অসীমের পানে ছুটিতেছি মোরা
সোজা পথটাকে ছেড়ে,
অন্ধ আবেশে যাত্রাটা যেন
স্বস্তি নিয়েছে কেড়ে।
মস্তকে শুধু আত্নচিন্তা
আছে হা-হুতাশ যত,
অন্তরে যেন দংশিছে সদা
পাওয়া-না পাওয়ার ক্ষত।
প্রকাশে-আড়ালে যত চাওয়া থাকে
অন্তরে যথা চেপে,
কতখানি চাই কুল যে না পাই
বাটখারা দিয়ে মেপে।
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষিয়া
মাথা কুটিতেছে যারা,
মত্ত রহিছে আপন বিলাসে
আত্নমগ্ন তারা।
কত শ্রেণি-পেশা গড়েছি এখানে
একে অপরের তরে,
সকলি তো মোরা মানুষ তবুও
ব্যবধান গেছে বেড়ে।
নমুনা একটু বলি,
দাতা-গ্রহীতার দূরত্বটা দেখ
কতদূর গেছে চলি।
রোগে-শোকে ঐ আমজনতারা
কাতর হইবে যত,
ডাক্তার গোনে রোগী কত এলো
উপরি আসিল কত।
প্রশাসনে আছে সাধু বেশে যত
আমলাতন্ত্র ওঝা,
ফুৎকারে ওরা ঝাড়িতেছে সবি
কভু নাহি যাবে বোঝা।
উহাদের মুখে দু'ধারী মন্ত্রে
ওরা ঝাড়ে জনতারে,
মগজখানাকে ধোলাই করিয়ে
বসে মনিবেরও ঘাড়ে।
বাঁধ ভেঙ্গে গেলে আবার গড়িবে
ভাবে যে প্রকৌশলী,
কমিশন খাবে আরও কিছু পাবে
পলেস্তারা পরে খুলি।
ফসল তলিয়ে ক্ষতি হবে কত
মাথা ব্যথা নেই তারও,
টেন্ডার হবে নজরানা পাবে
নির্মিত হবে আরও।
পুলিশ বাবুর দিল খোশ নহে
মামলাটা গেলে থেমে,
শান্ত স্বদেশে খুশি হবে না সে
উপরিটা যদি কমে।
মাস্টারগণে অর্থের ধ্যানে
করিতেছে ছোটাছুটি,
মেরুদন্ডটা নড়বড়ে করে
জাতির ধরেছে টুটি।
উকিল মিয়ারা টেবিলেতে বসে
শুধু মাসোহারা গোনে,
দরকষাকষি আরও কিছু হবে
তার মক্কেল সনে।
এইভাবে মোরা যে পেশায় আছি
সততার প্রচ্ছদে,
প্রত্যেকে মোরা আমজনতাকে
ঠকিয়েছি পদে পদে।
এই পথ ধরে উল্টো রথের
যাত্রাটা তবে মিছে,
ধনীরা হতেছে ধনবান
আর গরীবেরা পরে পিছে।
ধনী-নির্ধন যারা আছে
এই সোনার বাংলাদেশে,
সকলে সমান কেহ ছোট নহে
সতত নির্বিশেষে।
কেহ ত্যাগে শুধু দেশের জন্য
ত্যাগিয়া পায় সে সুখ,
কেহ ভোগে যেন আপন বিলাশে
ভরে না তবুও বুক।
সব কিছু দিয়ে দেশেরই তরে
নিজেকে বিলায় কেহ,
কেহ আছে শুধু আপনাকে নিয়ে
মিটিয়েছে তার মোহ।
চাওয়া-পাওয়ার এই অংক মেলাতে
যাহারা পরেছে পিছে,
কোথা গেলে তারা নিষ্কৃতি পাবে
শুধাবে কাহার কাছে?