পর্ব - ০১


তিন পথের মোড়,
বদনে ক্লান্তি ও চোখে ভাবনার ঘোর,
হারিয়ে ফেলেছে সব বিত্তধন যত আপনজন সংগীসাম,
হাতে সময় কম যেতে হবে তাড়াতাড়ি, যেন সে এক অধম নগন্য গোলাম,
জানা নাই কার কাছে, কতটুকু কি জমা আছে, ভালকথা ভালকাজ ও সেরা কোন পুণ্য কাম,
যাচ্ছে মনিবের বাড়ী, কেজানে মাথায় লয়ে কত দেনা-দায়, অপরাধ, গুনাহ ও কোন সে কলংক বদনাম ।
তাই যদি হয়,
খালি হাতে গেলে নিশ্চয়,
কার তা বিশ্বাস হলো আর ওরে কারবা নয়,
আবু হকে জেনে-বুঝে কয় কেমনে পাবে, না কেউ পাবেনা হেথা ঐ সে রাজকুটুমের মান ও দাম ।
মাথায় ঋনের বোঝা লয়ে,
কপালে চিকন ঘাম দেওয়া এক অপরাধী আসামী হয়ে,
কোন লাভ নেই হবেনা আর,
বন্ধ হয়ে গেলে একবার তার ক্ষমা ও করুণার দুয়ার,
না ফুটিলে তৃতীয় নয়ন আর না হলে বোধ বিবেকের জাগরণ অসাড় আত্মার,
মোহমায়া আর যাদুর নেশার ঘোর,
কেমনে হবেরে সাধন হৃদয় ভুবনে না হলে দীপ্ত আলোর ভোর,
যতই অনুতাপ আহাজারি হাহাকার, বিনয়ে করজোড়ে বিবেকের আদালতে আজ সে হোক চোর ।
অস্ত রবির গোধূঁলী বেলা,
মেলা ভেংগে, ফেলে রেখে আসা মজার সব খেলা,
পিঁচঢালা কালো পথটা এখানেই শেষ,
ঐ পথচারী আহা সব হারানো এক অসহায় বেচারী এই পথ মাঝারেই হবে নিরুদ্দেশ,
দুই ধারে যার ছিল সারি সারি নানা বৃক্ষ তরু,
আর পায়েচলা দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া ঐ প্রান্তহীন পথটার হয়েছে এখান থেকেই শুরু ।
একটু পরেই ঘন আঁধার,
চারপাশ চারিধার গিলে খাবে তার,
মহাকালিমায় একাকার নাই কিবা রহিবেনা যার,
কোন কূলকিনার নামবে যেথা এমনই রাত,
অদেখায় এক কদম আগে কি আছে হায়, অদৃশ্যমান নিজের হাত,
হলে করুণায় ভরা, নাহলে মহাভাবনায় পড়া যদিরে হয় তা বিধাতার রোশময় অভিশম্পাত,
কেউ কি ভাবেরে তবে, শেষে ওরে কি উপায় হবে, এ রাত কভু আর কোনদিন না যদি হয় প্রভাত,
যতই সামনে গেছে,
ঐ পথটা যেন ওরে দিক হারিয়েছে,
তিলেক পরে, আঁধারেই কিরে শেষে তারে গিলে খেয়েছে,
অনেক হতাশা আর অনেক ভাবনা ভয়, মনেহয় যেন হয়েছে ক্রমশ তা অচেনা ও সরু ।


পর্ব - ০২


অচিন দেশ মধুপুর,
কেউবা বলে বিজয়নগর ও শান্তিপুর,
সামনে চলে গেছে যেন তার শেষ নেই আর হেন সুদূর বহুদূর,
শেষ নেই যেন আহা সে বাহার,
শুনেশুনে তা বারবার মোহে আমি পড়ে গেছি তার,
দেখিতে ও ভাগ নিতে ঐ আকুতি ও আকুলতার কাছে মেনেছি হার,
কেজানে তা কোনদিকে কোথায়, কে দিবে বলে বা দেখায়, আর আসলে বা কতদূর ।
অপার ঐ নেয়ামত ও দান সম্ভার,
শুধু হবে তার, পাশ করা ছাড়পত্র সংগে রয়েছে যার,
ঐ প্রান্তে ভিন্ন দুনিয়া, মৃত্যুহীন ও নাই কোন ঋন এমন এক অন্য জীবন যেথা শুধু সুখ বিনোদন ভরপুর ।
ধূ ধূ প্রান্তর,
কেজানে কি আছে তারপর,
নেই প্রাণী-জন মরুভুমি বিজন, নিঝুম ঐ বালুচর,
কোথাও নেই বৃক্ষ-তরু, একফোটা জল কোন লোকালয় বাড়ীঘর,
ভয়ে ছমছম গা, থরথর কাঁপে দুই হাটু-পা, ত্রাসে ও দূর্ভাবনায় কাতর অন্তর ।
সে যেন এক অজানা অচেনা অন্য ভুবন,
আশেপাশে নেই কোন জীব জানোয়ার, পথিক কিবা আর কোন বসতি বা লোকজন,
সামনে সুশান্ত বাবুর শ্বশান,
তারও অনেক পরে বিজন ময়দানের পথ ধরে পরিবিবির গোরস্থান,
কারো জানা নেই, কেমনে বলে দেই, সহস্র নাকি শত আসলে কত বছরের পুরাতন এ দুটি স্থান ।
আরও অনেক সামনে গিয়ে এ সফর,
অনেকদিন আগের মরানদীর এক সুবিশাল বালুচর,
যত মুসাফির ঐ সফরে হয় বড়ই ক্লান্ত অধীর, বিব্রত ও মহাভয়ংকর,
কাফেলায় নহে, নাহি রথে কিবা ঘোড়ায় চড়ে, ঐপথ অচেনা অদ্ভুত ও মহাবিস্ময়কর ।
কষ্ট যাতনা, আপদ ও নিদানে ভরা,
মিথ্যে নয়, সবই যা আপনি অর্জন করা,
ধার্য্য হয়েছে ও হয় তা লোকের নিজ কাজেরই উপর,
সব ধন-জন ও কত সুন্দর সে দেশ,
অনেক পিছনে ফেলে রেখে আসা সবকিছু সেই কবেই হয়েছে শেষ,
নেই কোন জলাশয় সবুজের রেশ, দয়াময় খোদার এ কেমন দেশ, রুঢ় ও বৈরী অন্তহীন সে প্রান্তর ।
নেই গঞ্জ গ্রাম বাজার হাট,
একটু আলোয় জিরাবার কিবা কোন সওদার কেনাবেঁচার দোকানপাট,
সূর্যটা গেছে এইমাত্র পাটে,
আলো আঁধারীর জাল ছড়ালো ওরে, নিঝুম ও ভুতুরে এ সারা এলাকার পথেঘাটে,
এখনই হবে অবসান দিনের আলোটার,
ঘন আঁধারে করিবে গ্রাস, আশপাশ ও তার সুদূর চারিধার,
কে একজন বদন ফিকে,
অজ্ঞাত মুসাফির যেন আসছে এদিকে,
দেখে তারে মনেহয়, যেন দূর্বল অতিশয়, সে একজন ছোট্ট শিশুর মতনই ধীরে হাটে ।


পর্ব - ০৩


একজন কুজো বৃদ্ধ দাড়িয়ে হেথায়,
চাদরে ঢেকে রাখা তার মোখখানা ভালকরে দেখা নাহি যায়,
বুঝি এখনই আসিবে ক্ষুদ্র ব্যবসার মহাজন,
হাতে লয়ে বয়ে যার সতেজ সোনালী তীক্ষ্ণ আলোক বিচ্ছুরণ,
লোকটার কাছে, মাটিতে রাখা আছে, ঢিম করে জ্বালানো এমন অনেকগুলি ছোট ছোট লন্ঠন ।
মন ভরা দূর্ভাবনা হেন অচেনা ঐ পথিক,
কেজানে তার গন্তব্যটার দিকটি ঠিক না বেঠিক,
কিছু নেই আর, দুই কাঁধে তার, ছিল শুধু দুইখানা ঝোলা,
কেজানে কোনটাতে কি রাখা আছে, বুঝা গেলোনা মোখগুলি ছিলনা খোলা ।
শ্বেত-শুভ্র দাড়িভরা মোখখানা তার ঘামছে,
কেমনে আমি শুধাই তার কাছে, নিজেই যে তোপের মোখে আছে,
ঐ ঝুলি দুইখানার মনে পড়ে, একটা যার ছিল সাদা আর অন্যটি তার দেখতে কালা ।
বললো - একটা হারিকেন দিবেন ভাই,
হেথা গেলে একবার জানা, কেউতো আর কভু ফিরে আসে নাই কিবা আসেনা তাই,
দেখো মানুষে এ জমানায়,
কত মমতাহীন যেন নাই কোন ঋন-দায়,
এক গ্লাস পানি দেখি সবে কিনে খায় বিশ টাকায়,
এ দুনিয়ায় কি বিনামূল্যে, কোন কিছু ওরে পাওয়া যায়,
কোথাও নাই জল, প্রকৃতি বিরস ও নিষ্প্রাণ সবে কত অসহায়,
তোমারে ভাই, তা ভাড়ায় দেবারও যে নাই কোন সুযোগ কিবা উপায় ।  
এ ব্যবসা করি আজ বহু বছর,
কেউ নাই আপন আমার, প্রীষ্ম বর্ষা শীত মাথার উপর,  
ধন নাই বলে দেখোনা আমারে সবাই কেমন করেছে কোনঠাসা ও অচেনা পর,
এক নিঃস্ব যাযাবর মুসাফির, বানিয়ে ছোট্ট পাতার ঘর,
ঐযে হাজার বছরের পুরাতন ঐ মসজিদের পাশে মিনারের পিছে কাটিল তার জনমভর ।
এ জীবনটা এক গোলক ধাঁ ধাঁ,
রয়েছি বন্দি হয়ে করে সন্ধি দাদনের জালে বাঁধা,
যদিওবা ছাড়া পাই, ওরে কবে তা জানা নাই, শুনেছি হয়তোবা হবে তা শেষ হিসাবের পর ।
বলিও তুমি সবারে,
না ভুলিতে ওরে তারা সাতরঙ বাহারে,
যদি তুমি ফিরে যাও আগের সমাজ ও পরিবারে,
চোখে ধনজন আর মোহ ও মায়ার সনে আর নাহি পারে,
মাথায় দেনার দায়, পেরেশান ভাবনায়, মস্ত ভারী বোঝাটা ঘারে,
শেষ পরীক্ষায় ও শেষ হিসাবে হায়, যেন কভু ওরে তারা কেউ আর না হারে,
মিথ্যে মোহ মায়া, মনের উপর যার প্রভাব আর কালোছায়া, আশা আর মরীচিকার এই খবর ।
নিয়ে যাও ভাই,
একটু পরেই সবই তার যাবেযে ফুরাই,
সামনে নিদান, এত করে আমি ওরে বলছি তোমারে তাই,
সামনে অনেক পথ, নাই কোন সংগী বা রথ ভেবে যেথা সবে পেরেশান,
একাকি সফর, এক মুসাফির যাযাবর, কি উপায় হবে বলো কে করিবে তারে ত্রাণ,
দেখিবে কোথাও কোন আলো নাই আর, অচেনা আঁধার পথটা তোমার, কেমনে হবে পার তা নাহলে পসর ।


পর্ব - ০৪


জানিনা কতদূর শান্তিনগরের ঐ মধুপুর গ্রাম,
জানতে পাবে চলার পথে, দেখা পেলে তার এই সবকিছু যার, ঐ সে দরদী সাম,
চলন, বলন, মনন ও কাজ আর তার লাগি ওরে তোমার দেওয়া একটি ক্ষণ ও একফোটা ঘাম,
ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য ও হালাল-হারাম,
করেছ যে যেটুকু দান, পরের উপকার ও মন্দ-ভালো যত কাম,
কিছুই বৃথা নাহি যাবে ওরে পাবেই সবে পাবে, তার যথা শাস্তি-পুরস্কার বিনিময় প্রতিদান ও দাম ।
যদিরে দাদনের মহাজন জানিতে চায়,
কিবা তব সঞ্চয় ও সম্বল আর কি ছিল তোমার দুনিয়ার দায়,
নিঁখুত হিসাব লবেন মহাপাকজাত,
নেই কোন অন্যায় ও অনিয়ম কিবা পক্ষপাত,
বালাম খুলে দেখা হবে, যত সব পুরাতন খতিয়ান ও খাত,
তেল ভরা আছে, রবে তব সাথে কাছে কাছে, ওরে জ্বলবে তা সারাটা রাত,
যতক্ষণ দেখা নাহি পাবে রঙীন সুখের সোনালী প্রভাত,
বিনামূল্যে কেমনে দেই, এইতো আমার কামাই, ডাল-ভাত খাই তাতেই হয় মোর দিনাতিপাত ।
হেন দশা কেন মোর হলোরে ভাই,
এই প্রথম জানিলাম, যেতে হবেযে একাকি তাই,
বুঝি ভেংগেছে সব ভুল, বিদ্যা ধন রুপগুন ও ক্ষমতার তাবৎ বড়াই,
যদিরে এমনই হয় কভু তাই,
যার ধন-জন কিছু নাই কেহ নাই আর শেষে নিদানে পড়ে মনিবের দেখা’ও নাহি পাই ।
এ কেমন রীতি থেকেও এত বিত্তধন,
যেতে হবে খালি হাতে মরণে নাকি করিবে ওরে ষোলআনা সবকিছু হরণ,
ধনীরাই পড়বে বেশী বেহালে,
পুণ্য ছাড়া নাকি আর কিছু্রই পরকালে,
ভালকথা, ভালকাজ, দান, পরের সেবা ও উপকার বিনা ভাই, বিধাতার কাছে লোকের কোন দাম নাই ।
তা যাই বলো ভাই এখনই শেখো,
কি দেখা যায়, ঐ দূর সামনে ভালকরে তাকিয়ে দেখো,
এ বচনগুলি মনে রেখো, মূল্যটাযে ওরে আমাকে দিতেই হবে তার,
ওরে শুধু নহে তাই মনে রেখো সবাই, দাদনের হিসাব বিনিময় ও প্রতিদান মহারাজার,
কেজানে কার কত বকেয়া ঋন,
হবে জটিল ও কঠিন অনেক জেরার সম্মুখীন,
পড়বে অজানা কত দূর্বিপাকে, সাত সাগরের ঘাটেঘাটে তোমাকে, বিজন বিভুঁই নিরব ঐ ঘাটগুলি সব হতে পার ।
একেবারে মোর শূন্য দুটিহাত,
সংগে কেহ নাই, সামনেও দীর্ঘ পথ লম্বা তিমির রাত,
তাই বলি ভাই নিয়ে যাও একটা বাতি,
যা হবে তোমার আঁধার রাতের চলার পথের পরম আপন প্রিয় সাথী,
যদিও চাইনা তার কোন দাম,
করা পুণ্যের সন্ধান ও অসহায় জনে একটু আলোক দান এইতোরে আমার কাম ।
তাইতো বসে আছি ভাই,
ওপারের সঞ্চয় সম্বল আমারওযে তেমন কিছুই নাই,
সেইতো আমার ব্যবসা, কায়ঃমন চেষ্টা ও আশা যেন তা আরেকটু খুঁজে পাই,
যাই বলো তার আহরণ, বিনিময় কিবা প্রতিদান, পাবে এই বাতিখান শুধু তোমার ঐ সাদা ঝুলিটা আমি চাই ॥