পর্ব -০১


ঐযে উপচে পড়া মায়াভরা রুপসী রুপালী চাঁদ ॥
কত সুন্দর,
কানায়কানা যেন ভরভর,
এত ভক্ত প্রিয় আদরনীয় তবু কেন তারা সবে পর,
স্নিগ্ধ জোছনার মোহ ঘের,
মাটির দুনিয়ার যত বিভোর মানুষের,
জীবনটা যেন তার হেন সরস, সাতরঙে সাজানো ঢের,
ভরেনা কেন মন, কেনযে এমন, পেয়েও সবকিছু ষোলআনা পূরো একসের,
আরও চাহে ধন, রঙমাখা জীবন, ভোগ বিনোদন, এ কোন বাসনা বিলাস, আহলাদ ॥
যত আলসে কুড়ে,
হওয়ায় ভেসেভেসে আকাশে উড়ে,  
কেউ সারাক্ষণ মোবাইল টিপে, মজে আছে ঐ নেশার ভুরে,
কেউ আলোতে কেউ আঁধারে, মন্দের ভাগাড়ে কালো টাকার পিছনে ঘুরে আর ঘুরে,
আহার আর ঘুম,
অন্ন, সময় ও অর্থেরই শুধু অপচয় ধুম,
সৃজনের মেধা ও মনটা,
যার দায়, বাবামায় চায় উপার্জন কিছুটা,
করেনা কাজ, নেই কোন লাজ, মোবাইল টিপে দিনের তিনের দুই-ষোলঘন্টা,
আয়ুটার অবক্ষয়, সে এক পরাজয়, স্বপ্ন আশা ও সৃজনেরও বেজেছে বারোটা,
নেই সহযোগিতার দরদী মন,
বোধ, বিবেক ও বিবেচনার সেই কবেই যেন হয়েছে মরণ,
আত্মঘাতী ও সর্বনাশা,
হলোনা একটা শান্তি-সুখের বাসা,
একটা সোনালী জীবনের জিয়নে মরণ, নির্বোধ কানা থেকেও তিনটা নয়ন, করিল সে তার সবই বরবাদ ॥  
ধরেছে যারে বিরহের বিষ,
সকলই তার কাছে বিরস ও আলুণ নিরামিষ,
জোনাকির ঝিলমিল ঝিঝির বাঁশরী ও দোয়েলের শিস,
মনের মলিনতা ও ধূয়েমুছে সব বিষন্নতা, জোছনাটারে না যদি দেখিস,
যে মনটা হয়ে আছে ভারী কিবা অধীর,
কেমনে শুনিবে সে বৃষ্টির রিমঝিম ও বাতাসের ঝিরঝির,
টানাটানির সংসার, ঐ চাঁদটা পূর্নিমার যেন এক ঝলসানো রুটি,
দুঃসহ যাতনার, জায়গা নেই বলার, যেন চেপে ধরা দমের টুটি,
অভাবের ঘর, সবাই যেন হেথা পর, নাই যেথা হতে মুক্তি বা কোন বিশ্রামের ছুটি,
ছনের ঘরের ভাংগা টুয়ার ফাঁকে,
উঁকি দেওয়া জোছনা যমদূত হয়ে যেন ডাকে,
সবকিছু যেন মাটি,
কিসের তার শীতল পাটি,
কিবা রেশমী চাদরে ঢাকা নরম বিছানা,
এই চাঁদ, দিগন্তে ছড়ানো বিছানো পাতানো যেন সে এক দুঃসহ মরম যাতনার ফাঁদ ॥


পর্ব -০২


কত বোঝা তার ঘারে,
বহিতে যেন সে আর নাহি পারে,
কে যেন তারে তাড়না দেয় শুধু বারেবারে,
খুঁজিতে সুখ আহারে যেথা রঙধনুটা সাজানো সাতরঙ বাহারে,
কেউ হারে কেউ জেতে,
আরও সুখ পেতে বিভোর নেশায় রয় মেতে,
হোকবা নাহোক তা সাধন,
এইতো জীবন, হাঠাৎ মরণ এসে করিবে সব হরণ,
যার ভাগে জুটেছে যেটুকু যেমন, তারই আস্বাদন অম্ল মধুর তিক্ত কিবা নোনতা স্বাদ ॥
মনের কাঁধের ক্লান্ত দুখানা ভারে,  
মরমের কাছে আপনি সে গোপনে হারে,
কতকিযে না পাওয়ার লুকানো হাহাকার তারে,
কে প্রসমিত করিতে পারে যে বেদনা কমেনা শুধু বাড়ে,
মন বলে কেবলই আকাশের ঐ বিজন বাড়ীটা ছাড়ে সে চুপিসারে,
বুকে তার অঙ্কিত কলংক কালো দাগ, নাহলে কেন তা দেখিতে পাই আহারে,
তার ওতো রহিতে পারে কতনা এমন জমানো অস্ফুট অজানা কষ্ট ও বেদনা বিষাদ ॥
সাগর নদীর রয়েছে দুইপার,
কোন পারেতে সুখটা বেশী আর, কোনটা ভালো লাগে কার,
এ জগত সংসার,
আসা যাওয়ার তার দুই দুয়ার,
সুখেদুঃখে মিলেমিশে হয়ে আছে একাকার,
কিছু দুঃখ কিছু সুখ কিছুটা অনটন সে জীবনইতো মজাদার,
একখানা তৃতীয় নয়ন, পরম ভাগ্যবান শুধুই সেজন লভেছে ফুটেছে যার,
একজনের তিন জীবন, কেন কেউ পায় কেউ পায়না মরনের আগে সে দরশন তার,
বুঝিবে সে একদিন, মহাজনের কাছে তার কত ঋন, আর দাদন ও ধার দম ফুরালে সবে যখন হবে পর সকলই বরবাদ ॥
পাখীরা মনের সুখে গান গায়,
জীবন কেটে যায় গাছের ডালে ছায়,
বাসা বাধে ঐ ঝোপের ভিতর লতাপাতায়,
নাই চালচুলো, নাহি রাঁধে তবুতো পেটভরে খায়,
প্রজাপতি ফড়িং নাঁচে শুধু তিড়িংবিড়িং ভেসে ভেসে হাওয়ায়,
জোনাকির চোখ বাধা তাই দেখিতে চায়, ক্ষুদ্র তার বাতিটার আলোক ছড়ায়,
ঝিঝিরা কেজানে কোন সুখে তীক্ষ্ণ বিরস বাঁশরী বাজায়,
নাকি লুকানো তার কষ্ট বেদনার, ঢেলে দিয়ে ফেলে সবটুকু করে উজার, একটু প্রশান্তি পায় ।
কেউকেউ ভাবে অন্তরে অন্তরে,
আর মনেমনে শুধু আফসোস করে মরে,
নাজানি আহারে কত সুখ ঐ প্রাসাদ মেঝেতে পড়ে,
অবহেলায় গড়াগড়ি যায়, কতজনে নাহি পায়, যেচেও তা বিনয় ও কাতরে,
আবার কারোকারো ধারণায়, মন সে মুখী হতেও চায়, যত সুখ বুঝি ঐ ছোট্ট মাটির ঘরে ।
কোন কোন বোকা যারা করেনি পাশ,
খেয়ে নানান ধোকা ও ঠক হয়েছে তারা ভীষণ হতাশ,
এখন গোপনে ফেলে শুধু কষ্টের নিঃশ্বাস,
বলে আক্ষেপের ছলে, যারা হয়নি রাজার ভক্ত প্রিয় গোলাম দাস,
আমার ঘরে কেন যত অভাব আর যেন অসুখের বাস,
দেখি পাশের বাড়ীতে, মিয়ার বেটার ঘরে পঞ্চসুখের কলরব ও উল্লাস ।
কারো ঘরে মনের কোণে বিষাদ আর বিষন্নতার নিরব হাহাকার,
ভাবে পাওয়ার চেয়ে না পাওয়া আর, সুখের চেয়ে দুঃক্ষটা কেনরে অধিক আমার,
পরের সুখের পানে তাকিয়ে নয়,
কেজানে কয়জনে কোনখানে জানা তাদের পরিচয়,
তবুও বেঁচে আছে, পৌছে গিয়েও মরণের কাছে, কঠিন রণে তারা করে জয়,
এসো তবে শিক্ষা লই, আমরা সবে মানুষ হই, কেমনে পেরেছে তারা ও পেয়েছে ঐ বিজয় তা জানা দরকার ।
কেউবা হন্নে হয়ে খুঁজে বেড়ায়,
রয়েছে তা কোথায় কেমনেইবা তার নাগাল পায়,
যতই তার মূল্য কিবা হোকসে যতই ঋন, সুখের ঐ সুখপাখীটা কিবা ঐ সোনার হরিণ ধরতে চায়,
মনে বাসনার ঢল, আলো ঝলমল ও মোড়ানো গালিচা লাল মখমল, গড়তে কল্পলোকের শান্তিসুখের ঐ বিশাল প্রাসাদ ॥


পর্ব -০৩


স্বচ্ছ পরিমল,
ঝিরঝির টলমল,
নীল তার বুকভরা থৈ থৈ জল,
সাতরঙ ফুল বাহারী পাখীদের রুপমহল,
গরমে বনের পাখীরা এসে ডুবিয়ে করে গা শীতল,
সবুজে ঘেরা অভয় মিলন ডেরা সে এক বিশাল মনোহর ঝিল,
পাখী আর মাছেদের ছুটোছুটি আসা যাওয়া, সারাদিন কলরব ও কিলবিল,
যদি তার সবটা হতো আমার এমন, কেউ তা কেড়ে নেবেনা আর কখনও সামান্য একতিল,
যদিও জানি কেন তা নাহি মানি, বারবার শুধু করি টানাটানি, চাওয়া ও পাওয়াটার এ জীবনে হয়না কভু মিল,
রাজার রাজা এক মহারাজার,
ষোলআনা সবকিছুর মালিকানা যার,
রবি শশী, লক্ষ কোটি বারানসি ও গ্রহ তারকার,
অদৃশ্যমান করুণাময় ও মহান ঐ হস্তদুখান অসীম ক্ষমতার,
জগতজুড়ে বিরাজমান, আপন সৃষ্টির মাঝে গোপন অবস্থান যেন দেখি তার,
শতকোটি সৃষ্টির এক কারিগর, কোথা তার বাড়ীঘর ও ঠিকানা নিপুণ রুপকার ঐ বিধাতার,
হলে যথা গুরু দক্ষিনা, যায় বিনাদামে শূন্যে প্রাসাদ কিনা, মিলে অসীমের সীমানার পার পেলে তার একটু ছাড়,
এত উপহার দান নেয়ামত অফুরান, উদার নিরাকার করুণার চরনে কি দিই তার একটুখানি পূঁজার প্রসাদ ॥
আকাশে চলমান মেঘের ভেলা,
তার মাঝে জোছনার কি মজার লুকোচুরি খেলা,
চেয়েছিল মন ঐ মেঘে প্রশান্ত বেগে ভেসে বেড়াই কিছুক্ষণ একবেলা,
দেখি কেউবা প্রাসাদে থেকে,
কি যেন বলে দুহাত বাড়িয়ে কারে ডেকে,
নিয়ে যাও এসে ওরে, তোমরা মোরে সহসা ছাড়িয়ে,
উচ্ছল আলো আছে ভালো নেই, ঐ যাতনার পীড়নে দিতে চায় তাড়িয়ে,
জানিনা কি চাহিতে কি চেয়েছি আর, কি পেয়ে শেষে আমি ফেলেছি কি যেন অতি দামী হারিয়ে,
কোটি তারকা মেঘের ভেলা আর ঐ চাঁদের দেশ,
আহা সহস্র বছর মনে হলো মরণের পর, ছিল যেন তা কিছুক্ষণ এক নিমেষ,
কি কারণে কিবা দোষে, অধম গোলাম রাজার রোশে, ভিনদেশে মুসাফির বেশে ছিলেম নিরুদ্দেশ,  
কষ্ট আর হতাশার রেশ, মাটিতে নির্বাসন যোজন যোজন পথ নেই ঠিকানা নেই বাহন, নেই যার কোথাও শেষ,
যখনই হায় আমি ভাবিতে বসিলাম,
তখনই আমার নাম ধরে যেন কার ডাক শুনিলাম,
বিচক্ষণ নহে আবু হকে কহে, সময় কি ওরে কভু বসে রহে, দমেদমে কমে হয়ত বুঝিনি তাই ছিলেম বলে মোহভোগে উম্মাদ ॥


পর্ব -০৪


তার বাহাদুরী বিলাস,
যখন যা চাহে মন সৃজন প্রলয় বিনাশ,
কুদরত কেরামত ও করুনার খুঁটি বিহীন সপ্ত আকাশ,
বড়ই অক্ষম নিরুপায় অভাগা অসহায় যেজন বিভোর বেহুষ ও উদাস,
সবকিছু পায় কমে যায় ঋনদায় নির্ভরতায় ও মুখাপেক্ষিতায় ধন্য মহাজগতের সকল দাস,
এ খেলা চীরকাল সারাবেলা চলে বারমাস,
ভেদ বুঝা ভার কোনটা তার ক্রোধ ক্ষোভ আর কেনইবা উল্লাস,
কারেও দেয় ঠেলে নিদানে ফেলে, কারোটা নেয় কেড়ে ও কাউকে দেয় ঢেলে একরাশ,
নিশ্চয় লাভক্ষতি জয়পরাজয় তার কৃপাতেই সবকিছু হয়, ধর্য্যশীলতা আর যেথা হয় আলো ও ভালোর চাষ,
অটল দিল ভক্ত অনুরাগী, করে সামাণ্য দান অসহায় জীবের লাগি, ঐ অটল অবিচল বিশ্বাসীরাই শুধু করে পাস,
কারো রংগশালা কারো যেন কারাগার,
কারো লাগি শত আয়োজন ও উদারতার ছাড়,
আসা ও যাওয়ার তরে দেখি তার অবাধ খোলা সহস্র দুয়ার,
আবার পথ নেই যেন কারো সাধ্যইবা কার, হেথা হতে কোথাও পালাবার,
নিঝুম বিজনপুরী নেই পথঘাট,
ঘিরে চারিধার আকাশ ছোয়া প্রাচীর আর বিশাল ঐ লৌহ কপাট,
ফটক কেন আগুনের ফুলকী যেন দিচ্ছে ঝলক নেই সিড়ি, বসার পিড়ি ও জানালা-দরজা কিবা কোন দেউড়ী গরাদ ॥
খোলা পাঠশালা খোলা বই,
ছাত্ররা সব কিসে মশগুল তারা গেছে কই,
নগন্য মালি এই নিয়ে কেন বিস্মিত চিন্তিত ও ব্যথিত হই,
কেউ ভাবেনা কি আছে ওপারে, চারপাশের প্রকৃতি ও বিশ্বজগতটারে লই,
তারা মানুষ কেমন,
জানেনা ভাবেনা পরিচয় আপন,
দেখি কারোই নেই মন, নেই তৃতীয় নয়ন,
চাওয়া তার আরও ধন চাই আরও ভোগ বিনোদন,
খতিয়ে দেখেনা লাভক্ষতি দায় একোন বিভোর সম্মোহন,
লভে ঢের বিত্তধন ভাবছে এমন যেন করেছে বিশ্বজয় তাই করছে বড়াই হয়ে শ্রেষ্ঠজন,
অনুভবে চেতনায় নেই ভয় কোন শংকা দায় আত্বাটা অসাড় ও অচেতন,  
সহে আর কহে গুরু মালিক সাঁই মহাজন, মনে নেই অংগীকার ও মাথাভারী তার ঋন ও দাদন,
কি পেলো আর কি পেলোনা শুধু সেই পেরেশানি ও তাড়না, নেই সাধনের সাধনা আছে শত বাসনা ও সাধ ॥
এখন দেখি,
হায়হায় হলো একি,
আপন মন্দ কর্ম্মফল,
দানিল জীবন যাতনাময় ও বিফল,
কাঙালের বেশে এসে নদীর ঘাটে এক সন্ধাবেলায়,
তরীমাঝি কিছু নাই, সংগী স্বজন ও বন্ধুভাই হলেম আমি বড় অসহায়,
ঐ সরদার তোষামোদ পাওনা যার ও চামচা-চাটুকারের দল ও সকল বিত্তধন সম্বল সব হারায়,
এমনই দশা নিরব করুণ হাহাকার মনেহয় যেন পদতলে নেই মাটি আর মাথার উপরে ছায়া কিবা ছাদ ॥