সঙ্গীত ও লোক দর্শনের একটি বিস্ময়কর প্রতিভার নাম লালন!এই মানুষটিকে নিয়ে বিস্ময়ের শেষ নেই।তাঁর ব্যক্তি জীবনটাই যে একটা মিথ্!সুর ও কথার ইন্দ্রজালে নব নব আবিস্কার এই শিল্পীকে ঘীরে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বিস্ময়াবিষ্ট হয়েছিলেন লালন ফকিরের প্রতিভায়।আমরা যদি আমাদের বাঙ্গালীয়ানাকে প্রমোট করতে চাই।তাহলে অবশ্যই লালন সাঁইকে একটা স্হান দিতে হবে।তাঁর সহজ সরল শব্দ চয়নের ভিতরে লুকিয়ে আছে,মানব মানবির দেহ থেকে মনের সুগভীরের সন্দেশ ; সুকমল অনুভূতির বহি:প্রকাশ।তিনি নিজেকে ঠিক চিনেছিলেন আপন দর্পণে।
" মিলন হবে কত দিনে?
আমার মনের মানুষের সনে?".....
এই মনের মানুষ যে পরমাত্মা!আত্মার সাথে পরমাত্মার এই মিলনই তো বৈষ্ণব দর্শন! মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে একমাত্র পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নিকট নিজেকে সমর্পণ করা! ভক্তিবাদের এটি যে আরেকটি ধারা!
"খাঁচার ভিতর অচীন পাখি
কেমনে আসে যায়!".....
এখানে পাখি মানে যে আত্মা,সেটি বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না!এই শরীরের ভিতরে কিভাবে আত্মার প্রবেশ ঘটে!এই চরম সত্যটি বোঝা অত সহজ নয়!
" আট কুটরী,নয় দরজা!".......
দেহতত্ত্বের চুড়ান্ত প্রকাশ এখানে।মানব দেহের ভিতরের খবর তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যায়ন না করেই জানলেন কী করে!
এখানে বিস্ময় আর বিস্ময়!!!!
আজকে বিশ্ব জুড়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ঘোর সংকট চলছে।এই সংকটে বাউল শিল্পীরা আক্রান্ত হয়েছেন।তাদের হাতে তো অস্ত্র নেই,তাদের হাতে আছে একতারা আর দোতারা।তাদের কণ্ঠে রয়েছে গান।
কিছুকাল পূর্বে চুয়াডাঙ্গায় একটি বাউলদের আখড়া আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।কিন্তু কেন? বাউলদের হাতে তো কোন অস্ত্র ছিল না!বাউলেরা তো অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে না! কণ্ঠই তাদের অস্ত্র।
তখন পত্রিকার খবরে প্রকাশ হয়েছিল,আখড়ার জমি বিরোধের জের ধরে এই আগ্নিকান্ড!বিষয়টি কি এত সহজ ছিল ? এভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে- তাদের বিপদে আমরা কেন নিরুত্তাপ ছিলাম? বাউল শিল্পীকে হত্যার নজির আছে।বাউল শিল্পীদেরকে ধরে বেঁধে যখন চুল দাঁড়ি কেটে দেয়া হয়,আমরা তখন নিরুত্তাপ ছিলাম!
আজকে যখন দেশের বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের পূজা-পার্বণে প্রতিমা ভাঙ্গার আয়োজন চলে,আমরা তখনও নিরুত্তাপ!!!
তাই মনে স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে,এদেশে কি সত্যিকার অর্থে লালন কিংবা লালনের দর্শনকে লালন করা হয়?
মনে রাখতে হবে,লালনেরা হারলে,বাংলাদেশ হারবে,হারবে বাঙ্গালী সংস্কৃতি!