কই তুমি, অ আমার মাটির হানকি ॥
পেট ভরে খেতাম পান্তা ভাত,
করেছি কত কাম, কত শান্তিতে কাটাতাম রাত,
কই গেলো সেই সময়গুলি সেই দিন,
অজানায় দিনে দিনে যেন বাড়িল সবার ঋন,
বদলে সময়, লভেছে আজিকে সে আপন নব পরিচয়, হয়ে গেছে সানকি ॥
তারপর বহুদিন চলে গেছে শেষে,
জায়গা নিলো এ দেশে টিনের বাসন এসে,
ধাপে ধাপে এলো সিলভার কিবা এ্যলুমিনিয়াম,
মাটির তৈজস, হারালো তার আপনার প্রাচীন যশ, মরন দশা যার পরিনাম,
ষ্টেনলেস ষ্টিল ও স্বচ্ছ কাঁচ, বদলে জাত বদলে ধাঁচ, বেড়েছে সুনাম বেড়েছে কত দাম,
চীনামাটি কিবা সিরামিক ও প্লষ্টিক দেখালো নতূন দিক, পড়লো সাড়া পড়লো হিড়িক পেলো কত নাম,
কেজানে আর নতূন কি দেখার, কালের কাছে আর কি শেখার রয়েছে বাকী ॥
আহা মাটির বাসন আর মাটির হাড়ি,
সেই কবে ছেড়ে গেছে পল্লীর ছোটবড় সব বাড়ী,
গ্রামের বাড়ী গিয়ে ভাত খেয়ে সেই আগের স্বাদ মজা আর পান কি ॥
মা দিয়েছেন পারি,
সেই কবেই এসেছি ছাড়ি,
হাজার স্বৃতির আমার গাঁয়ের বাড়ী,  
পিড়িতে বসে খানা আর মাটির বাসন ও হাড়ি,
কড়কড়ে ভাত শীতের সকালে জমে থাকা গুড়া মাছের তরকারি,
নাড়ার জ্বালানীর তিন চোখের মাটির চূলা,
এখানে ওখানে ছড়ানো ছিটানো খাড়ি ডালা কূলা,
ঘাটার জমির শিম টমেটু লতি ছড়া কচূ আর সাদা মূলা,
উঠানে ও ঘরে খেড়ের ও ধানের টাল,
মটকিতে রাখা ঢেকি ছাটা আউষ ধানের চাল,
তিন বেলায়ই গরম ভাত মাছ দূধ টক কিবা ডাল,
মাঝ রাতে উঠে মইয়াতে জুড়েছে মাড়া না হতে সকাল,
ঐ গরু নিয়েই যেতে হবে তিন গ্রাম ফেলে পূবের চকে হাল,
ভিতর বাড়ীতে বাহির বাড়ীতে ভিন্ন জমির অন্য কত ধানের পাড়া,
কাজ আর কাজ কি সকাল কি দূপূর কি সন্ধা কোন কথা নেই কাজ ছাড়া,
নাড়ি বাঁধা যাদের পল্লী মাটির মূলে, সে স্মৃতি তারা ভূলে যেতে চান কি ॥
বার মাসে তের সবজি শুধু মাছ দূধ ভাতে বসবাস,
কেউ ভাবেনি কে করিবে এই আলো ও ভালোর চাষ,
যারা না দেখেছে রিকাবী কেমনে চিনিবে ওসব তারা আর করিবে তাহা বিশ্বাস,
লোকান্তরে নিমকদানী, সেই দস্তরখান আর নেই পানেরবাটা পিতলের কলসী চিলমচি ও বড় পানির গ্লাস,
বেড়েছে ধন ছোট হয়ে গেছে মানূষের মন ছোট হয়ে পৃথিবী,
কেমনে আঁকিব ঐ সময়ের সুন্দর জীবন ছবি,
যেন অসহায় হয়ে পড়েছে যত শিল্পী ও কবি,
কালের এই গোলক ধাধার ঘের, ধন জগতের এ পরিনতি ও পরিচয় তোমারা মান কি ॥
কি বলিব দাদা,
অনেক বাসায় ভাতের বাসন এখন দেখি হয়ে গেছে আধা,
ধনীরা যেন সব দীনতা আর কৃপনতার অদেখা জালেতে পড়েছে বাঁধা,
হাফ প্লেটে ভাত খায়,
নিজেরা যেমন না খেয়েই যেন বাঁচিতে চায়,
কূটূম দেখিলেও তেমন হায়, আতকে উঠে আর ভয়ে মরে যায়,
যেথা মন সঞ্চয় করিতে চায়, হেথা এই বুঝি বেড়ে গেলো ব্যায় আর দায়,
কেজানে শোনেছে, কোন বোঁকার কাছে, কম খেলে নাকি বেশী বাঁচে বয়সটাও ধরে রাখা যায়,
যতই হোক বেশী ধন, আয় উর্পাজন ও সঞ্চয় ভাবটা এমন যেন কম খেয়ে করিবে আরও বেশী আয়,
আজব এ দুনিয়ায়, মন তত ছোট হয়ে যায়, মানূষ যত বেশী ধন ও সাফল্য পায়, সেকথা তোমরা সবাই জান কি ॥
পূরান দিনের স্মৃতিগুলি মজার,
পরম আন্তরিকতার ছিল মধুময় সে আচরণ আচার,
তবু ঐ দিনগুলি আর ফিরিয়ে আনার মত নয়, নেই তার দরকার,
ডিজিটাল সভ্যতার কাছে কত শিষ্টাচার ও মানবতা হয়েছে বন্দি হয়েছে হার,
পাশের বাসায়, মানূষ মারা যায়, কতকিছু ঘটে, শেষে কথা রটে, অজানায় হর্ষ বেদনার,
তা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বিবেকেরে ধিক্কার দিয়ে, প্রয়োজন আবার সেই আগের সহজ সরল ভালো মানূষ হবার,
থাকুন সাহেব বাবুরা, যত বিদ্যান ও ধনবান দরকার হয় যার,
এমন অনেকে আছেন, হয়ত যারা ভাবেন, আমার নেই দরকার সেই আধূনিকতার,
যেথা মানূষ এমন, যেন নেই কর্ন নেই নয়ন, আর কেউ নহে কার,
সবকিছু ছেয়েছে যেন নকল ওটাই সবল মেকী মূখোশ অভিনয় আর লৌকিকতার,
নেই সুবচন, বোধ বিবেচনা মিথ্যা মন্দ ধোকা প্রতারনায় চারিধার আজিকে যেন হয়েছে একাকার,
সভ্যতা আর আধূনিকতার নামে, রক্তের নয় হয়ত কেনা হয়েছে যা টাকার দামে, ঐ কুৎসিৎ রুপ কভূ রাখা যায়কি ঢাকি ॥