পর্ব - ০১


এক বাড়ীওয়ালা ॥
শিক্ষিত ফিটফাট ও দারুন স্মার্ট,
নেই সময় করিবে কারো সনে কিছুক্ষণ বসে চাট,
রাজী হয়না, বলে না না খাবেনা সে চা এক পেয়ালা ॥
একবার প্রতি মাসে,
একদিনই সে এখানে আসে,
মাসের দ্বীতিয় সপ্তাহের শুক্রবার,
দশ তারিখের দুএক দিন আগে বা পরে তার,
আর ঐ দিনই ভাড়া চাই, নেই আর কোন অজুহাত আপোষ ছাড়,
তাই মাঝেমাঝে এসে হৈ চৈ হাকডাক সে করে মেলা ॥
সংগে আসে দাড়োয়ান,
রহিলে পাশে যেন তিনি স্বস্তি পান,
লম্বা দেহটায় মনেহয় যেন সে পাঠান,
গাত্র বর্ণ বলে হয়ত হবে সে কোন আফ্রিকান,
তা যাই হোক যদিও দেখতে কালো,
আসলে ভাই সে, মানুষ অতিশয় ভালো,
মটর চালায়, যখন যা প্রয়োজন, গেট খুলে দেয় ও লাগায় তালা ॥
আসে নিয়মের বাহিরে,
যদিরে কোন জরুরী প্রয়োজন পড়ে,
তা ৫/৭/১০ দিন হতে পারে হয়তোবা সারা বছরে,
হয় অপ্রত্যাশিত কোন বাড়তি সমস্যা, মেরামত কিবা ঝামেলা ॥
কোন কোন ভাড়াটিয়া,
বিরক্তি আর অশ্রদ্ধায় মন ভরিয়া,
যায়নি বাসা ছেড়ে তাই যায়নি তা ভুলিয়া,
সব আচরণ ও কথাগুলি রেখেছে স্মৃতির শিকায় তুলিয়া,
ক্ষোভে অভিমানে বলে, আরে সে একটা ছোটলোক ফকিন্নির পোলা ॥
আছে একখানা গাড়ী তার,
আর একখানা তার বিবি সাহেবার,
রয়েছে তার লাগি মোট দুইজন ড্রাইভার,
এত ধন তবুও রয়েছে ঘূষের উৎস ও সুযোগ অপার,
কি কপাল লয়ে জন্মেছে সকল মানের সরকারী কর্ম্মচারী ও আমলা ॥


পর্ব - ০২


আহা কি চমৎকার চাকুরী,
পেয়েছে আগারগাঁওয়ে বিশাল দোতলা বাড়ী,
নিজের তিনখানা বাড়ী, ধন আছে মন নেই, যদিও তা কাড়িকাড়ি,
রয়েছে পড়ে তার সামনে পিছনে অনেক জায়গা সবুজ ও খোলামেলা ॥
নিজেই বলে বউ নাকি তার,
সরকারী বালিকা বিদ্যালয়ের এমএ পাশ মাষ্টার,
সে নিজেও একজন বড় অফিসার, আহা সীমা নেই যেই লজ্বার,
নাকি ভাড়া দিয়াছে এক পরিবার, বানিয়ে একটা ঘর টিনের একচালা ॥
চত্বরে নাকি জন্মেছে তার,
অনেক গাছ করেছে জায়গাটা যেন অন্ধকার,
তাই নাকি সে একবার, কেটেছেটে বেঁচে দিয়েছে তার সব ডালপালা ॥
এক ছেলে তার পড়ে কলেজে,
এমনটা মনেহয় যেন সে আসলে রুগ্ন যতই থাকুক সেজে,
বয়সের তুলনায় অনেক ভারী দেহ কেজানে কোন কুক্ষণে পারা পড়েছে তার হাতীর লেজে,
আর মেয়েটা তার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে,
বয়সে ছেলেটার বড়, তবু মনেহয় যেন রুগ্ন হেন অনাহারে আধমরা বহুদিন ধরে,
বেশী ধন আর বেশী ব্যস্ততার মাঝে সন্তান বড় হবার, সচেতন বাবামার সেযে কি জ্বালা ॥
সাত তলা বাড়ীটার,
জায়গাটা নাকি তার পাঁচ কাঠার,
তার ফ্লাট আটাশ খানা,
বাসা খালি থাকেনা খালি পাওয়া যায়না,
বিশাল ফ্লাট একখানা সবার উপরে ছাদে এক কোণে,
বাকী তিন ধার জুড়ে আছে তার নানান ফুলের সমাহার সাজানো সুন্দর বাগানে,
রেলিং এর পাশে ফাঁকা দুহাত,
মৃদু পায়ে চলা পায়চারিতে মনটার মনোহর মাত,
ভাড়াটেদের যেতে মানা,
চাইলেও কেউ হেথা যেতে পারেনা,
কারে বলে বাগানবাড়ী তা দেখিলে তার হয় সে ধারণা,
দেওয়া থাকে তালা যেন একখানা তাজা ফুলের সদ্য সাজানো ডালা ॥
এই বাড়ীতে কোন সময়,
আসল বউ আর মেয়ে তার আসেনা মনেহয়,
শুনেছি দ্বীতিয় স্ত্রী নাকি মাঝেমাঝে,
বাড়ীওয়ালার সনে বেড়াতে আসে, তা নহে কোন কাজে,
ঘুমিয়ে নেয়ে থেকে খেয়ে চলে যায় বেড়িয়ে একদিন একরাত কিবা একবেলা ॥


পর্ব - ০৩


বেশ কিছুদিন পর পর ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে আসে,
সময় কাটে রাতভর আড্ডা পিকনিক এর মজার খানা আর হয়তবা মদ্যপানের উল্লাসে,
ছোটখাটো উৎসব ও খানাপিনা,
ভাড়াটেদের সনে কোন মজলিশ বৈঠক কিবা আলোচনা,
হলে বিনোদন উম্মাদনা দামাল সুরের গানবাজনা সে রাতে কেউ আর ঘুমাতে পারেনা,
যদি কেহ চায় ও অনুমতি পায়, আয়োজন হয় কোন ঘরোয়া উৎসব কিবা মিলন মেলা ॥
হবে একদিন,
বুঝিবে ঐ কিরপিন,
ঝলমলে সবকিছু ধূসর মলিন,
কানার সব ধন সহসাই অচিনে বিলীন,
সবে শোধিতিই হবে, অদেখা রাজার অজানা ঋন,
অনুদার ও ছোট্ট মন যার, নেই কোন দান সেই হিসাবের দিন,  
অনেক স্বপ্ন আশা হবে চূর্ণ কতটুকু তার পাপ কতটুকু পুণ্য ভরপূর পরিপূর্ণ বিশাল একটা চটের ছালা ॥
যত ধনবান সবে,
সব ধন দুনিয়াতে পড়ে রবে,
শূন্য হাতে এক আঁধার রাতে সে ভ্রমন হবে,
সে ধনের নতুন মালিক, হয়তোবা তা বিপথেই ব্যয় করিবে,
বলো তারে কে রুধিবে কে ধরিবে, সে গুনাহের দায়ে ওরে তুমিও পড়িবে,
এ ভোগবিনোদন,
সঞ্চয় করা সম্বল গড়া আরও ধন,
ধন আর এ দেহটার তরতাজা প্রাণ,
ঐ মহাজন যে করেছে সৃজন কেড়ে নিলে তার সব নেয়ামত ও দান,
নিশ্চয় শেষে গিয়ে ঐ দেশে হবে অবসান, এ কালরোগ ধনের নেশা ও ভোগের পালা ॥
আমি একজন ভাড়াটিয়া তার,
ছিল সবারই একটা বিদ্যুত বিলের সাব-মিটার,
প্রতিটি ফ্লোরের সিড়ির বাতিটা ছিল কোননা কোন এক ভাড়াটিয়ার,
আমিও জানিলাম তা দুবছর পর, কারোই ছিলনা জানা কোন ধারনা এ বিষয়টার,
ভাড়াটিয়ারা সবাই বলে, আমি কেন দেবো সিড়ির বাতির বিল যা আসলে বাড়ীওয়ালার,
সিড়ির বাতিটা কম হলেও ষোল ঘন্টা জ্বলে, আর নাহলেও মাসে বিল আসে একশত টাকা তার ।
সবারই তখন হলো খবর,
প্রি-পেইড মিটার যখন এলো তারপর,
ভোগ করবেন আপনারা এটা আপনাদের ব্যাপার,
শুরু হলো তর্ক বিতর্ক বাক বিতন্ডা ও মেল দরবার,
বাড়ীওয়ালা বললো আমি দেবোনা, তাই সে নিয়ে হলো এক হট্টগোল ও নতুন ঝামেলা ॥


পর্ব - ০৪


বাতিটা মিটারে যার,
আলোর প্রয়োজন যখন সবারই দরকার,
তাই মাথাব্যথা, কেন বিল দেবে সে ও জরিমানা হবে তার একার,
নিভিয়ে দেয় সে এসে বারবার, আলোটা দরকার নেই যখন আর,
দরজা বন্ধ - কে দেখে আর কত লোক উঠেনামে কে হিসাব রাখে বলো তার,
জ্বালিয়ে দিত, যখন তখন ইচ্ছেমত, খেয়াল হতো যার এমন কি দিনেরও বেলা ॥
সে রণে বুঝি শেষে আমারই শুধু হয়েছিল হার,
বাড়ীওয়ালা ভাড়াটিয়া কেউ দেয়নি বিল আমি আজও দিচ্ছি তার,
প্রতি ফ্লাটের ভাড়া পনর হাজার,
চার লাখ বিশহাজার তার মাসে রোজগার,
জানিনা কি দরকার, ঐ বাড়ীওয়ালার এত টাকার,
দুদিনে একবার সিড়ি ঝাড়ু দেওয়া মোছা ও করা পরিস্কার,
প্রতি মাসে একশত টাকা করে বাড়ীওয়ালা বিল নেয় তার,
তবুও কেন বোঝা হলো তার, ঐ সামাণ্য বিলের টাকা সিড়ির বাতিটার ।
হয়ত এমন ভাড়াটিয়াও আছে এখানে যার,
মাসিক কষ্টের রোজগার, শুধু মাত্র বিশ/ত্রিশ হাজার,
আমার বড় ইচ্ছে করে,
ঐ ধনীদের সব ধন জড়ো করে তাদেরে এনে এক আসরে,
পড়িয়ে দেই গলে মাটিতে ছুয়ে থাকে ঝুলে লক্ষ টাকার নোটে গাঁথা একটা বিশাল মালা ॥
চাই শুধু ধন আর ধন,
কেজানে তার চাহিদা কার মিটিবে কখন,
সে কি নেশাময় এক পিয়াস নাকি আসলেই রয়েছে প্রয়োজন,
বারবার প্রমানিত কারো ধন যত বাড়ে, যেন তার দ্বিগুন হারে ছোট হয়ে যায় তত মন,
অনুভবে চেতনায় শুধু সে ই দেখিতে পায় যার আছে তৃতীয় নয়ন, সে এক এমন দারুণ মজার জীবন খেলা ॥