পর্ব - ০১


এমনই কপাল আমার এমনই কপাল ॥
নিষ্ঠুর নিয়তি বুঝি,
আমারেই শুধু পেয়েছে খুঁজি,
নাইযে আমার তাই আর কোন কামাই রুজি,
নিত্য আমার দশা,
যেন একখান পাথরে ঘষা,
পুরাতন অচল তামার পয়সা এমনই করুন বেহাল ॥
হায়রে মোর গায়ের চাদর,
এইনা আমি সারাটা জীবন ভর,
করেছি তারে কতনা যতন ও আদর,
তবু পেলামনা মন, আমি তার আজও রলাম পর,
নাই মাথা গোঁজার ঠাই বলো কোথায় যাই বহিছে দুরন্ত ঘূর্নিঝড়,
নিদান আমার মাথার উপর, যেন শনি করেছে ভর, কালবোশেখীর ছোবল বেসামাল ॥
অথই পাথার,
সাঁতার আর ডুব সাঁতার,
কোন সে ভুল পেলামনা আজও কূল তার,
অকারণ পড়ে ফাঁদে,
নিরবে নিরালে গুমরে কাঁদে,
পোড়াভিটায় বসে যেন হতাশায় বিষাদে,
তাই ভেংগে তাই পড়ে, অনেক আশায় বুকভরে, দুহাতে সে আঁকড়ে ধরে যেই ডাল ॥
গেছে এমন কত বৃষ্টি বাদল ঝড়,
দাড়িয়ে গাছের তলে ভিজা গা ভেজা কাপড়,
ভাবিলাম হয়তো আসিবে সুদিন বসন্ত বর্ষা খড়া ও শীতের পর,
পেলামনা তার দেখা দুস্তর পথচলা একাএকা আজও পেলামনা সে খবর,
রলেম আমি তার হয়ে করুনার কাঙাল, আশায় আশায় কাটিল আমার চিরটাকাল ॥
ডালে ডালে নতুন লতাপাতায়,
গাছেরা সাজে এত সাজ বলো তারা কোথা পায়,
শত ফুল ও ফলের মেলায় পতংগকুল ও পাখীরা নাঁচেগায়,
সে শোভায় পঞ্চ হৃদয় জুড়ায় যেন উপচে পড়া ঐ রুপ কানায় কানায়,
বনেবনে রঙ বদলায়, সৌরভে মন ভরে যায়, তাদের গায় নতুন পাতা ও নয়া বাকল ছাল ॥
মাটির কলসী কাঁখে,
বনানীর ছায়ার ফাঁকে গেঁয়ো পথের বাঁকে,
ছোট নদীর জোয়ার জলে নেয়ে এসে মোখ লুকিয়ে চেয়ে থাকে,
ঝোপঝাড়ে দোল খায় ঘাসফুলেও পাওয়া যায় মধু,
লজ্জায় দাড়িয়ে থাকে গাভেজা কোন্ সে অচিন গাঁয়ের অচেনা রুপসী বধূ,
কোন রুপকার কারিগর, যতনে গড়েছে এত সুন্দর, সাতরঙ প্রান্তহীন প্রান্তর কতযে বিশাল ॥


পর্ব - ০২


কতজনে দেখি পরের ধনে বারোমজা খায়,
সপ্তসুখে এ সংসার বুকে দিবানীশি গড়াগড়ি যায়,
জানিনা ঐ গুপ্তধন কোথা হতে কেমনে তারা খুঁজে পায়,
নেই কোন ঋন দায়, সুখের নিদ্রা যায় তুলতুলে নরম বিছানায়,
বাসায় বা অফিসে শুয়ে ও বসে শীতল বাতাস খেয়ে পরশে গাঁ জুড়ায়,
দোলনায় দোল খায়, চড়ে মেঘের ভেলায় বাতাসে মন আকাশে ভেসে বেড়ায়,
নাহি ভার বহে কোন যাতনা সহে, জীবন তাদের নহে তিক্ত নোনতা টকঝাল বেসুরো বেতাল ॥
অকূল মাঝ দরিয়ায়,
যারা ডুবে ভাসে ও হাবুডুবু খায়,
জানিনা কি সে চায়, ঐ দয়াল মনিব বিধাতায়,
জীবনের মালিক দাদনের মহাজন দিয়েছিল কোন সে দায়,
কত দায় আর কতযে কাজ হলেও তা সমাপন, পাশ-ফেল রয়েছেযে সে পরীক্ষায়,
ইচ্ছে যারে দিয়ে একখান ছোট্ট তরী,
ভাংগা গলই নাই পাটাতন নাইরে ছই, কেমনে তবে পারি ধরি,
ঢেউয়ে নায়ে উঠে পানি, হতে তার একটুখানি ছোট্ট একখান বাঁশের হাল ॥
জগত জুড়ে এ মজার খেলা,
চলছে আজীবন বারোমাস সারাবেলা,
কোথাও দহন যাতনা ও পীড়ন কোথাও রঙের মেলা,
রাখে তারে হামেশা বিভোর নেশার ভারে কিবা করে কাবু পেরেশান ও নাজেহাল ॥
তার ছোট্ট একটা ভাংগা তরী,
অন্তরে অন্তরে মাঝির আকুল আহাজারি,
তলায় ফুটা ঢিপলা দিয়ে খড়কূটায় তা যতবার গড়ি,
ঢেউয়ের দাপটে বারবার যায় ছুটে, পায়ের গোড়ালিতে চেপে ধরি,
শুধু পিছুটান, নেই সুর নেই গান, সোজা হয়ে দাড়াতেই হুমড়ি খেয়ে আবার পড়ি,
অন্ধকারে বারেবারে আমি হাতড়ে খুঁজে ফিরি, ঐ রশিটা যা বাতাসে উড়ায় ছিন্ন পাল ॥
কেন এত বাঁধা আর বাঁধ,
জানিনা ওরে কোন সে মোর অপরাধ,
হতাশায় ঘেরা যার সবগুলি আশা আর স্বপ্ন সাধ.
ধূসর কালিমায় জীবন বিষাদ, করিতে চাহে দিশেহারা বরবাদ,
আগুনে পূড়ে সোনারু নাকি সোনা খাটি করে, দুঃখ-সুখ মিলেইতো জীবনের আসল স্বাদ,
যদিও মনেহয় আসলে তা ঠিক নয়, যেন রঙ নেই আর সবকিছুতেই শুধু রস ও সুখের আকাল ॥
কেউ বলে কপালের লিখন,
এই কপালটারেই ভাগ্য বলে আবার কোন জন,
সংগে থেকে আরশে বসে দাতার অবিরত চলে সে বন্টন,
রিজিক ধনজন সুখদুঃখ প্রতিদিন প্রতিক্ষণ চিরকাল আজীবন,
আবার দমেদমে তা বাড়ে ও কমে হয় কথা মিথ্যে নয় সংশোধন,
কাটাছেড়া লেখালেখি কর্তন বর্ধন, করিতে দেখি দাতা প্রভু মালিক মহাজন,
একথা কি নাহি মানিস, কেনরে অযথা ভাবিস তুইকি জানিস ওরে কি হবে কি ঘটিবে কাল ॥


পর্ব - ০৩


ওরে ঐ তরীটাও সাগরে চলে,
ডুবে গিয়ে আবার ভাসে বড়বড় ঢেউয়ের তলে,
আঁধার কেটে তা এক সোনালী ভোরবেলায়,
এক রুপসী রুপালী যেথা বিধাতায় তার নেয়ামত দান রেখেছে ঢালি কূলের ঐ বন্দরের দেখা পায়,
সেও নহে ওরে অসহায়, হতে গিয়ে দরিয়া পার ভেংগেছে বৈঠা যার, আর ছিড়েও গেছে পাল ॥
যে মানে তার তকদির,
নিয়তির কাছে নাহি হারে সবরে বিজয়ী বীর,
ছুইয়ে কপাল তার সপেছে সব দুঃখভাল বিধাতার চরণে থুয়ে শির,
জীবন মানে রণ, নতুন আশায় বাঁচার পণ, আপদে নিদানে কোন হতাশা নহে হয়না অধীর,
সেতো জানে সৃজন নিধন লালন পালন প্রভু ও মালিক যে মহাজন তার করুনায় ধরলেও চির,
চলে হরদম নেই কোন নিয়ম সে নহে অক্ষম ভান্ডারে কোন ঘাটতি কম নহে নিষ্ঠুর দৃষ্টিহীন কিবা বধীর,
চাহিলে মন ঢেলে দেয় ধন,
নিজে খায়না সবারে বারোমজা খাওয়ায়, আজীবন করে লালন পালন,
অফুরন্ত তার ঐ ভান্ডারের ধন, নেই অনটন কোন প্রয়োজন, বিশ্ব পরিবার করিছে ভরণ পোষণ,
দিয়ে বান্দারে তার হাজার নেয়ামত দান, বিনিময়ে একটু প্রতিদান পেতে চান, সামাণ্য সে পূঁজা ও গুণগানের কাঙাল ॥    
মেনে লয় মূল্য দেয় ঐ ইচ্ছাটার,  
তকদির মানে, আমার সবকিছুইযে তার,
হায়াত মউত রিজিক যত ভালমন্দ ও সুখদুঃখ আর,
নিঃস্ব মুসাফির আর ভবের হাটে আমি এক দুদিনের ইজারাদার,
সুখবেদন ধনজন অনটন ভোগবিলাস বিনোদন নেয়ামত দান যেই বিধাতার,
আমি তার গোলাম, মাথায় লয়ে শত কলংক বদনাম সমস্যা আপদ ও হতাশার হাহাকার,
এ দুনিয়ায় বানিজ্য সফরে আসা অতি মোহ অতি আশা ভুলে পড়ে ডুবে থাকা ধোকা খাওয়া এক বোঁকা মুসাফির,
আস্থা আর নির্ভরতা, তার করুণার জয় বারতা খাস গোলামের ঈমানের ঢাল, তিমিরে চলার তীক্ষ্ণ ছটার এক দীপ্ত মশাল ॥
ওরে নিয়তি সেই,
না, কপাল বলে কিছু নেই,
বদলানো যায়না তা নিজে থেকে কিছুতেই,
দুষমন নহে বন্ধু সবার,
কোন দোষ নেই ওরে দয়াময় বিধাতার,
যা ইচ্ছে ও মন চাহে তার, তা রুধিবার সাধ্য শক্তি কার,
তাই ঘটে হয়, মনন চলন বলন ও কর্মে তোমার পাওনা হয়েছে যেই,
হয়তো এ সময় আপনি বদলে যাবে,
আর অতি সহসা তোমার আকুল চাওয়াটা পাবে,
নিদানে হোসনে বেসামাল, হতেও পারে এমন যে সব হারাবে,
ভয় কি তাহলে, আবু হকে বলে দেখবি শেষে আবার সে ই তড়াবে যে করেছে সবকিছু বেনাল ॥
তা কম কেনরে তোর কাছে,
ওরে একটা মাথা গোঁজার ঠাইতো আছে,
যেজনা হয়না অধীর সেইতো মহাবীর তার করুনা যাচে,
উথাল গাঙের পাতাল ছোয়া মাতাল ঢেউয়ের নিদানেও মানুষ বাঁচে,
কতজনা অনাহারে যেন মরেমরে, যাসনে ভুলে তোরতো আছে ঘরে, একদিনের চালডাল ॥
একটু ধর্য্য ধরো,
তার করুনা কামনা করো,
বিশ্বাস রাখো নির্ভর কর তার চরনে পড়ো,
বিধাতা একক নিমেষে সব পারেন ও করেন সে ই সবার বড়,
যে করেছে সৃজন দিয়েছে এ জীবন করছে লালণ পালণ, সে ই করিবেন উদ্ধার করিছেন দেখভাল ॥