পর্ব – ০১


আউলিয়া দরবেশ,
ময়লা ও ছিন্ন তার পোষাকের বেশ,
এলোমেলো ও আলুথালু ছিলযে লম্বা দাড়ি ও কেশ,
কপালের কুঁচকানো ভাজ, নাহি কোন ভয়-লাজ যেন শুধু ক্লেশ,
কখনও মন্থর কখনোবা ক্ষিপ্র চলায়, হাতে নেই যেন তার সময় এক নিমেষ,
সারা দেহ জুরে তার ক্লান্তি, অবসাদ আর অজানা কোন্ সে যেন দূর্ভাবনার তাড়না ও রেশ ।
ঠিকমত সে নায়না ও ঘুমায়না,
কারো সনে কভু তার, কোন বাতচিত হয়না,
কখনও ছোট কোন কাজ পেলে মন চাহিলে করে, নাহলে খায়না ।
নাই কোন চাহিদা কিবা বায়না,
নিজে নিজে বিড়বিড় করে কিযে বলে, কিছু তার বুঝা যায়না,
নিজের মত করে চলে, কারো সনে মিশেনা নহে সে কারো দলে, কারো কাছে কিছু সে চায়না ।
করেনা কারো ক্ষতি,
কখন হয় তার কোন সে মতি,
তবে হেটে চলায় তার যেন নাই কোন বিরতি,
সদা ব্যস্ত তবে জানা নেই কি কাজ কিবা কোনদিকে লক্ষ্য গতি,
হেয়ালী, উদাসী ও বড়ই বেখেয়ালী, কে আসে কে যায়, কে কি বলে, করে ও চলে তার প্রতি ।  
বুঝা কিবা বলা অতি ভার,
কি চাহে কি কহে সে, কিবা তার প্রয়োজন দরকার,
নেই কোন সাধ, আশা কিবা বায়না,
আসলে তাকে আজও কারো হলোনাযে চেনা-জানা,
এক অন্ধ অঁচল, অতিশয় বৃদ্ধ ও দূর্বল মায়ের তরেই বুঝি শুধু ভাবনা,  
চলছে ঝোপের ভিতরে ছোট্ট ঝুপড়ী ঘরে, এক মা ও তার পাগল ছেলেটার এ জীবনখানা ।
ঝুপড়ীতে বাস বিজন জংগলে,
নাই কোন বন্ধু আপন স্বজন, কেহই তার দলে,
অন্তরালে নিরব কঠিন ভাষায় গহীনে খোদার সনে সদা কথা বলে,
ভাল লাগে বুঝি তার, চারপাশ নিরব ও বিজন হলে,
কিছু খেজুর কিবা দুখানা রুটি হলেই দিনটা তাদের যেন বেশ ভালোই কেটে যায় চলে ।
সেতো পাগল নন,
মহান আশেকে রাসূল একজন,
কারো ক্ষতি করেনা, প্রশান্ত ও গম্ভীর নিরীহ বদন,  
ছিলেন তাদের অন্যতম তিনিও ঐ একজন,
যারা পেয়েছেন বেহেস্তের বরাদ্দখানা থাকিতে এ দেহে জীবন,
ঐ খোস খবরি হয়েছিল জানা, পেয়েছিলেন যারা ছিলেন নবীর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণ ।
ঘরে একখানা ছেড়া কম্বল,
একটা মাটির কলসীতে রাখা কিছু জল,
আর খেজুর পাতার একখানা পুরাতন বিছানা শুধু এই ছিলযে তাদের সম্বল ।
দুষ্ট ছেলেরা তারে,
বিনা দোষে কেনযে পাথর ছুড়ে মারে,
কিছু বলেনা খানিক দৌড়ে যেন শুধু ছুটে পালাতে চাহে আহারে ।
কষ্ট লাগে ও মমতা হয় যাদের,
তা কভু চোখে পড়িলে এমন কোন ভাল মানুষের,
কেজানে সে কি এক নির্মম নিয়তির ফের,
কোন গুরুজন কিবা মাতাপিতা কি নেই ঐ দুরন্ত ডানপিটে ছেলেদের,
কে কার কত আর খেয়াল রাখিতে পারে, হঠাৎ চোখে পড়িলে ধমক দিয়ে তাড়ায় তাহাদেরে ।


পর্ব – ০২


সে ছিল এক অবাক বিস্ময়,
নবীজীর সনে যার হয়নি কভু সাক্ষাত কিবা পরিচয়,
তবে গোপনে মনে মনেও হয়,
চেনা-জানা ও ভাব বিনিময় সে কথাতো ওরে মিথ্যে নয়,
এই দুজনে, তবে ভাব হয়েছিল কবে কেমনে, দেখা ও কথোপকথন জীবনে আগে কখন ।
তবু নবীজী জানতেন তার নাম-ঠিকানা,
ছিল দুজনারই লুকানো মনে আকুল ঐ সে সাধ ও বাসনা,
না দেখে এমন এক ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের ভালবাসা নাই যার কোন তুলনা,
জীবনে হলেও একবার যেন নয়ন ভরে দুজনে হয় দুজনার, দেখিবেন পুণ্যময় সে পবিত্র বদনখানা ।
শত ছিন্ন তালি দেওয়া যার বসন,
এক সুফি সাধক, মনিষী ও গবেষক এমন,
আর ছিল ভরপুর যার, ছিলেন তিনি হেন অতিশয় দীনজন,
কম কথা বলা ও নিভৃতে বিজনে সবারে এড়িয়ে চলা, তীক্ষ্ণ, সুদক্ষ ও সুপক্ক ঐ দরশন ।
ছিলেন আসলে যিনি,
দরবেশ হযরত ওয়াইস করোনী,
লোকের কাছে আপন সে পরিচয় বহুদিন লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি ।
তার একমাত্র সরদার,
নবীজীর এজাজতে ও হুকুমে দয়াময় আললার,
অপার করুণার, রশি ধরে টেনে অকূল দরিয়ার,
তিনিই হবেন তার পারাপার, বেশুমার সওয়ারী আরোহণ করা মোহাম্মদের ভরা যে তরণী ।
হিজরী ৫৯৪ খৃঃ ইয়েমেন দেশটার,
কারেন শহরে জন্ম হয়েছিল এই মহাসাধক আউলিয়ার,
পিতা-আবদুল্লাহ ও মাতা-বেদোয়ারা,
সংসারে তেমন আর কিছুই ছিলনা তার শুধু অনটন ছাড়া,
কোন আপন জন ও কিবা বিত্ত-ধন হারা,
অন্ধ বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েন, যখন তার বাবা গেলেন মারা ।
দেহ-মনে গোপনে গহীনে অবিরাম তারে ডাকা,  
মাকে নিয়ে লোকালয় ও চেনা মহল ছেড়ে শহরের বাইরে গিয়ে থাকা,
উট চড়ানো ছাড়াও যা মিলে যখন যেথা, তাই ছিলযে তার কাজ আর একমাত্র জীবিকা ।
জাতীয় সত্তায় তিনি ছিলেন আরবী,
নিরবতা ও নিস্তব্ধতা ছিল যেন তার ভাল লাগা নিরবধি,  
পিতা তার পারিবারিক সূত্রে ছিলেন হযরত মুসা (আঃ) এর অনুসারী–একজন ইয়াহুদী ।
সাধারণ লোকের চোখে পাগল,
দেখতে দেহটা ছিল যেন অতিশয় ক্ষিন, রুগ্ন ও দূর্বল,  
আধ্যাত্বিকতার উৎকর্ষে সে ছিল নামাজ, ইবাদত, জিকির ও খোদার ধ্যান সাধনায় সফল ।
ক্ষেতি-চাষ ও বানিজ্য বসতির সফরখানি,
মোহাম্মদের কালেমায় নিয়েছিল খোদায় তারে অতি কাছে টানি,
সুফি ও সুধী সমাজের কাছ থেকে পাওয়া তার উপাধী ছিল - সুলতানুল আশেকে রব্বানী ।
এক স্রষ্টা, এক দাতা ও একই প্রতিপালক আর,
এত রঙ আর চোখ জুড়ানো ও মন ভুলানো শোভা তার এত অপার,
নাই যার কোন অংশীদার, আকাশ, মাটি ও জলাধারে ঘেরা এ বিশাল বাহারি মহাবিশ্বটার ।


পর্ব – ০৩


নয় কোন মিথ্যা, মন্দ, অন্যায় ও ভুল,
ঢিলেঢালা লম্বা কোর্তা ও ছিল তার কাঁধ অবধি চুল,
তপ্ত বালুকার তীক্ষ্ণ পাথরের বুকে বিক্ষত নগ্ন চরণ যুগল হয়নি কভু আকুল,
তবু তার ঐ বাণী, পাঠ, বচন ও সব কাজগুলি অতুল,
ঐ সে সত্যটার যার তরে জনম পার, জীবন চলার ধরণ ও ধারা ছিল পথ ও পাথেয়টার মূল ।
ছিলনা তার বিবি ও সন্তান,
দুচারটা খেজুর বা একখানা রুটি যদিরে কভু কোথাও পান,
কেউ করিলে দান, তাই খেয়ে মা-ছেলের অতিশয় কষ্টের ঐ দিনগুলি হতোযে নিরবে গুজরান ।
তার মা মারা যাবার পর,
নবীজীর সাক্ষাতের লাগি মনে আবার উঠিল ঝড়,
আর কি দেরী সয়, তাই কাল বিলম্ব নয়, সহসা শুরু হলো ঐ সফর,
নবীর ইচ্ছায় ও খোদার হুকুমে ওয়াইস করোনী পাননি তার প্রিয় বন্ধুর ইন্তেকালের খবর ।
নবীজীর প্রতি তার সে টান,
চলতে চলতে যখন পথে এক যুদ্ধের খবর পান,  
স্বর্গের পাগল নেশার, দুরন্ত দামাল ঐ বাসনার ছিল বুঝি তা এক দূর্নিবার আহবান ।
কেজানে শেষে কোনটার,
হয়েছিল তার মহাবিজয় নাকি তা পরাজয় হার,  
তিনি হযরত আলি ইবনে আবি তালেব এর পক্ষে তখনই যুদ্ধে ছুটে যান,  
৬৫৭ খৃঃ ঐ যুদ্ধেই হয়েছিল তার জান কোরবান,  
অবশেষে দূর্বল দেহটা লয়ে লড়াই করে, যুদ্ধের ময়দানে অকাতরে দিয়েছিলেন তিনি প্রাণ ।
জীবদ্দশায় তার,
হয়েছিলযে এমন একবার,
থেকেও তখন সে দূরে শত শত কিলোমিটার,
উহুদের যুদ্ধে নাকি প্রিয় নবীজীর একখানা দন্ত মোবারক শহীদ হবার,
খবর পেয়ে বড়ই আকুল হয় তার দেহ মন-প্রাণ,
কে বুঝে তার ভেদখান, ঐ কষ্টেই তিনি হয়ে পড়েন অতিশয় কাতর, পীড়িত ও পেরেশান ।  
কেমন নজীর ঐ ভালবাসার,
কষ্টের সে খবরে অন্তর পুড়ে যখন ওরে খানখান তার,
তবে নবীজীর ছিল সে কোন দাঁতখানা, শুধু ঐ কারণে তা নিশ্চিত ভাবে না জানার ।
তা কেমন কথা বিশ্বাস করা দায়,
শেষে নিজের বত্রিশখানা দাঁতই জানিনা সে যে কেমনে হায়,
নিজেই নিজ হাতে, একের পর আরেক পাথরের আঘাতে দিয়েছিল সে ফেলে আপনার ।
নবীজীর প্রতি তার ঐ ভালবাসার,
এই প্রিয় সাহাবী পেয়েছিল তার সে উত্তম এক উপহার,
অনেকের সে বিফল আশার,
ওয়াইস করোনীর কাছে সব সাহাবীর ভালবাসার হলো হার,
নবীজী কহেন মোর ওফাতের পরে দিও তারে খোঁজ করে মোর জুব্বাখানি এ অছিয়ত আমার ।  
আল্লাহর হুকুমে ও নবীজীর ইচ্ছায়,
প্রিয় নবীর ওফাতের খবর ওয়াইস করোনীর কাছে নাহি পৌছায়,
তাকে নাকি দেখেছে সহস্র লোকে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন জায়গায়,
তাই বুঝিরে ঘুমিয়ে আছেন তিনি, বিশ্বের সাতটি দেশের দরগায়,  
এই দরবেশের অনেক বুজুর্গী ও কেরামতির কথা নানান সূত্র মতে আজও জানতে পাওয়া যায় ।
হয়েছিল গভীর ভাব রুহানী,
জীবনে নাকি কেউ কোনদিন কারেও কভু দেখেনি,
তবে বলো কেমনে হলো এ গভীর প্রেম জানাজানি,
নবীজী ও তার ভক্ত অনুচর প্রেমিক ও দার্শনিক ঐ ওয়াইস করোনী,
বেহেস্তী নেয়ামত ছিল ঐ ভক্তি, শ্রদ্ধা, বিনয়, বিশ্বাস, আনুগত্য ও নির্ভরতার ঐ ভালবাসাখানি ।


পর্ব – ০৪


বিজনে অতি গোপনে,
মহারাজা আর তার আখেরী নবীর সনে,
এক নগন্য ভক্ত গোলাম ও প্রিয় আশেকের নিরব নিঝুম গহীনে,
অনেক প্রিয় ছিলযে খোদার, তার সিজদা, জিকির ও আরাধনার পুণ্যময় ও পবিত্র হাত দুখানি ।
এলাকায় ও দেশে-বিদেশে হয়,
একজন পাগল রুপেই তার প্রথম প্রকাশ ও পরিচয়,
যার নাই কোন দান,
ছিলনা কোন নছিহত ও বয়ান,
তবু সে কেমনে হলো খোদার দুই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মহান মেহমান,
কেমনে এক বিত্তহীনের তরে, তবে কি ওরে মার সেবা করে, পেলো সে রবের কাছে এত সম্মান ।
প্রিয় নবীজীর ওফাতের পরে,
বিশ্বজোড়া তার ভক্ত উম্মতের একখানা ঘরে,
শুধু একজনই ইনসান ওরে জন্মেছিল এ ভবে শীর্ষস্থান মান যার,
রাখিতে খেয়াল, যারা দোয়ার কাঙাল হয়ে অনাদি কাল ধরে করবে কবরে আহাজারি ও হাহাকার ।
দরবেশ ও অলি, আউলিয়ার,
বাসনা কার মোবারক হাতের ঐ রশিটা ধরার,  
প্রিয় নবীজীর দোয়ায় ও এজাজত এ লভেছিল সে ঐ রহমত আল্লার ।
প্রিয় পূজারি হবার করে অংগীকার,
হতে চায় সে মাটিতে বসে, সাত আকাশের মালিকানা যার একেশ্বরবাদী ঐ কালেমার,
মহাকাল চিরকাল হলে দশা বেহাল, শুধু খাস উম্মতের তরে সুপারিশ করার অধিকার ।
কেজানে সে খোস নসিব হবে কার,
লয়েও বেশী গুনাহ ও কম পুণ্য কামাই পেয়ে খোলা দুয়ার,
সঞ্চয় সম্বল বিহনেও শুনেছি কতজনে, নাকি অনায়াসে হয়ে যাবে তার নিদানের সব ঘাট পার ।
ক্ষমা ও করুণার শাহী দরবার,  
দয়াময় বিধাতার সেইতো বেহেস্তের আগাম পত্রছাড়,
নিমেষে পৌছে যাবে ও সহজে নাজাত পাবে, একবার ঐ পুরস্কার হাছেল হয়েছে যার ।
এক ভয়ংকর বাণী,
অগ্নুৎপাতে বজ্রপাতের সংকেত অশনি,
উপরে নীচে ও আকাশে মাটিতে নিমেষে সব ঝলসে দিবে যখনি ।
তা নাহলে কেনরে এ সফর,
হবে তারা সবে বিধাতার করুণার মোখ ফিরানো পর,
সব পেয়েও সব থেকেও কেন তারা হতভাগা, রলো অন্ধ, বধীর, বেখেয়ালি ও বেখবর ।
কেনরে নাই অন্তরে তার কোন ভয়-ডর,
অ মাটির মানুষ, রঙের ফানুসটা হলে ঠুস যেই মাটিতে ওরে হবে কবর,
যারা আলো ও ভালোর করেনি একখানা বীজতলা, সুজলা সুফলা খোদার জমিনে গড়িতে বাতিঘর ।  
নামেনিতো পথে সবকিছু না জানি,  
মাথা নীঁচু করে মোখ লুকানো যেন সে যে এক দামী অভিমানি,
না তা নহে আবু হকে কহে, এক অচিন গম্ভীর নাই সীমাণা তীর হেন গহীনের গবেষক অনুসন্ধানী ।
যদিও এমন মনে হয়,
তা আসলে ওরে ঠিক নহে নিশ্চয়,
লক্ষ্যটা তার অচেনা অজানা নয়, পথটা হেথা যাবার কিবা মহারাজার কুটুমবাড়ীর ঐ ঠিকানাখানি ।
কখনও হনহন কখনোবা ধীর পায়,
কেজানে হায় দিবানিশি সে যায় কি কাজে কখন কোথায়,
কিছু সে ধরেনা, কোন কথা বলেনা, কারো ক্ষতি করেনা ও কোন দিকে নাহি সে তাকায়,
কেউ জানেনা, খবরও রাখেনা কোন সে অজানায়,
আপন মনে আপন কাজে আপনার পথে গুটিগুটি দূর্বল দুটি পায়, চলছে লয়ে অঁচল দেহটা টানি ।


পর্ব – ০৫


করতে দুনিয়াদারি আখেরাত ছাড়িয়া,
বলেনিতো কোরআন, যাননি নবীজীও বলিয়া,  
নহে তা বলেছেন কোন দরবেশ, খাস পীর কিবা আউলিয়া,
কিবা কারেও শুধু আখেরাত তার জীবন ভর দিনরাত, এ দুনিয়াটারে বাদ দিয়া ।
করে এই দুনিয়াদারি,
তারইতো পরকালের জমিদারি,
মশগুল রবে তার খেদমতে ও তাবেদারি,
অনাচার, অভিমান কিবা কোন দূর্ব্যবহার সব দিয়ে ছাড়ি,
অগণিত ষোড়ষী রুপসী, কার আগে কে আসি সে সুযোগ পায় করবে যেন সে কাড়াকাড়ি ।
সহস্র ফুল ও গানের পাখী আর,
আহা সৌরভ ও রঙের অতুল সে মাতাল বাহার,
ঝর্ণা, টিলা ও ঝিল-বাগানের,
ফটিক জল, ছলছল টলমল কলকল, সমারোহে ঘন সবুজের,
ঝিলমিল চোখ ধাঁধানো মন ভরানো সাতরঙ সে আলোর ঘের,
শ্বেত পাথরের সাজানো ঐ সে বিশাল বাগান-বাড়ী,
কভু আর শোভা দেখা সমাপন হবেনা যার, অসীম দিগন্ত কে কেমনে কবে আর দিবে তার পারি ।
হবেযে তার ওরে হয়েছে যার,
মহারাজ মনিবের দিল খোশ ও রাজি-খুশী একবার,
মহারাজার দান করার রয়েছে ঘোষনা, হবে ও রবে তা চিরস্থায়ী মালিকানার ।
নাই কোন কর-খাজনা,
কভু আর তা ছেড়েও যেতে হবেনা,  
মহান খোদার সাজানো মনের মত করে, তার প্রিয় রাজ-কুটুমের তরে হবে ঐ সে নিজ বাড়ীখানি ।  
কহে তার তহশিলদার,
আমার বারবার তা বলার এত কি দরকার,
মহাজনে ডেকে বলে ওরে, কর আমি যা বলেছি তরে, তোর কাম শুধু ঠিকঠাক হিসাবটা লেখিবার ।
রশি ধরে দিলে টান,
যাবে কই, পাবো সব বকেয়া খতিয়ান,
আর কিছুদিন পরে, বেঁধে এনে ধরে, করিব আমি যা করিবার,
নিশ্চয় যে যার, পাবে তার নায্য শাস্তি ও পুরস্কার,
নাই কোন ছাড়, যতই ধূর্ত ও চতুর কারো কোন পথ নাহিরে যাবেযে বাহিরে, আর কোথাও পালাবার ।
আসা ও যাওয়ার,
ফটকগুলিতে রয়েছে চেকার ও পাহাড়াদার,
দেওয়া-নেওয়া, পাওয়া-নাপাওয়া ও হারাবার,
নেই মরণ ওরে, অনন্ত এ জীবনটা আমি বলছি তোরে নিশ্চিতই দুই দুনিয়ার ।
ভিন্ন ও সুদূর ঐ পথ দুখানা,
সত্য বলছি হলেও কারো কারো আজও তা অজানা ও অচেনা,
বলে খোদায় ওরে কি দোষ আমার, বিদ্যান হয়েও কেন মূর্খ আর রলো তারা চোখ থেকেও কানা ।  
কত বিধান, প্রথা ও কাজ,
ছিলযে শত নিয়ম, অনুশাসন ও রেওয়াজ,
মহাবিশ্বটার, তার একখানা পরিবার, মহান স্রষ্টা, দাতা ও পালক এক বিধাতার ।


পর্ব – ০৬


দান করা খোদার,
সব নেয়ামত ও দানগুলি তার,
আসলে দাদন, কেন বুঝেনা মন, চলোনা এবার,
সব কাজ রেখে এসে কিছুক্ষণ চুপ করে বিজনে বসে মহাজনের ঐ দেনা-পানাটার ।
তাই যদি হয়,
তবেতো নিশ্চয় ওরে তা ভাবনার বিষয়,
সবকিছু চিরতরে হারাবার আগে,
কেজানে কি আছে পরে কার কর্মফলের হিসাবের পাওনা ভাগে,
নিজের হিসাবটা তাই, নিজে করে দেখি ভাই, কার কাছে কত দেনা ও কত পাই,  তা শুধু একবার ।
আবু হকে বলে,
সব মূর্খ পন্ডিত ও বিদ্যান ভেবে দেখো সকলে,
তা বিশ্বাস হলো কার,
কিবা হলোনা তাতে কি আসে যায়বা আমার,
হায়াত, শান্তি ও সম্মানের সব দিনরাত, ধন-জন ও যত সুখ-সম্ভার,
আসলে দুনিয়ার এ সবকিছুই দাতা বিধাতার, মানুষের লাগি দুদিনের তরে তার দেওয়া ধার ।
সে যে এক ব্যবসা,
রাজার জমিনে প্রজায় হাল চষা,
ঠক-জিত, লাভ-ক্ষতির চাই হিসাবটা খাসা,
কথা দেওয়া কথা, ঠিক না থাকিলে তা কিসের ভালবাসা,
কি বেঁচা-কেনা ও আয়-ব্যয়, মহাজনের দাদনের কি বলো ছিলনা কোন আশা ।
চুক্তির শর্ত ও অংগীকার,
কে খেলাপী অপরাধী আর তা মনে আছে কার,
কথা ছিল যার, থাকা, খাওয়া-পরা ও সব প্রয়োজন দেওয়া হবে ঠিকঠাকইতো চলছে তার ।
বিনিময়ে প্রতিদানে,
হবে বানিজ্য বসতি ও ক্ষেতি-চাষ রাজার জমিনে,
আমার লাভ কই সারাদিন বেঁচে-কিনে,
শুনেছ কি কোনখানে, কি রাজা কি প্রজা কেউ কি বলো তা কভু মানে তার কোন লাভ বিনে ।
অনেক কাজ ও অনেক দায়,
আজও লেখা রয়েছে সব যার শাহী খাস মহলের খাতায়,
অস্বীকার করে কি আর মুক্তি পাওয়া যায়,
কি উপায় তার বকেয়া ঋন জমে জমে সুদাসলে এখন, হয়েছে যখন ওরে এক বিশাল পাহাড় ।  
হয়েছে তা অতিশয় মাথাভারী,
যা এখন আর না বহিতে আমি, না মাথা হতে ফেলিতে পারি,
দিনে দিনে শেষে একদিন,
সব মিলে ভুলে যাওয়া ও ভুলে থাকা ঐ সমুদয় ঋন,
সহেনা আকাশ ও বহেনা জমিন,
সে ভাবনায় যারা পেরেশান ও অসহায় আর যাদের বদন মলিন, কি উপায় তাদের মুক্তি পাওয়ার ।
যদিও আমি গুনাহগার,
হে খোদা রহমান ও রাহিম শাহী দরবারে তোমার,
ক্ষমা করে দাওগো সব, গুনাহগুলি তাদের সবার,
ওয়াইস করোনী আউলিয়ার করছি পেশ সবিনয় আকুল এ আরজি ও আকুতির মুনাজাত আমার ।


পর্ব – ০৭


ঘরে ও বাহিরে ভয় কি ভাবনা তার,
হাওয়া ও জলের যানে ঝড়-তুফানের সব নিদানে যার,
ঐ সফরে বলো আর কি দরকার,
বৈঠা-হাল, মাস্তুল, গলই, পাটাতন-ছই, পাল, গুন বা দাড়,
যদি সংগে রহে ও নিজেই বহে সব ভার, সপ্ত আকাশ, সাত জমিন ও সাত সাগরের একক কর্ণধার ।
নাই কোন আহাজারি কিবা হাহাকার,
দয়াময় আল্লাহর করুণা ও দয়ালু নবীজীর দাওয়াতের দুয়ার,
যাদের সেরা হবার দাম, তোমার যত এমন গোলাম, ভক্ত প্রিয় উম্মত হাবীব এ খোদার ।
কবুল করো তব শাহী হেদায়াত,
নসিবে যেন হয়, তোমার করুণার ক্ষমা ও নবীজীর শাফায়াত,
দয়া করে ঐ সবারে করো পার,
আমার নয়, বরকতে ঐ মোবারক দোয়ার,
সারা জাহানের চিরকালের নবীজীর প্রিয় সকল উম্মতের সরদার ।
তা যাই হোক,
যা বলে বলুক সহস্র লোক,
হয়েছিল সে তার স্রষ্টা ও পালক বিধাতার,
আর অদেখা অজানা তার সকল সত্যগুলির জড়ো করা সমাহার, এক সফল সাধক পূজারি ।
পায়ে দলে, হাতে ঠেলে যত অন্ধকার,
আলো ছড়ানো ও ভালোয় ভরানো তার, দুস্তর অনন্ত ঐ পথটার,
ঐ দুটি হাত তুমি ফিরাতে পারনি যার,
বিজয়ী বীর মুসাফির জনাবে হযরত ওয়াইস করোনী আউলিয়ার,
কি করি এখন হায় কি উপায় তার, সবকিছু আজিকে আমার যেন হয়েছে নিলামের যোগাড় ।
জানিনা সে দুনিয়াদারি,
দিয়েছিল কেন বা কেমনে কবে ছাড়ি,
পায়নি বিত্ত-ধন, বুঝি তাই কি তার মন নিয়তির কাছে গিয়ে হারি,
এমনতো ওরে নয়, তা কেমনে জানতে পারি,
কেউ করে জুলুম ও অত্যাচার টাকা-কড়ি ও ঘর-বাড়ী তার, সব সুখ-ধন-মান নিয়েছে কাড়ি ।
আমার সালাম ও দুরুদ প্রিয় নবীজী আর,
আশেকে রাসুল ও তার উম্মতের কূল ভক্ত অনুচর ও দোসর দুই দুনিয়ার,
আমিযে এক অধম গুনাহগার,
হে খোদা এ ছাড়া আর, নাইযে আমার আর তেমন কিছুই দেবার,
তাই এ সামাণ্য হাদিয়ায়ে তোহফা আমার,
দয়া করে তব করুণা ও রহমতের শান্তি অপার পৌছে দিও পবিত্র রুহে পাক এ এই দুজনার ।  
প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ, আজীবন,
যদিরে হঠাৎ কভু ওরে হয়ে যায় কারো মরণ,
তাই এখুনি ভাই, বেলা বেশী নাই জীবন থেকে নিতে হবে শিক্ষা,
সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয় কথা মিথ্যে নয় হতেও পারে তা বিধাতার পরীক্ষা ।
নদীর এ পার ভেংগে গড়ে তার ঐ পার,
সাগরের বুকে বানিয়ে বালুচর নতুন দেশ গড়ে যখন ইচ্ছে হয় তার,
কেউ বারবার চেয়েও পায়না সামাণ্য আর,
কেউ না চেয়ে বিনা ক্লেশে অনায়াসে পেয়ে যায় এক পাহাড়,
কি ভেদ বলো তার, কি দোষইবা দেবে কার,
ভাংগা-গড়া, করা ছারখার, নিরন্তর এ খেলা চিরকাল সারাবেলা মহারাজার দেওয়া-নেওয়ার ।


পর্ব – ০৮


কেউ করে বিলাপ ও হাহাকার হুতাশ,
ফেলে রেখে দিয়ে, সব তার কাজগুলি একরাশ,
মোখ কালো ও মন ভার, শুয়ে বসে থাকে ফিরে অন্যপাশ,
হেন বড়ই কাতর ও উদাস যেন নিরবে নির্জনে করিতে চাহে সে একা বাস ।
কারো বসন্ত নাই সুখের অন্ত, কারো সর্বনাশ,
কেউ কম পায় কম পরে-খায়, এমনি করে তার দিন যায় বারমাস,
যে দেয় সে’ই নেয়, কেনরে মন এতই হতাশ,
পারেনা সে কোনটা আর, বলো কি নাই কাছে তার, সব জানে বিশ্বাসী দাস,
আগুনে পুড়িলেতো ভিটাখানি তবু পায়, কি থাকে বলো হায় রাক্ষুসে নদী এসে তা করিলে গ্রাস ।
পথের পাশেই পড়ে ঘুমায়,
রাস্তায় কুড়িয়ে ও থালা পেতে চেয়ে খায়,    
দেখেছি জীবনে এমন কত অসহায় দীনভিখারী,
নাই কেহ আপন, মাথা গোঁজার ঠাই, যার কোন ঠিকানা ও ঘরবাড়ী,
হারায় কত রাজায় মুকুট ও সিংহাসন, শেষে পালিয়ে চলে যায় প্রাসাদ ও রাজ্য ছাড়ি ।
কেউবা পায় ঝলমলে প্রাসাদের শীতল ছায়া,
পাইক-পেয়াদা, খানাসামা, বাবুর্চি, দাড়োয়ান, বাইজী ও বাঁদী-আয়া,
চাকর-নফর, শত চামচা, চাটুকার ও অনুচর, গাড়োয়ান, গাড়িয়াল, মালী ও রায়ত সহ জমিদারী ।  
সে’ইতো কাড়ে, দিতে যে পারে, অতি দয়ালু মহান সে দাতা,
ধন-জন, লাভ-ক্ষতি ও জীবন-মরণ সবই কপালের লিখন, তার কাছেই দেনা-পানার হিসাবের খাতা,
লাভ-ক্ষতির নাই ভাবনা ও খবর,
কি বুঝে কোন আশায় কেউবা আজীবন সারাটি বছর,
বীজতলায় চারা লাগায়, জমিনে ফসল ফলায়, সোনাফলা মাটিতে জমিদারের ইচ্ছায় এ ক্ষেতি-চাষ ।
নিত্য সারাক্ষণ এই করিয়া,
ফেলে দিয়ে অকূলে, টেনে তুলে ধরিয়া,
কারেও দেয় কারেও দেয়না, আবার কারোটা নেয় সে কাড়িয়া ।
বলেন ওয়াইস করোনী আউলিয়া,
দুনিয়ার মানুষে কেনরে দেখেনা একটু ভাবিয়া,  
লয়ে মাথাভারী দায়, হবে কি উপায় হাল শেষে হলে কাঙাল দেউলিয়া,
কোন সে ভাবে কিবা ভুলে তারা রয়েছে ভুলিয়া,
হবে কি কসুর বা ভুলের মাসুল ও সব সাজা মাফ, নিবেন কি রাজায় তুলিয়া সে হুলিয়া ।
জীবন নহে থেমে রয় একদা ফুরিয়ে যায়,
ভিখারী ও বাদশাহ সবাই তার স্বজন ও বিত্ত-ধন মরণে সবই হারায়,
নিমেষের তরে দিনরাত, কেজানে কজনে কেবা ভাবে লয়ে আখেরাত ও বেহেস্ত খুঁজে বেড়ায় ।
তামাসা কিবা যাচাই করে,
কে আছে কে নাই তার ভক্তি, বিনয় ও বশ্যতার পূঁজার ঘরে,
ক্ষুব্ধ বিষন্ন মনে গোলামের পাশে কিবা দূর আকাশে চুপচাপ খোদায় দেখিছেন গোপনে বসিয়া ।
কেউ একেবারে ভেংগে পড়ে,
বাহিরে ও ঘরে যেন হায় গেছে সে জিয়নে মরে,  
আগুন, পবন, মাটি ও জলের সব আপদ ও নিদানে এই ভুতলে সবরে,  
চলো যাই দেখি হেথা কি পাই, ওয়াইস করোনীর দেখানো পথ ও শিখানো মন্ত্রের ঐ রশিটা ধরে ।
পেয়ে না পেয়ে কিবা সব হারিয়ে,
শূন্যের উপর বিশাল বিজন মরুভূমিতে একা দাড়িয়ে,
ভেবে দুদিনের এই পরবাস,
ঝেড়ে ফেলে লোভমোহ হিংসা ক্রোধ আবেগ ও উচ্ছাস,
শেষ হলে তার শত অপচয়, উপহাস আর অঢেল বিনোদন ও মজার ভোগ-বিলাস,  
যখন নিবে ধরে সব শাস্তি পুরস্কার পাবে পরে, কজন নিজেরে স্বীকার করে তার নগণ্য গোলাম দাস ।
চারপাশে আর মাথার উপর,
স্রষ্টা, পালক, দাতা ও রক্ষক ঐ মহান প্রভু একেশ্বর,
শুধু তারা ছাড়া জুলুমকারী আপন অন্তর ও বিবেকের উপর, এ জগতে আর কেউ নাহি তার পর ।
হয়ে রয় তার আমরণ অনুচর,
লোকের অন্তরে বেধে অদৃশ্য একখানা অণু-ঘর,
নিরবে অজানায়, কোটি মূর্খ ও বোঁকায় নাহি পায় কভু সে খবর,
এ মহাবিশ্বটার মহারাজার, সপ্ত আকাশে যার প্রাসাদ ও আবাস আর আসন ও দপ্তর ।
প্রতিদিন বাড়ে ঋন, বারোমাস,
প্রতিক্ষণ আমরণ এ দেহে বহে যে নিঃস্বাস
না দেখে রয়েছে যার, এ বয়ানের সব কথায় অপার বিশ্বাস,
বেশী পাওয়ার আশ, চুপচাপ সে গোপনে, স্থীর প্রসন্ন বদনে, নিরবে মেনে লয় সব সয় করিতে পাশ ।