সেই জানালা।
বৃদ্ধ বাবার ঘরের সেই জানালা ।
কার্নিশে ছিল তার পায়রার আনাগোনা ।
আর ছিল মশারীর মলিন দড়ি বাঁধা দুটো হুক্ ।
সারাদিন চড়াই - শালিকের খুনসুটি ।
জানালার ধারে ভাঙা টবে অজানায় বেড়ে উঠেছিল সিম গাছ ।
চিড় ধরা ছোটো এক রেকাবির উপর জলের বাটি।
আর তাতে টাটকা টগর ফুল ।
ছবি গুরুদেবের।
দেওয়ালে অর্ধবৃত্তাকারে ঘোরা ক্যালেনডারের দাগ ।
ঐতিহ্যময় প্রাচীন ঘড়ি, জলের গেলাস আর জগ্ ।
এক গুচ্ছ বই কাগজের ক্লিপিঙ্ আর পীঠ চুলকানোর হাত - লাঠি ,
বালিশের নীচে জপের মালা।
এই জানালার পাশে বসত রোজ গভীর রাতের নির্জন আসর।
মৃদুস্বরে বইপড়া, টিপ্পনী দেওয়া,
আর ছিল খেরোখাতা লেখা।
ছিল নোয়াখালীর গল্প চারণকবি মুকুন্দ দাসের কথা
সিন্দুক, গোল আয়না, বেড্ সুইচ্ আর দেওয়ালের টিকটিকি ছিল নীরব সাক্ষী।
ঠান্ডা দুধে টুকরো টুকরো ছেঁড়া রুটি,
আর পুরো একমুঠো চিনির বিলাসিতা।
এই ছিল তার আড়ম্বর।
বাতের ব্যাথায় কাহিল হয়ে শেষরাতে ঘুমিয়ে যেত, কেটে যেত রাত ।
তবু কেঁপে উঠত চারিদিক সকাল হতে বাজখাঁই গলায় যখন দারোয়ান কে ডাকত ভালোবেসে " কুমার কুমার "!
যেন সরল কবিতার মত ছিল এক জীবন
মানুষটা অল্পেতে কী খুশি থাকত সারাক্ষণ !
আজ আর নেই বাবা। জানালা টা আজো আছে একরকম, কেবল কপাট বন্ধ। যত্নে খবরের কাগজ মোড়ানো সীলিঙ ফ্যান।
অব্যাবহৃত ধূপদানী, কবেকার বারুদ মুছে যাওয়া দেশলাই!
আর আছে ছবি হয়ে যাওয়া, তার অপলক চোখে চেয়ে থাকা ঘর ভরা এই শূন্যতা।