পর্ব - ০১


ঘুরেঘুরে দেখিবার ঐ বাসনা আমার, ত্রিনয়নে মনের কোণে দিয়েছে গোপনে হানা ॥
চারপাশে এঁকেবেঁকে চলা,
কেমনে বলি সে রুপের কথা, যা দেখেছি তা যায়না বলা,
বুকে লয়ে নীল শীতল জল, সুমধুর কলকল ঝলমল রোশনির স্নিগ্ধ ফটিক জলা,
ধুয়ে দিত সব মিথ্যা মন্দ ও নেশার ঘোর, দীপ্ত আলোর সকল ভালোর ঐ সে মহান বীজতলা,
তার মাঝেমাঝে ফাঁকেফাঁকে সোনাফলা মাটি,
মোর ইচ্ছে করে মনের সুখে ওরে ঘুরেঘুরে সেথা হাটি,
যেথা যাদুর মায়ার এক শীতল ছায়ার যেন বিছানো বিশাল পাটি,
যদিরে এমন হতো, হেথা যেতে মোরে কেউ বাঁধা নাহি দিত আর কভু না করিত মানা ॥
পরম মিতালির ঘন সবুজ ঐ বনানী,
হাত ধরে তরুগুলি যেন ওরে একে অপরে করে টানাটানি,
শত সহস্র পাখীর কুজন আর চোখ জুড়ানো ও মন ভরানো সে বাহার অগনিত ফুলেফলে সুফলা,
রবি ও শশীর কিরণ পড়ে,
অরুপ ঐ বাহারে দিবানিশি ঝলমল চকচক করে,
ঐ দেখা যায়, শ্বেত পাথরের বিশাল ঐ প্রাসাদখানা, কার হবে ঠাই কার হবেনা তা নেই জানা ॥  
অ মানুষ হয়েছে কি জানা,
চোখ থেকেও আজীবন রইবে নাকিরে কানা,
কোন কাজে কেন মাটির এ দুনিয়ায় আসা, গজালো শেষে মনের ডানা,
রঙ মাখানো ও কাছে টানা,
এক সোনালী খাঁচার মোহ মায়ার যাদুর ঐ জালবোনা,
সে এক বিভোর নেশার ঘের যেন পূরো এক সের তাই কিরে তোর আজও হলোনা,
তার জমিনে আলো ও ভালোর বীজবোনা ও চারা রোপন, বৃথা তোমার এ ছোট্ট জীবনখানা ॥  
মহারাজার ঐ কুটুমবাড়ী,
ঝোপঝাড় লতাপাতার তোরণ ফটক, প্রহরী পেয়াদা সারিসারি,
হর্ষ প্রমোদ ও বিনোদনের,
রসেভরা ঐ হুরদের মন পাগল করা মায়া যাদুর ঘের,
মনোরম মনোহর, অপরুপ সুন্দর,
ছোট্ট সোনালী নদীটার ঐপারে, মধ্যখানে যার বালুচর,
ইশারায় পেয়ে কার নিমন্ত্রণ,
নষ্ট না করে আর এক তিল ক্ষণ,
আহা দেখিতে তাহা ছুটে যেতে যেন আকুল হয়েছে মন,
কোন বিলাসে যাদুর নেশায় ভরপূর,
মনটা যেথা পড়ে আছে মনেহয় হাতের কাছে নহে বেশী দূর,
ইন্দ্রিয় আর সকল রিপুর মোহয় ভরা শান্তিপুর, আমার তৃষিত হিয়ার আকুল বাসনার ঠিকানা ॥  
অদেখা অচিন ঐ রাজার কাছে,
সারা দেশময় ভুতলে আকাশে জলে ও গাছে,
বিশ্বজোড়া চিরকাল আজীবন,
সব মানুষের সকল জীবের যা প্রয়োজন,
সবই তার ভান্ডারে চিরকাল ছিল আজও মজুদ আছে,
শুধু নাহলে কানা, সেতো আমার মত ওরে সবারই রয়েছে জানা ॥


পর্ব - ০২


বলো এ জগতের সবায়,
কি আর ওরে একই রকম করে সবকিছু চায়,
যাইবা হোক চাওয়া সবাই কি আর ঐ সবকিছু ওরে ডালা ভরে পায়,
কেজানে কার কি আছে কি নাই,
কেউ চায় তার একটুখানি মাথা গোঁজার ঠাই,
ভিখারীরও আছে সহস্র ভিন্ন জাত,
কারো থালা বিশাল ডালার মত কারোবা ছোট্ট পাত,
কেউ চায় ভোগ বিলাস বিনোদন আরও ধন কেউবা শুধু ডালভাত,
সবাইতো আর তার চাওয়ার ঐ ধন নেয়ামতগুলির সবটুকু পায়না ॥
ঐ সে পরম চাওয়াগুলি,
কায়ঃমনে দুহাত তুলে কিবা না তুলি,
কেউ পড়ে সিজদায়,
কপাল ঠেকিয়ে নিরাকার ঐ রাজার পায়,
কায়ঃমনে কাতরে গোপনে চায়,
নিরবে কেউবা আবার নিঝুম তার দরবারে চলে যায়,
কোটি গোলামের কারো কম কারোবা ঢের অগনিত আরজি আকুতি মিনতি ও বায়না ॥
সবাইতো আর ধনজন,
হিরার মুকুট সোনার সিংহাসন,
মজাদার শাহী মোগলাই খাবার,
আলো ঝলমলে মোড়ানো মখমলে প্রাসাদ ও সাজানো দরবার,
বিশাল রাজ্য কোটি প্রজা বিলাস বৈভবের নেই সীমানা, হেন নামডাক প্রতাপ ও বাদশাহী চায়না ॥
সাজানো রঙের মেলা,
সে এক আজব মজার খেলা,
সবকিছু থেকে,
রেখেছে লুকিয়ে ঢেকে,
এত ধন অঢেল ও অগনন,
নিজে খায়না, নাই তার কোন প্রয়োজন,
তার সে ভেদ বুঝা ভার, তা রহে চির অজানা গোপন,
চাহিলে মন ঢেলে দেয় ধন, কারোবা পোয়াবারো কারো বারমাস অনটন,
কেনযে ঐ মহাজন, প্রয়োজন ও চাহিদা মতন তার প্রিয় জনেরে তেমন কিছুই দেয়না ॥
সব দেখে চিনে জানে বুঝে ও পারে,
ইচ্ছে হয় যারে, হাটু কাঁদাজলে চুবায় অকূলে ডুবায় মারে,
নাক ডুবিয়ে খায়, যতনা খায় তারচে বেশী ফালায় কত মানুষ কষ্ট পায় অনাহারে,
কত অপরাধী গুনাহগার ছাড়া পেয়ে যায়, কত মজলুম চোখে নাই ঘুম পায়না বিচার রাত কাটে হাহাকারে,
কারো দরদী হয় সংগে রয় ভারও বয় কেন কারো হয়না,    
সবার সব নিবেদন সদা করে সে শ্রবণ, রহে চিরকাল স্বরণ তবুও কথা কয়না,
দিক বা না দিক, দিবে কি দিবেনা তাও বলেনা, মজার ব্যাপার কভু সে কারেও করেনা মানা ॥
আমার ক্ষুদ্র চাওয়া,
কভু হোকবা নাহোক পাওয়া,
ভুতলে আকাশে অকূলে নিমেষে ফলে,
যদি তার মমতার বরফ গলে, আবু হকে বলে ঐ মহারাজার হলে সামান্য করুণা ॥


পর্ব - ০৩


ঝিঝি পোকা ও জোনাকী,
হাজার রঙ ও রুপের গানের পাখী,
সাত রঙ প্রজাপতি ও ফড়িং,
কোন খুশীতে নাঁচন করে তিড়িং বিড়িং,
একটা বিশাল কানন ঝিল,
মাছ আর পাখীদের হরষের কোলাহল কিলবিল,
সারাদিন সারাবেলা শুধু তার রুপের খেলা আর এক রঙের মেলা অনাবিল,
কভু ছেড়ে যায়না, আমার বসত বাড়ীতে হয় চিরদিন রয় পাখীদের ঐ নিবিড় শান্তি সুখের আস্তানা ॥
করিব সমাদর যতন ও আদর,
দোয়েল কোয়েল গাংচিল শালিক ও কবুতর,
যারা এখনও আসেনি বা কাছে নেই তাদেরে পাঠাবো খবর,
যত শোভন ও বাহারি প্রাণ ও জীবন,
মহারাজার যত আলো আর ভালোয় ভরা কোটি সৃজন,
জমবে মেলা বসবে মজার নিত্য আসর, সবারে আমি করিব নিমন্ত্রণ,
পতংগ ও পাখীদের নাঁচন, বাঁশী আর পাখীদের সুমধুর কলতান মোহিত রবে মোর গৃহ কানন,
ময়না টিয়া মাছরাঙা বুলবুলি কাকাতুয়া ফিঙে কাক কুটুম ও কুকিল,
পানকৌড়ী ঘূঘূ চাতক বারো জাতের হাঁস সবার সনে সবার মধুর ভাব অন্তরের মিল,
পরম বিশ্বাসে ভালবেসে মিলেমিশে বসবাস, কেউ দেবেনা কারেও কভু কিল চড় কিবা ঢিল,
আমারে তারা নাহি যেন পায় কভু ভয়,
কাছে আসে গা ঘেষে বসে বন্ধু হয়, গল্প করে সুখদুঃখের মনের কথা কয়,
থাকে বারোমাস, বানায় বাসা খড়কূটো দিয়ে খাসা, ডিম পাড়ে দেয় ডানাহীন তুলতুল ছোট্ট পুতুল ছানা ॥
ঘন গাছগাছালীর পাতার ফাঁকে,
আলো আঁধারীর মদির জোছনা খেলা করে লুকিয়ে থাকে,
বাসা ছেড়ে আসা ডাহুক, বাদুর ও প্যাঁচারা গহীন রাতে ঘুরেঘুরে উড়ে আর ডাকে,
রাতভর কচ্ছপ ও ব্যাঙ,
কেজানে কিসের লাগি কোন্ দুঃখে কোন্ ভয়ে করে ঘেঙর ঘ্যাং,
সারাক্ষণ এলোমেলো বায়,
শত ফুলফল শোভা পরিমল ও সৌরভ ছড়ায়,
গাছেগাছে অবিরত তাদের মনের মত যেন হরষে দোল খায়,
সেইতো আমার হবে আজীবন সংগে রবে, অনেক চাওয়ার পরম পাওয়ার সাধ ও সাধনার একখানা দোলনা ॥
এমন একটা বাড়ী,
মহাকাল যেথা আমি শান্তি-সুখে রহিতে পারি,
না যেতে হয়, কেউ মন্দ নাহি কয়, কভু তা বলে চলে যেতে ছাড়ি,
ভাঙেনা মমতার ঐ ঘর, হয়না ঐ কুটুমেরা কেউ কখনও আমার পর কিবা দেয়না কখনও আড়ি,
যদিগো আমি তাহা কভু পাই,
হরষের ঢলে কিবা কোন ভুলে যেন তা আমি নাহি হারাই,
না পেলেও যেন এমনই হয়, মম পঞ্চ হৃদয় তবুও আশায় রয়, কোন কষ্টই আমার নাই,
জীবন মরণ চেতন অচেতন নিদ্রা কি জাগরণ যাই বলো মোর দেহমন কহে শুধু ঐটুকুই তার বাসনা ॥


পর্ব - ০৪


ঐ সে ঝিলের জল,
যেন ঠিক স্বচ্ছ ফটিক পরিমল,
চিকচিক ঝিকমিক অবিরল টলমল ছলছল,
মধুর মিতালী করে গোপনে,
ফুল পাখী নানা ফল মৌমাছি ও মাছেদের সনে,
কিছু মাটি কিছু জল এমন সুফলা সফল এক নিঝুম গহীন বনে,
শোভা ও সৌরভের ঐ অতলে ডুবে মহাসুখের খুবে আমি না যদি হারিয়ে যাই,
ধন্য রাজার পুণ্য দেশে, অধম নগন্য এক গোলামের বেশে, নাহলে কেমনে শেষে শ্রেষ্ঠ হবার করিবে বড়াই,  
যদি মনে ধরে হে মহাজন, তব করুণা ভরে হেথা মোরে দিও গড়ে শীতল ছায়াঘেরা চির শান্তির ডেরা ঐ মোর কুটিরখানা ॥
তোমার কাছে বলো কি নাই,
আমি তোমার অধম নগন্য গোলাম কেমনে বেশী কিছু চাই,
বাড়তি কিছু তব ইচ্ছে হলে সহস্র ফুলেফলে নাহয় তোমার মত তুমি তা দিও সাজাই,
সাধ্য আমার নাই বলে কি ঐ আশা মোর মিথ্যে হবে, রবে ফাঁকি দেবে তাই আমারে ফিরাই,
তোমার মনে যেমন চায়, আর যেই কাজে মোর শোধ হবে ওরে দায়, আমায় দিয়ে লওনা করিয়ে গড়িয়ে তাই,
এক মহারাজার,
বিশ্বজোরা তার শতকোটি পোষ্যের বিশাল পরিবার,
সৃজন লালন পালন, নিজে নাহি খান, কেমনে ওরে সবার যোগান আহার,
না থাক লোকের সে ধারণা, রয়েছে আমার তা জানা, কতবড় তার ঐ কেরামত আর কুদরতের কারখানা ॥
দিতে পারবোনা ভাড়া, আমার কেনার টাকাও নাই,
আর কোন উপায় নাই, একটাই পথ যদি কাজ করে মোর তা হয় কামাই,
বলো তুমি কি পারনা, আমারতোরে সে ভেদ সকলই জানা, তাই সদা করি তব বড়ত্বের বড়াই,
অ রাজা আমিতো রাজি তুমি করোনা মানা, চিরস্থায়ী মালিকানা মনের মত আমার ঐ বিশাল বাড়ীখানা চাই,
তোমার ইচ্ছে যাহা পছন্দ যেই কাজ,
নেই মোর তাতে ওরে কোন আপত্তি মানা দ্বিধা ভয় কিবা লাজ,
হলে শুরু ওহে গুরু হোকনা আজ থেকে তাই,
জানিনা মোর দেনাপানা আর কিবা তোমার নাই তার সংগ্রহ কিবা কোন্ আয়োজন মহা সে  ব্যাবস্থাপনা ॥
এক রাজ ভিখারী,
রাজার কাছে মাগে, পায় বা নাপায় নাই হাহুতাশ আহাজারি,
কতকিছু নাই, যা আছে তা’ও কমকম মনভুবনে তবু যায়নিতো কভু হারি,
ছোট্ট তরীতে বসে ওপারে তাকাই, অকূল দরিয়ায় যদিরে পায় ধরে আছে ঐ আশায় পারি,
চেয়ে আছে মহারাজ, এক বিশ্বাসী গোলাম তার করুণার মোহতাজ, নেই যার কোন ভয় কিবা ভাবনা ॥