পর্ব - ০১


আজ গল্প শোনাব আজব এক বউ-শ্বাশুড়ী ॥
এ যুগে যা হয়না,
মন খুলে কথা যারা কয়না,
কেউ কারে আপন বলে মেনে লয়না,
আপন আপন বচন, মন ও আচরণে করছে সারাক্ষণ কেন তারা শুধু চুরি ॥
কেউ কারো নয়,
যেটুকু হয় কথা বিনিময়,
যদিও তা নিখুঁত আসল বলে মনে হয়,
আসলে তা মোটেও আসল নয়, সবটুকুই তার অভিনয়,
বউ-শ্বাশুড়ী যেন দুজনে দুজনার বান্ধবী হেন এক সম্পর্ক তারা তুলেছে গড়ি ॥
তারা মা মেয়ে নয়,
বউ-শ্বাশুড়ীইবা কেমন করে হয়,
মাথায় ঘুমটা নেই দুজনেই খাটে পা তুলে বয়,
অচেনা-অজানা কেউ দেখে পাবেকি জানতে তাদের আসল পরিচয়,
নতুন বউকে ঐ শ্বাশুড়ী আদরে, মানিক বলে সম্বোধন করে ও কথা কয়,
বউটি এসে নতুন ঘরে, মধুর সোহাগে হৃদয় ভরে পেয়েছে গড়েছে এক নতুন শান্তি-পুরী ॥
শ্বাশুড়ীকে মধুর করে মা বলে ডাকে,
কাছেকাছে ঘুরে শ্বাশুড়ীর মোখপানে সে চেয়ে থাকে,
হাসিমোখে কথা কয় গল্প করে খুশীতে ভরে তাকে মাতিয়ে রাখে,
আপন স্বজন সবারে সেযে এসেছে ছেড়ে দেখে তা মোটেও মনে হয়না তাকে,
অচেনা এক নয়া কাননে দুদিনের এক ভিন জীবনে তবেকি পাখীটা কি পথভুলে এসেছে উড়ি ॥  
সহজ সরলই মনেহয়,
নেই কোন জড়তা ভাবনা ও ভয়,
পেয়েছে সুখের ঠাই যেন সে রাজ্য করেছে জয়,
করেছে প্রমাণ সে, বন্ধু হতে হলেযে বয়সটা কোন বাধাই নয়,
আমার সাত বছরের নাতনীও বন্ধু তার, দুজনে দুজনার লাগি উম্মোখ হয়ে রয়,
যৌবনবতী রুপসী সুমতি এক বউ আর শ্বাশুড়ী তার সম্ভ্রান্ত মহিলা মধ্যবিত্ত নামাজী পরিবার ষাটোর্ধ বুড়ি ॥
কেজানে কোন চতুর শিকারি,
কৌশলে ফাঁদ পেতে এনেছে নাকি ধরি,
একটা যাদুর মোহ ভরপুর অদেখা সোনার খাঁচায় ভরি,
ন এমন নয়, তবে মনেহয় যেন হায়,
একটা সোনার শিকল পড়িয়ে দিয়ে মনের অদুটি নয়ন ও পায়,
অতি যতনে ও গোপনে একটা নতুন ভুবন সবে মিলে তাদেরে দিয়েছে গড়ি,
বর-কনেরে এনে ধরে সংসার নামক জোয়ালে দিয়াছে জুড়ি,
দেখেছি হিসাব করি, ঐ বউ-শাশুড়ী দুজনেই আসলে সফল নিঁপুণ যাদুকরি ॥  


পর্ব - ০২


কোন কাজ বউ করেনা,
যদিওবা ধরে, শ্বাশুড়ী তারে করে মানা,
বড়জোড় বউ গুছায় তার বিছানা পড়ার টেবিল ও আলনা,
কেউ বলেওনা, নেই তেমন কোন ঘর কাজ,
ঝাপটে ধরে তারে কাবুও করেনা কোন দ্বিধা সংকোচ কিবা ভয় লাজ,
মনেহয় সে গল্পও নয়, লয়ে কোন শাড়ী গহনা চূড়ি কিবা বিলাস প্রসাধন ও বিনোদন সাজ,
আলো ও ভালোর বৈপরিত্য লয়ে,
অসৎ উপার্জন ও বিপুল বিত্ত বিলাস ভোগ বিনোদন মালিক হয়ে,
অর্থের বল ও কুটকৌশল যেন আজ সকলই দখল ও দেশটা করেছে জয় অধুনা তথাকথিত অতি সম্ভ্রান্ত সমাজ ।
ঐ দুজনে খাটে শুয়ে বসে রয়,
টিভির নাটক সিনেমা দেখে আর কথা কয়,
আপন মনে স্বস্তি পায় মাঝেমাঝে কখনযে দুজনেই অজানায় আয়েশে জিরায় ঘুমিয়ে পড়ি ॥
তারাই রাজার আপন স্বজন চামচা চাটুকার,
বাকীরা সবাই যেন কেউ নাই কিছু নাই ঘর বিমাতার,
যদি হয় খাটি মুসলমান ও দেশপ্রেমিক তবে একোন উত্তরাধিকার,
যদিও খালি করে দেয় রাজকোষাগার, কোন দোষ অপরাধ নেই ঐ সবার,
দূরন্ত বাহুবল হীন কৌশল প্রজার দেশটারে লয়েছে দখলে একদল ও একপরিবার,
আজ নাহয় কাল, দুনিয়ায় নাহয় আখেরাতে, রাজারও হবে সাজা ও বিচারকেরও হবে বিচার,
বাকীরা সবে দেশদ্রোহী ও দুশমন রাজার, বলে কে দিলো তাদেরে এত সাহস ও অধিকার সত্য বলার ।
কেউ ধন ও ভোগ-বিনোদন, কেউ শুধু সুখেরই মোহতাজ,
অনেক লম্বাহাত তারা রাতকে করে দিন ও দিনকে রাত এই যেন কাজ,
নেই পরওয়া, অদেখা আপন দাপটে সেজেছে সবাই তারা আজ যেন আপনি মহারাজ,
চুপিচুপি তাদের পিছু লয়ে থাকা,
কায়া ও ছায়াহীন যম তবু কেন তার মোখটা ঢাকা,
হঠাৎ এলে ঐ ঝটিকা যম নির্মম মরণ,
এত ধন শেষে কি করিবে, তা কি ঠেকাবে বাহুবল ও কুটকৌশল অসীম ক্ষমতা কিবা সামন্তগণ,
সুরম্য প্রাসাদ আসলে চারিদিকে বিছানো ছড়ানো ফাঁদ পদতলে যার অগ্নিগিরির পাটাতন ও মাথার উপরে আসমানী বাজ ॥  
যখন যাহা তার প্রয়োজন মনে চায়,
এমন ভাগ্য হয় কার, কজনে এমন শ্বাশুড়ী পায়,
শ্বাশুড়ী বউয়ের কাছে, সেবা ও খেদমত কিছুইতো কভু নাহি চায়,
বউ সকাল দুপুরে কি রাতে যা থাকে ঘরে লয়ে নিজ হাতে তুলে ধরে বারমজা খায়,
বলায় চলায় খাওয়ায় কত সুখ-স্বাদ ও আনন্দ পায়,
যখন যাহা যার মনে চায়, দুজনে মিলে বিরিয়ানী খিচুরি হালিম চটপটি কিবা ঝালমুড়ি ॥


পর্ব - ০৩


উড়ে এসে জুড়ে বসা নয়,
মানুষ মানুষের অতি বন্ধু আপন হয়,
ভালবেসে সুখে দুঃখে সবাই যদি সবার পাশে রয়,
ভালো কিছু পেলে কিবা পেতে হলে দিতে হয় তার সঠিক প্রতিদান বিনিময়,
তাই বুঝি হায়,
সচেতন বিবেকের আংগিনায়,
সমীহ ও সম্মান করা হয়ে পড়েছে বৌমার বড় দায়,
কৌশলে বন্ধু হলেও মিষ্টি কথা বলে বলে বউটি শ্বাশুড়ীর মন জয় করি ফেলেছে পূরোপূরি ॥
লেখাপড়া জানা বউ নহে সে অবুঝ কানা,
বউ-ছেলে ডাক্তার হয়েছে অনেক শেখা দেখা ও অনেক জানা,
বুঝি তাই সুখের এ সংসারটা হয়েছে বাবামার গড়া একটা আদর্শ বিদ্যাপীঠ ও ডাক্তারখানা,
যাই হোক বয়স তার পঁচিশ কিবা কুড়ি ভরেছে জ্ঞানের ঝুড়িখানা থেকে নানা অংগনে নানা পরিবেশে ঘুরি ঘুরি ॥
হয়েছে বৈজ্ঞানিক ডাক্তার,
অনুভবে চেতনায় দেমাগে মননে চেপেছে কত দায়ভার,
বড় সাধ তার মনে, হতে হবে হওয়া যায় কেমনে মস্তবড় ডাক্তার ও আসল মানুষ হবার,
একদিনতো হতেই হবে ওরে সবে বুড়াবুড়ি থাকনা যতই যার জ্ঞান ও ধনের পাহাড় কিবা সুখ সম্ভার,
হতে চায়না নেই হেন কোন বায়না, মেঘে ভেসে ঘুরতে অসীম আকাশে উড়তে হয়ে রঙীন ফানুস বা ঘুড়ি ॥
হয়ে নব এক নির্দশন,
গড়তে চায় এক অনন্য সুন্দর জীবন,
আলো ও ভালোয় ভরতে ভুবন, করতে হবে তার চারা রোপন,
কর্ম্মের ফল,
কভু হয়না বিফল,
সময় কারেও করেনা ক্ষমা,  
তাই হতে হবে তাকে আদর্শ সন্তানের মা,
বিধির বাণী ও বিধান চীর সত্য কথা বলে,
একদিনতো যাবেই শ্বাশুড়ী, তাকে ফেলে নিরুদ্দেশে চলে,
লয়ে আপন মাথায়,
সব দায়ঋন আর কাজগুলি অনাদায়,
তাকেই সাধিতে হবে ধরে এ পরিবার ও সমাজের হাল, হয়ে উদার মহান শ্বাশুড়ীর যোগ্য উত্তরসূরী ॥


পর্ব - ০৪


বয়সে বড় হওয়া বড় কথা নয়,
সেইতো আসলে বড়, বড় কাজ যে করে ও বড়র দায়টুকু মাথে লয়,
তাদের মনে ফিট করা নেই কোন আয়না,
তাই বুঝি কেউ তারা আপন স্বার্থটা ছাড়া আর কারো ভালো চায়না,
চোখ থেকেও নিজের দোষ ও একটু দূরের পরম ভালো আপন অন্তরের কলংক কালো দেখতে তারা পায়না,
নারীতে প্রবল গন্ধ পাই শুধু হিংসার,
আহা ঢের সোনালী সুখের কত জীবন ও সংসার,
হয়ত জেনেছে সে, হিংসা ও অহংকার করেছেযে ছারখার,
দিতে নাহি সুখ আনন্ন্দ বিনোদন কিছু স্বাধীনতা ও নায্য অধিকার,
লক্ষ্যনীয় তাই পরোক্ষ্য ঐ হীনমন্যতা আর কুটিল মানষিকতার ব্যবহার,
একেবারে ভিন্ন মানুষ দুজনেই ভিতরে ভিতরে দুই,
বাহিরে কত রঙের প্রলেপ যাদুর মধু, মনেতে নিন্দা ঘৃনা ও কুটিলতা লুকিয়ে থুই,
কভু এমন নহে ওরে,
সবাই আমরা যেন হই পরের তরে,
এমন বউ শ্বাশুড়ী এ সংসারে হোক সবার ঘরে ঘরে,
দেখুক জানুক শিখুক সকল বধূমাতাকন্যা ও বোন অনুকরণ অনুশীলন ও অনুসরণ করে,
সব লোক সুখশান্তি লভে ধন্য হোক কল্যাণ মংগল ও উন্নতির তরে নাই যার কোন জুড়ী ॥
বদলেছে এখন দিন,
কেউ নহে কারো সেবাদাসী বা কারো অধীন,
তবে সবার কাছে রয়েছে সবার ঢের পাওনা অধিকার ও ঋন,
চাই বউ শ্বাশুড়ীর বুঝাপড়া শলা পরামর্শ ও সমঝোতা আর তাই বুঝি সমীচীন,  
গৃহকর্তৃ বলো তা কেমনে পারে,
পরের ঝি নতুন বউয়ের হাতে সব ভার দেয় ছেড়ে ও এভাবেই সে হারে,
রাজত্ব বাহাদুরী কতদিন আর,
কে বলেছে কে চেয়েছে এত ছাড় কিবা সিংহাসন তার,
চল্লিশ বছরে নিজহাতে সে তিলতিল করে তুলেছে যতনে গড়ে যে সংসার,
দিয়ে নবীনের হাতে সব দায়ভার, একদিনতো যেতেই হবে প্রবীণেরা এ জগত ছেড়ে সবকিছু ফেলে ছুড়ি ॥
মহৎ মহান ও উদার মন,
এমন জীবন করতে হবে সবারে গঠন,
অতল সাগর সম গহীন আর প্রান্তহীন ঐ আকাশের মতন,
প্রয়োজন এখনই লাভ করা এমন আত্বশোধন যেন হয় সকল সাধন,
বহুদূরে যায় অন্তরালেও দেখতে পায় এমন ঐ তৃতীয় নয়নখানি যেন হয় উম্মোচন,
মরণের পরে যেন জোড় করে ধরে না গড়িতে হয়,
করিতে সুবিচার সে দায়খানাতো বিশ্বপ্রভু মহারাজন করবেনই পালন নিশ্চয়,
এই দেহ আর মনটারে,
সে যেন খলখল মহাদাবানল কারাগারে,
হতে পারে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হবার দাবীদার, আবার আলো ও ভালোয় ভরা ঐ সোনার মানুষ গড়া দাউদাউ আগুনে পুড়ি ॥