ওরা কারা, নাই নাম নাই ধাম, লোকে বলে টোকাই ॥
নাই বাবা মা,
যেখানে খুশী চলে যা,
নেই শাসন বাধা কিবা কোন মানা,
দিন বয়ে যায়, যা কুড়িয়ে পায়, তেমন একটা কিছু খাই ॥
কি তার ঠিকানা পরিচয়,
প্রকৃতির খেয়ালে বেঁচে থাকে বড় হয়,
কে করিবে আদর যতন ও মায়া,
পায়ের তলে নেই মাটি, মাথার উপরে ছায়া,
এ জীবন যাদের, নির্মম নিয়তির ঘের, জগত জুড়ে কেউ নাই কিছু নাই ॥
যাহা পাই তার,
নাই কোন মান বিচার,
পুরাতন লোহা কাঠ প্লাষ্টিক কার্টুন আর,
পুটলিতে মোড়ানো যদি থাকে কোন উচ্ছিষ্ট খাবার,
যেখানে যাহা পাই ওরে, পিঠের ঝুলিতে লই ভরে, দিনভর হাটি আর তাই টোকাই ॥
নাই কোন মামা চাচা,
সবাইতো দেখিরে ভাই বাঁচারে আপন প্রাণ বাঁচা,
আমার এ জীবনটা মনেহয় যেন একটা, অনটন আর কষ্ট-বেদনার লোহাড় খাঁচা,
যদিরে হয় তেমন নিজেই নিজের বোঝা, কি লাভ থেকে এমন কোন বোনভাই ॥
যা পাই বেঁচে দিই,
ঘরে এটাওটা মাঝেমাঝে কিনে নিই,
যা বাঁচে তা খেতে বাবামারে কিছু দেই, তাই বারোমাস দিয়ে নিজের পেট চালাই ॥
জামা কাপড়,
নাই স্বজন বাড়ীঘর,
জগতের সবাই যখন পর,
বহু পূরাতন ও অপরিস্কার,
একটা লুংগী আর একখানা র্সাট তার,
ছিল আকারে অনেক বড়, তবু বার মাসের পোষাক বলতে শুধু তাই ॥
নাংগা পায়,
কখনও উদলা গায়,
শীত গ্রীস্ম কিবা ঝরঝর বর্ষায়,
সারা বছর সারাদিন, পথে পথে উদ্দেশ্যহীন, ঘুরে বেড়ায়,
কেজানে কি খেয়ে দিন যায়, রাতগুলি তাদের হায় কেমনে কাটে কোথায়,
এ ভাবনার কেহ নাই, যদিরে মরে যায়, নিদারুন কষ্ট সয়ে কিবা সীমাহীন ভয় পাই ॥
সারাদিন হেটে হেটে,
কতনা যেন খাটুনি খেটে,
খেয়ে না খেয়ে বুঝি শূন্য পেটে,
রাত হতো যেখানে যাই, নিদ এসে ধরলে ঝেপে দূর্বল ক্লান্ত দেহটা পড়ত হেথা ঘুমাই ॥
বেড়ায় ঐ শিশু বয়সে,
জোয়ার ভাটার জলে উজানে ভাটিতে ভেসে,
পথে পথে কোটি জনতার, শ্রোতের সনে একাকার হয়ে মিশে,
যন্ত্র দানবের মত, এতিম অসহায় শিশুদের অবিরত, অভাবের নির্মম ঝড়ে দলেপিষে,
স্মৃতি ও পরিচয় পরিচিতি সব হারায়,
ছিন্নমূল পরিবার হতে বহুদূরে ছিটকে পড়ে যায়,
অবশেষে, খড়কূটোর মত ভেসে, অচিন লোকালয় ভিনদেশে, কোথাও না কোথায় পায় ঠাই ॥
এক জায়গায়,
বয়সটা যেন দাড়িয়ে ঠায়,
তবে বেড়েছে তারা খুবই সংখ্যায়,
আমার বড় ইচ্ছে হয় বাঁধিতে তাদেরে এক সূতায়,
কালের ঘূর্নি চাঁকায়, একসময় তারা যায়, দূর অজানায় হারাই ॥
কেউ কাজ করে বাসাবাড়ীতে,
শ্রমিকের কাজ করে দোকানে গ্যারেজে ছোটবড় কারখানা ও ফ্যাক্টরীতে,
কেউ ভিক্ষা করে,
কেউ লক্ষ্যহীন বেড়ায় ঘূরে,
কেউ পথেঘাটে হাটবাজারে নালানর্দমায় ও আস্তাকুড়ে,
যেথায় সবে গৃহস্থালী ও কারখানার অনাবশ্যক উচ্ছিষ্ট বর্জ ফেলেছে ছুড়ে,
কার্টূন, কাগজ, লৌহ, কাঠ, টিন, তার ও প্লাষ্টিকের ভগ্ন তৈজষ আর বোতল কুড়াই ॥
চোখে দেখেনা কেউ আর,
তাও বুঝেছি এ জগতে কেউ নহে কার,
এত ব্যাস্ত সবাই, এসব নিয়ে সময় নেই কারো ভাববার,
নাই বাবামা বিদ্যা নাই,
কাল হয়েছে দেখি এই বয়সটাই,
তবু কাজ করে ভাই, অগুলি বেঁচে তাই, নিত্যকার আমার নিজের খাবার নিজেই যোগাই ॥
খোলা জমিন নাই কোন দায়ঋন খোলা আকাশ,
তারা নিস্বঃ অসহায়, তাই রয়ে গেছে আজও দাস,
এত ধন এত খাবার তবু কারো দিন কাটে উপবাস,
তাই চেনেনা তারে, নাই পূঁজা অর্চনা বিধাতায় বিশ্বাস,
ধনের মোহ বড় আশা কিবা স্বপ্ন রঙীন নাই হাহাকার কষ্ট হুতাষ,
ভয়কি ওরে বলছি তোদেরে, যার কেউ নাই কিছু নাই, তারতো পূরো এ দেশটাই ॥
তারা আছে কেমন,
কবে পাবে খুঁজে মানূষের জীবন,
কেটে যাবে দুঃক্ষবেদন ভরা দূর্বিসহ ঐ ক্ষন,
কেন নাই যেন কারো সহর্মমিতা ও সহযোগীতাভরা মন,
অবহেলা ভরে, দেখি সবাই তাদেরে করে, টোকাই বলে সম্বোধন,
কিভাবে কবে, সুন্দর জীবন ও সুখের সন্ধান তারা পাবে কেমনে সবে কোথা যাই ॥
কেউবা মরু সাহারায়,
আজীবন কেউ ঘানী টেনে যায়,
কেউবা হাটে পথেঘাটে ধুকেধুকে মরে হায়,
কপালগুনে, লাখে দুচারজনে রাজপরিবারেও ঠাই পায়,
পায়না খবর, দূর্ভাগা উদাসীন কিবা নিরুপায় অসহায় অগনিত বঞ্চিত বাবামায়,
শত হতাশায় তবু দুহাত তুলে বিধাতার করুনা চায়, ক্ষিন আশার প্রদীপ জ্বেলে রয়েছে বসে পথ চাই ॥
জীবন গড়া,
হলোনা করা লেখাপড়া
নিজের ও দেশের তরে কিছু করা,
এ কেমন জীবন জীর্নজড়া, একেবারে আধমরা,
বোটা হতে ঝড়ে পড়া কলি,
ফুল হয়ে ফোটা হলোনা রঙীন পাপড়ি মেলি,
জাতীর অগ্রগতি কেমনে হয় তাদেরে পথের ধূলায় রেখে ফেলি,
যখন উদয়ন সময়,
নিয়তি বলে দিলো ওরে কেউ কারো নয়,
ইস্কুলেতে যাই, শোভা আর সৌরভে আকাশ বাতাস চারপাশ মোহিত করে ভরাই ॥
অনেক বিদ্যানগন,
জুড়ে আছে সব ক্ষমতার আসন,
সবারে করে পর, ভরেছে গুদামঘর, কুড়িয়ে রতন,
বিত্তশালী ধনবান ও ভাগ্যবান ঐ মানূষগুলি তারাতো তাদেরই মতন,
কেউ চুপ করে শুনি, কেউ চেয়েচেয়ে দেখি,
কেউবা নানান মজার গল্প কবিতা নাটক উপন্যাস লেখি,
টাকার কুমিড়, কত অগনিত দিগ্বিজয়ী বীর, লাখো কোটিপতি করে শ্রেষ্ঠ হবার বড়াই ॥
কোন একদিন,
শোধিতে আপন আপন দায় ঋন,
ছিন্ন বসন, শীর্ন দেহ, ভাবেনা কেহ, যাদের বদন মলীন,
চলোনা ভাই মানূষেরে ভালবাসি, ঘূরে দেখে আসি অধম জীবন পশুর হাল, ধনীর দুলাল মিলে আমরা সবাই ॥