একখানা পূরাতন চিটচিটে আঠালো অঁচল ঘানী ॥
ছিল একটাই বুড়ো বলদ,
কেজানে কোথা কার গোপন গলদ,
নাই এ কাজ ও তার মনিবের হুকুমের রদ,
সংসার পরিবার বেঁচে থাকার রস ও জীবিকার সব রশদ,
করেছিলেম আমি তার কি ক্ষতি, নির্মম নিয়তি কেন তারে করিল বধ,
যতই কম হোক তার মদদ, সব নিদান ঝড় কষ্টকর বিধির বিধান সবাই নিতে হয়যে মানি ॥
তা কি কভূ হয়,
কেউ কারো কষ্টের ভাগিদার নয়,
এ জগতে বলো কে কার বোঝাটা টেনে তুলে লয়,
জীবনের জেলখানার আমি এক অক্ষম দূর্বল অসহায় কয়েদি,
ভাংগা তরী বলে ডুবোডুবো হয় জলে, তাই বলেকি পার হতে হবেনা নদী,
বলে তা ভাগ্যলেখা চুপচাপ বসে দেখা, ওরে বৈঠা পাল বড়ই পূরাতন বেহাল হয়ও যদি,
ভেবে সেই ভাবনা শোকে, কি জানি কি বলবে লোকে যদি তা হয়ে যায় জানাজানি ॥
আমিযে আর পারিনা,
তবুও বিবেকে বাঁধে করিতে মানা,
কি করা বলো তাই,
একটা বলদ কিনার টাকা যখন নাই,
সবার মোখের খাবার,
নিত্য মোদেরে করিতে যখন হয় যোগার,
কেমন হয় তাহলে,
কাছে এসে ফিসফিস করে বলে,
আঁখিদুটি যেন তার ছলছলে তুমি আমি দুজনে মিশেমিলে যদি এই ঘানীটা টানি ॥
দেখেছি আমি শত রুপে তাহারে,
মোহনীয় মায়াময়, যেন ভোলার মত নয় হেন বাহারে,  
কত কিম্ভূত কিমাকার কূৎসিত কদাকার ভয়ংকর বিভৎস, ঘূরে দ্বারেদ্বারে আহারে,
একদিন হয়তবা তার স্মৃতি মুছে যাবে, ঐ জীবনটারে আমি যেটুকু যেভাবে জানি ॥
কোথাও পথটা দারুন পিছল,
কখনওবা চড়াই উৎড়াই অসমতল,
কখনও থইথই টলমল, হাবুডুবু অঠাই জল,
ঘা লাগে বলে, থেমেথেমে চলে, মাঝেমাঝে তা হয় অঁচল,
কুলোর বলদের দল, তাছাড়া আর কি করিবে বল অবিরাম তবু টানছে ঘানী ॥
সোনার হরিণটা খুঁজে কেউ পায় কেউ পায়না,
তবু কালো টাকায়, সবায়তো ওরে আর বড় হতে চায়না,
নেই সুখের সখ, ভোগ বিলাসের রোগ, তেমন কোন তার দামী বায়না,
ডালভাতে তুষ্ট, মাথা ও মনটা হয়না গরম ও দুষ্ট, নাই কোন তাড়না ও পেরেশানি ॥
কে নিলো খৈল কই গেলো তেল,
না বুঝে না ভেবে না খুঁজে সুখপাখীটা এ জীবনটা গেল,
চতুর কাকের কাছে, তাতে বলো কি লাভ আছে, যেমন গাছে পাঁকা বেল,
কালো কুকিল বোঁকা, তার কাছে খেয়ে ধোকা, কি আর করা তাই সেও লয় হার মানি ॥
কি আমি আহারে বলব কারে,
আপন ঘরে যেন বন্দি সবাই বিদ্যা ও ঞ্জানের ভারে,
দেখেছি পড়েছি শিখেছি অগনিত কত শত,
জেনেছি সামান্য তাই এখনও রয়েছে অনেক বাকী জানার মত,
আলো আর ভালো খোঁজে কয়জনা,
বড় মানূষ নয়, ধনে আর ক্ষমতায় সবার বড় হবার বাসনা,
সেতো দোষের নয়, সুখময় স্বপ্ন আশা আর নিবিড় ভালবাসার কিছু জালবোনা,
পারেনা যেন পাহাড় গড়ে, কুড়িয়ে কিবা হরণ করে, জগতের সব ধন জড়ো করে আনি ॥
তুচ্ছ ক্ষুদ্র সামান্য কাজ এ জগতে পায়না কদর ও মূল্যায়ন,
ছিল অনেক সাধ অদৃশ্য নানা বাঁধ, ছিল মন তাই বুঝি কোন বড় কাজ হয়নি সাধন,
শুধু দীনতার জন্য,
আমি হয়ে রলেম অতি নগন্য,
সেইতো আমার এনেছে হার, হতে পারিনি ধন্য,
এ সমাজ নেই চক্ষু নেই লাজ ধনে যাদের রঙ ও রুপের এ বাহারি সাজ সাঁঝের বেলার পঁচা পণ্য,
দীনজনের এক ফোটা ঘাম,
দামী হয়েও যারা হারিয়েছে তার আসল দাম,
সবকিছু যার কমকম, মহারাজার এক নগন্য অধম খেলাপী গোলাম,
এখন না বুঝিলেও বুঝিবে হারালে সকল সংগী সাম,
পরম আপনজন হবে পর, জমিজিরাত ভিটা বাড়ীঘর, সব দান সব ধন যখন হবে নিলাম,
নিস্প্রাণ এ দেহখান, করে খনিতে তেল দান আর খেতে কুড়েকুড়ে চেপে ধরে চূষেচূষে ভিজামাটি লবে টানি ॥
এক মুসাফির যাযাবর,
না দিয়ে মহারাজার বকেয়া খাজনা কর,
হারিয়ে সব ধন আপনজন হয়ে রাজারও অবাধ্য প্রজা ঘৃনিত পর,
দিনেদিনে বহুদিন, সুদাসলে বেড়েছে ঋন, কি লয়ে তবে শেষে হবে শেষ নিন্দিত এ সফর,
রয়েছ ভূলে দেখনা খুলে জীবনের আরশিখানা,
খুঁজে যদি পাও গুরু মরনে যে হয় শুরু, বকেয়া হিসাবখানা কভূ শেষ হয়ে যায়না,
নব নব অধ্যায় ও ধাপে,
নতূন দেশে পাপ পূন্যের নিরিখ ও পরিমাপে,
মহাকাল কেজানে কার হবে কেমন হাল, চলবে টানিটানি নিয়ে অসার এ জীবনখানি ॥
যেজন সুবোধ সুজন,
প্রসারিত তার মন ও তৃতীয় নয়ন,
সাগরের মত সুগভীর অসীম ও বিশাল আকাশের মতন,
সোহাগ ভরে কত যতন করে বিধাতায় ওরে করেছে দুনিয়ায় মানূষ সৃজন,
ভক্তি শ্রদ্ধা ও বিনয় প্রদর্শন,
বিশ্বাসে নির্ভরতায় পূঁজন ও সমর্পন,
সদা সুবচন, চলন সম্বোধন স্বভাব আচরণ,
করে কিছু দান, বাহিরে ও ঘরে কত দয়া বিতরণ,
বিধাতায় চায় সকলে সবায় হয় যেন এমনই সুশোভন,
সকল গোলাম তার শক্তি ও করুণা গাহে,
মানূষের মাঝে পেতে বাস হয়কি নাহয় বিশ্বাস বিধাতায় চাহে,
আলোকিত করা তীক্ষ্ণ আলোয় ভরা, ঐ দুটি চোখ করে অন্বেষন,
যে দীপ্ত শিখায় সাথি হয় পথ দেখায় ভরায় দেহমন আলোক চীরন্তন,
পথে পথে, চড়ে হাওয়াই রথে, খুঁজে বেড়ায় কে আছে কোথায় এমন,
লুকানো মনে কষ্ট বেদন, ন্বিঃস্ব অসহায় জন, জল নেই চোখে গহীনে ক্রন্দন,
সপ্ত আকাশ সাগর জমিনের মালিক, চীর সত্য সঠিক সব তার অপার মহিমার বাণী ॥
এইতো জীবন,
কেউ কহে হয় সব শেষ হলে মরন,
আসলে মরন বলে কিছু নেই ওহে পন্ডিতগন রাখিও স্বরণ,
সেতো নতুন বেশে নতুন দেশে রাজ আদেশে করা এক জীবনের অনেক কাজ অনেক দায় অনেক ভ্রমন,
যাবার আগে শূণ্যে একটা প্রাসাদ গড়া,
আপন পর সবার তরে তাইতো ওরে সামাণ্য কিছু করা,
জীবন মানে কজনে জানে,
সবে পন্ডিত তাই বুঝি তা কেহ নাহি মানে,
ভোগের লোভ মোহ করে ত্যাগ ও বিসর্জন, অল্প বিসর্জনে বেশী উপার্জন সেইতো কোরবানি ॥
সকল জীবের শ্রেষ্ঠ, মানূষের এই মান,
যে মহাজন করেছেন সৃজন, তিনিই তাহা করেছেন দান,
হতে মহান মানূষ নামের অমানূষেরা মানূষ হও,
প্রকৃতি ও জীবজানোয়ার সবকিছু আর ছোটবড় সবার থেকে শিক্ষা লও,
ছাড়ো বিদ্যা ধন ও ক্ষমতার অহংকার, আর করোনা নিজের অপমান ও জাতের মানহানী ॥