল্টিয়ে পাল্টিয়েও না
বন্ধুদের সময় ধার নিয়েও না।


প্রত্যক্ষভাবে জীবন শাসন করে বাঁচতে চাই।
দরকার হলে এভাবেই জেগে থাকবো সারারাত,
জীবনের সবগুলো রাত।


রাত কি আমার চেয়ে শক্তিশালী?
রাত কি আমার মতো বদ্ধপরিকর মানুষ?
নিশ্চয় রাত আমাকে ছেড়ে যাবে না!
আমার সাথে জেগে জেগে আলো বিলাবে
সে আলোয় আমি একা ভেসে যাব।


কোথা থেকে যেন পাখির ডাক ভেসে আসছে!
পাখির ডাকে আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াই,
আমি সব পাখির ডাক চিনি নে,
তবে একটি ডাক বেশ পরিচিত, সম্ভবত দোয়েল মণি।
দোয়েলের ডাকে কেঁপে কেঁপে ভোর হচ্ছে!
পুব দিকে তাকিয়ে দেখি,
হাজার ওয়াডের বাল্বের মতো আকাশে তারা জ্বলছে!
এইটিই কি শুক্র তারা?
ভয়ংকর একটি রাত উপহার দিলো সে কি এই শুক্র তারা!


আমার রক্তের ভেতর দিয়ে বাতাস বয়ে যাচ্ছে!
একটি জ্বলজ্বলে তারা জ্বলতে থাকে আমার ভেতরে!
সে তারা আমাকে জাগিয়ে রাখে,
রাতের পর রাত আমি তারার আলোয় জেগে থাকি!
আজো জেগে আছি, তারাদের আলোয় জেগে থাকি,
তারাদের সাথে পেলেই দু’চোখ জেগে থাকে!
এ জেগে থাকা অনন্তকালের জন্য, চিরদিনের জন্য।


(তারিখ: ২৬/০৯/২০১৭ খ্রি.)