(এাট তৃতীয় নয়নে দেখা একটি জীবন দরশনমূলক কবিতা, বিচিত্র রঙে সাজানো এ বিশ্বজগত এবং জীবনের শাশ্বত ও সার্বজনীন রুপ এর কলম-চিত্র যা হয়তোবা সকলের দৃষ্টিতে একই রকম না’ও হতে পারে)

পর্ব-০১


কাকের বাসায় জন্ম লভে ও ধীরেধীরে বেড়ে উঠে কুকিলের ছানা ॥
আহারে দরদী মায়,
ছানারে তার পেটভরে খাওয়ায়,
সোহাগে বাছা পরম সুখে মায়ের বুকেতে ঘুমায়,
হঠাৎ বুঝিল একদিন, বুঝিরে মায় এবার মেরে তাড়াতে চায়,
ভাবে কি কারণ তার, মনে কষ্টের হাহাকার, কেনরে মায় আর আমারে চায়না ॥  
বুঝেনা পালক মায়,
কোন ধোকায় পড়ে তার দিন যায়,
দূর হতে তা দেখে আপন মায় কিযে সুখ ও মজা পায়,
যখন মায়ের ভুল ভাংগে হায়,
ছানাগুলি নয়যে তার, যখন ওরে তা জানা হয়ে যায়,
আহা, ছেদ পড়ে যেন মায়ের মায়ায়, বুঝি বন্ধ হলো মায়ের হাতের মজার খানা ॥  
ওরে বাঁচিতে হলে,
অবুঝ শিশুটার মন তারে বলে,
পালানো ছাড়া এবার, বুঝি উপায় নাহি আর, একথা পরিস্কার তার হয়েছে জানা ॥  
ভয়কি আর আহারে,
বিশাল বড় দুনিয়া ডাকে তাহারে,
কতনা খাবার আর সাজানো হাজার রঙের বাহারে,
এখনতো সে ওরে উড়তেই পারে,
মা নহে তবু, এতদিন ধরে যে খাওয়ালো তারে,
সেতো সকলই পারে, কেউতো কভু নাহি হারে, বরং জিতে যায়, পেলে স্রষ্টার সামাণ্য করুণা ॥  
এডালে ওডালে গাছে গাছে,
অনেক দূরে ভিন্ন বনে, নয়রে শুধু কাছে কাছে,
দুই পা আর এই ডানা দুখানায় যতক্ষণ তার বিধাতার দেওয়া বল আছে,
যেথা খুশী উড়ে যেতে, দিনভর ঘুরে ফিরে বেড়াতে, আর নেইরে তার কোন মানা ॥
শুধু দুঃক্ষটা এই,
মনখুলে কথা বলার জায়গাটা নেই,
মাবাবার দেখা পেলাম না, এ জীবনে তাদের সনে বুঝি আর আমার হলোনা চেনাজানা ॥    
অনাহারে মোর কাটেনিতো একদিন,
কে সে দয়ালু এমন, কেমনে শোধিব কবে আমি তার ঋন,
দুনিয়া জোড়া তার,
জানি রয়েছে এক বিশাল পোষ্য পরিবার,
সবারে সে বারোমজার খাবার খাওয়ায়, তাতেই আনন্দ পায়, নিজে কভু কিছুই খায়না ॥  


পর্ব-০২


কই থাকে ঐ মহান মহাজন,
আর বাড়ী কই তার, সে দেখতে কেমন,
প্রভু মনিব আর এই মহাবিশ্বটার মালিক ও রাজন,
সংগে থাকে, আগলে রাখে, তবে কেন রহে সে করে পলায়ন,
একবার বেড়াতে যেতাম, যদিরে আমি খুঁজে পেতাম, ঠিকঠাক তার ঠিকানা ॥
মাটিতে সোনাফলা,
এমন একখান সোনার বীজতলা,
আলো ও ভালোর ক্ষেতিচাষে এক চির শান্তির বসবাস,
যারা সত্য বলে, নিয়ম ও বিধানে চলে, অদেখা রাজায় ষোলআনা বিশ্বাস,
যারা কখনও আর অমানুষ হবেনা, এমন একখান মানুষ গড়ার বিশাল কারখানা ॥  
কত বড় খোলা নীল আকাশ,
মহারাজার সবুজ বনানী হাজার ফুল ও ফলের চাষ,
তার ভোগ-দখলে আজীবন বারোমাস,
আসা-যাওয়ার রয়েছে পোষ্য তার লক্ষ জীব আর কোটি গোলাম দাস,
হয়ে নিরব দেখিছে সব, অন্তরে যার অর্ন্তযামী ফিট করে দিয়েছেন দামী একখানা আয়না ॥
চলরে হেথা, আমার সংগে যাবি,
ভাগ্যটা তোর ভাল হলে হয়ত তার দেখা’ও পাবি,
ওরে, যখন যেমন চাহে তোর মন, বারোমাস তেরোমজার খানা খাবি,
বলনা ভয়কি আর কিসের ভাবনা, এখনতো ওরে তোর গজেছে ডানা ॥  
কই আমি এত খুঁজিলাম,
পেলামনাতো আজও খুঁজে তার ধাম,
এত পন্ডিত, কারো কাছে নাহি পেলাম, তার আসল পরিচয় ও নাম,
উড়েউড়ে ঘুরেঘুরে কাছে ও দূরে ক্লান্ত হয়েছে আমার এই দুখানা পাখনা ॥  
ওরে অবুঝ বোঁকা,
এটাও এক মজার মোহ ধোকা,
দারুণ সে খেলা,
যাদুর আবেশ ছোয়ায় কেটে যায় সারাবেলা,
ওরে মন তার দেখা,
বিজনে বসে থেকেও সারাদিন একা,
জীবন কেটে যায় তবু কেউ পায়, কেউ একবারও পায়না দোচোখে যার দেয়া রয়েছে ঢাকনা ॥
মনিবে গোলামেরে কয় ইস,
ওরে বোঁকা মন, তুই ওরে যেখানে থাকিস,
আর তোর প্রিয় সব ধন, গোপনে তুই যেথা লুকিয়ে রাখিস,
ওটাইতো আমার ঘর আমার বাড়ী,
আমি কি ওরে কভু তোরে, ছেড়ে যেতে পারি,
বলো নাহলে বহিতে কেমনে, হলে তা সাত জমিন সমান ভারি,
আমার জলে ধোয়া সত্তা আর, মিশে বাতাসে হয়ে গিয়ে একাকার দিয়েছি উজারি,
অদেখায় ঢেলে তব সারা গায়, শুধু সেইতো পায়, করে গবেষণ পেলে দরশন হয়েছে যার সমাপন সাধনা ॥  


পর্ব-০৩


কালো পাখী কুকিলের,
কোন বাসা নেই কেন তার নিজের,
সে কি বিধাতার সৃজন বাহার, নাকি কোন ভাগ্যের ফের,
নেই নিজের একটা ঘর,
এত বিশাল বনানী সবুজে অনিন্দ্য সুন্দর,
বলো তবে বিধাতা কি ছিল তার পর, কেন শিখায়নি তারে আপন ঘর নিবিড় শান্তির একটা বাসা বোনা ॥
কাকেরে বলে সবে কুৎসিত ও ধূর্ত-চতুর,
যখন ডাকে কা কা লোকে বলে আল্লারে ডাক, ঢিল ছুড়ে করে দূরদূর,
তার কা কা রবে,
সদা ক্ষিপ্ত ও বিরক্ত হয় দেখি সবে,
বেড়ে যায় যেন মনের পেরেশানি তাড়না, তা কেন মনেহয় যেন জ্বালাময় এক মস্ত বিড়ম্বনা ॥    
ডিম পারিব প্রভু কোথা যাই,
ছানাগুলির কেমনে কোথায় বলো হবে ঠাই,
তোমার এত বড় দুনিয়ায়, তাদের তরে কি একটু জায়গা নাই,
মম আরজি-বাসনা পূরাও, হে প্রভু মাফ করে দাও মোর গুনাহ, আমিতো নিত্য ভোরে উঠে করি তব পূঁজা-অর্চনা ॥  
কেন এত হাহাকার,
অ কুকিল সেকি নহে বিশাল প্রাপ্তি তোমার,
এত কালো তুমি, কেউ তবু কুৎসিত বলেনা ও দূরদূর করেনা,
কত বিরহী বিরহিণী আপন মনে, বসে দূর বনে তব গান শোনে, যেন তবু মন ভরেনা,
যারা ধৈর্য্য ধরেনা, মোর চরণে পড়ে করেনা করুণা কামনা, কেমনে তাদের হবে মম সৃজন বাহার ধারণা ॥
তব কন্ঠগুনে শুনিতে বুঝি লাগে তা এত মধুর,
শ্রবণ ও হৃদয় যেন শীতল হয়, মোহ আবেশে ভরপূর,  
কু – মানে মন্দ তাই হতে পারতো, হয়ে যা ওরে তুই আমা হতে দূর,
ঐ কন্ঠ মধুর, তোমার জানোকি কার দান, দুনিয়ার বাড়ীতে কদিনের মুসাফির মেহমান, তা আছে কি জানা ॥  
তাই বুঝি হয়েছিল কাকের বংশের যম,
কাক ও কুকিলের ডিম ও ছানাগুলি দেখতে হয়, প্রায় একই রকম,
চতুর কাকের চেয়েও কুকিলের, কুট-কৌশল হয়েছিল জানা বেশী ঢের, তা আমার জানা ছিলনা  ॥
দুষ্ট বুদ্ধির সেই সুবাদে,
হেরে গিয়ে বেচারা কাক পড়ে ফাঁদে,
কুকিলকে দেখলেই তাই মারতে ছুটে যায় ক্ষোভে ও বিষাদে,
কুকিল এসে কাকের বাসা থেকে, ডিমগুলি তার দিয়ে ফেলে,
ডিম পেরে রেখে হেথা, তড়িঘড়ি চম্পট দেয় কোন সুদূর বনে পাখনা মেলে,
অনেক পরে তা বুঝতে পেরে, অসহায় কাকে বসে হায় নিরবে আফসোস করে আর কাঁদে,
কেমনেবা তা মেনে লয়, কারে সে ঐ দুঃক্ষটা কয়, যায়কি কুকিলের কাছে তার এ পরাজয় ও হারমানা ॥
কত বিত্তশালী, বিদ্যান ও পন্ডিত,
দেখি হায় তাদের ঐ পথটা যেন বাঁকা ও বিপরীত,
তবে জানিনা কবে, আহা তারা সবে, ফিরে পাবে ঐ সঠিক সম্বিত,
করছি ভয় শেষে না এমন হয়, চতুর কাকের মতই হয় তাদের হার, না হয়ে জিত,
হয়না হবেনা তাদের,
চারপাশে মিথ্যা, মন্দ ও ভুলের ঘের,
জীবনের মজার ভেদগুলি জানা, এ জগতে যারা আজও পথহারা, চোখ থেকেও যেন রয়েছে কানা ॥  


  


রচয়িতা/লেখক/কবি


আবু হক মুসাফির
(আবু সাইয়িদ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক)
সেল ফোন-০১৬২৭৮ ৯৪৭৯৭/০১৩০১৭ ১৯৫৫৩
Email-abuhaawk@ymail.com   &  dactarkhana24@gmail.com