শুরু হলো সেই বেদনাময় করুণ গল্পটার ॥
সৎ শ্বাশুড়ী মা’র,
ঐ মেয়ে ও জামাতার,
যেন এ যূগের ক্ষুদে জমিদার,
ছিল ঢাকায় তিন তিনটে বাড়ী আর,
সকলের একটি করে গাড়ী,
আলমারিতে থরেথরে টাকা সারি সারি,
সাজানো দামী দামী শাড়ী ও সোনাদানা ছিল কাড়ি কাড়ি,
আয়েশ আরাম ভোগবিনোদন কতনা সুখ সম্ভার ও প্রাচুর্য্যের সমাহার ॥
খানসামা আরদালী,
পাইক পেয়াদা প্রহরী মালী,
তারা এসেছে এ ভবে,
মোখ বুজে নয়নভরে দেখিতে সবে,
না বহিলে না সহিলে আর কে বহিবে সহিবে তবে,
কাজ করে দিন এনে দিন খায় এমন ন্বিঃস্ব দূর্বল অসহায় হয়েছে যবে,  
কেউকি কাউকে দেয়, ধনীরা বরং ঠকায় ও হক্ কেড়ে নেয়, নাকি কভূ দেবে তাই চাহিলেও আর কি হবে,
লোভ লালসার ফাঁসী আর, হাত লাগালেই হাত কাটার, মাথার উপর ঝুলছে তাদের খর্গ হাতিয়ার ॥
ছিল তাদের গ্রামে,
অন্তরালে কত কলংকের ইতিহাস থাকে কত আভিজাত্য ও সুনামে,
হয়তো একদিন কে কিভাবে কেজানে কিনেছিল কিনা, নাকি তা ছলে বলে কৌশলে কিবা পানির দামে,
আহা তাদের হাজার মন ধানের জমি,
আজ কেন তা শত মনে এসে যেন চোখের নিমেষে ঠেকেছে কমি,
এমন মনিব প্রভূ রাজা,
ছোটবড় মন্দভালো সহস্র শতাব্দীর পুরাতন কিবা তাজা,
অম্লান অক্ষত যার কাছে, সব খবর ও সব খতিয়ান রক্ষিত আছে, রবে মহাকাল সকল প্রাণী ও প্রজার ॥
একটা বিশাল রাজপুরী,
ধীরে ধীরে ছাই হলো অদেখা অনলে পুড়ি,
শুনেছি ঞ্জানীগুনী লোকেরা কয়,
তুষের অনলের মত জ্বলে অবিরত সে অবক্ষয়,
পাপের ধন নাকি তিন পুরুষের বেশী টিকে নাহি রয়,
ভিতরে ঘুণে ধরে পড়েনা নজরে তবে হতেই থাকে ক্ষয়,
যে ক্ষত আর কোনদিন হয়না ভালো ঠেকাবার মতও তা নয়,
লৌহ ফটক-প্রাচীর দূর্গম দূর্গ সোনার সিংহাসন শাহী মহল কেড়ে লয়,
ঐ সে মহান রাজার,
ঐ সবকিছুর ষোলআনা মালিকানা ছিল যার,
এখনও আছে রবে চীরকাল আর, মানুষের তরে তার করুনার দান নেয়ামত উপহার ও শাস্তি পুরস্কার ॥


চলুন এবার,
একটা গল্প বলি তার,
শুনুন তাহলে কি হয়েছিল একবার,
দুকূল রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল শ্বাশুড়ী মা’র,
বলছিল তাকে এসে মৃদু হেসে তার স্ত্রী ও তার মায় বারবার,
একজন নতুন জামাই প্রথম যখন বেড়াতে গেলো শ্বশুর বাড়ীতে তার,
তাকেতো একবার,
পাশের গ্রামের প্রাচীন জমিদার,
ওনার বড়লোক সৎ মেয়ের বাড়ীটা দেখানোই দরকার,
তিনপুরুষ আগে তার দাদার দাদা নাকি ছিল কানুনগো পেস্কার,
সেই থেকে নাকি ছিল উত্থান আর ঠিক দেড়শ বছর পরে পতন শুরু এবার,
প্রসংশা নয় বদনাম, কমেছিল বহুগুন তার দাম, হয়েছিল ঐ তাদের সকলের হার,
সে যেন হেথা যায় চানাস্তা ও দুটি ডালভাত খায় কবুল করে দাওয়াত ও মোখ রাখে তার ॥
যারা ক্ষমতাসীন,
ধনজন সম্পদ হয়েছে অধীন,
তাদের কাছে তাবেদারদের কতযে দায়ঋন,
কত সীমানা সত্য সঠিক ন্যায় অন্যায় কিছু বলা যাবেনা অসহায় চীরদিন,
ধনী বড় বোনের বাড়ী,
তাই বুঝি এত বেশী পিড়াপিড়ি,
সে কি আমরা কেউ অবহেলা করতে পারি,
লুকোবার মতো আর কিছুই নাই,
গিয়েছিল বেড়াতে এক সৎ ছোট বোনের জামাই,
ধন আছে মন নাই, যত বেশী ধন তত ছোট মন দেখিলামতো তাই,
নাই বড় গুন তৃতীয় নয়ন তবু ধন আছে বলে করে তারা বড় জাত আর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হবার বড়াই,
যাই হোক ভাই, না বুঝিলেও তার হারের কারন দেখে গিয়েছিল সে জীবনের পতন ও পরিনতি ঠিক পূরোটাই,
শত বছর বয়স পেয়েছিল তাই ঘরে বসে তার সব চড়াই উৎরাই দেখিবার সুযোগ হয়েছিল আমার ঐ বুবুটার ॥
আর যাওয়া হয় নাই খাওয়া থাক দূরে,
ঐ ধনীদের বাড়ী হোক তা গ্রাম কিবা শহর যতই চাকচিক্যের ভুড়ে,
দেখা ও খাওয়াতো ঢের হয়েছে,
অপমান আর কষ্টের কত কথা এই মনে জমা রয়েছে,
গিয়েছিলাম যখন সেদিন ঢাকায় তার ছেলের বাসায় তার জানাজায়,
পূরাতন তিন যূগের সেদিনের সেই স্মৃতিগুলি ফের ভেংগে তার লৌহ প্রাচীর ঘের মনে পড়ে যায়,
কে যায় আর, কি প্রয়োজন তার কিবা দরকার, আপন কিবা পর ধনীদের ত্রিসীমানায় কার ইচ্ছা হয় যাবার ॥
ছড়ানো খর ভরা উঠান,
ভিতরে বাহিরে সিদ্ধ ও কাঁচা সোনালী ধান,
নারী পুরুষ কত কামলা মজুর নানা কাজে ব্যাস্ত ও পেরেশান,
কে তারে গনে সৎ ছোট বোনের জামাই একজন অতি সাধারন তুচ্ছ নগন্য মেহমান,
আপ্যায়নে আয়োজনে খাবারের মান কিবা পরিবেশনে ছিলনা বিশেষ কিবা ভিন্নকিছু সামান্যতম কোন ব্যাবধান,
সবকিছু যেন ছিল এমন ভাবখানা পর পর,
এইতো বেশী, ছিলনা তেমন কোন আদর কদর কিবা সমাদর,
কোথাও ছিলনা এতটুকু প্রাণ,
জাতের পরিচয় ও তাদের কুটুমের সম্মান,
স্মৃতির শিকায় রেখে দিয়েছিলাম যতনে তুলে ঐ সে বিমর্ষ প্রমান,
বরং ছিল কথায় কাজে বুঝিয়ে দিলো এটা হলো বড়লোকের চিকন অবহেলা ও অপমান,
তা বুঝার মত বয়স ও শিক্ষা দুটোই ছিল তার, ছিল শক্তি হজম করার তাদের ঐ অযাচিত ব্যাবহার ॥
দিনের দশটায় সকালের নাস্তা,
কয়খানা গুড়ের জিলাপী ও মুড়ি আর এক কাপ রঙ চা,
ভাবটা এমন যেন সেইতো অনেক, খেলে খা আর না খেলে তবে এখন যা,
কি বুঝে শেষে কিছুক্ষন পরে দেখি এলো আবার,
একটা সিদ্ধ ডিম আর চিনি ছাড়া দুধ এক কাপ, বুঝিলাম তা ছিল আমার শ্বাশুড়ী মার বাড়তি উপহার ॥
ধনীদের ছোট মন এ জীবনে পেয়েছি তার অনেক প্রমান,
দেখিতে পারেনা নিকট কিবা দূর আত্বীয় বাড়ীতে এমন কোন গরীব মেহমান,
ভাবে আহা কখন যাবে, কাটেনা বেলা কারেও কভূ একবেলা ডালভাত খাওয়াতে তারা নাহি চান,
সে যেন এক বিশাল বাড়তি ঝামেলা দেওয়া চানাস্তা এক পেয়ালা ও একখিলি পান তাতেই তারা টিকিয়ে রাখে ঐ মেকি আভিজাত্যখান,
জানিনা কেনরে কুটুমের তরে,
এ যূগের মানুষের কেন এত বিরক্তি ঝড়ে পড়ে,
ঐ মানুষেরা কই ভাবতো যারা মেহমান এলে বরকতে যায় ঘর ভরে,
হোকনা মা দুই, আমি আর তুইতো একই পিতার সন্তান,
মানুষেরে অবঞ্জা অবহেলা করে পাপের বোঝাটা ভরে কত সে নাফরমান,
বিধাতার নেয়ামত দানের করেনা শুকরিয়া স্বরন নেই তার কোন অবদান বিনিময় প্রতিদান,
রক্তের বংশের এলাকার কিবা পাতানো আত্বীয়তার কেউ নয় পথচারী অপরিচিত মুসাফির তারাওতো বিধাতার মেহমান,
মহান দাতা বিধাতায় দিয়ে ধন চায় মন আবার ইচ্ছে হয় যখন নহে অকারন যূগে যূগে ওরে তা কেড়ে নিয়ে যান,
শুধু মরনে নয়,
জীবনেও হয় কত জীবনের পরাজয়,
বলো বিধাতার ধন কি প্রয়োজন কেন সে ফের তা কেড়ে লয়,
জগতের যত সুখ ধনজন নেয়ামত তারইতো দান ছড়িয়ে বিলিয়ে ছিটিয়ে দেন সারা বিশ্বময়,
মানুষের অধঃপতন হয়, অন্য কেউ তার জন্য দায়ী নয়, তারই কথায় ও কর্ম্মে যা নিশ্চিত পাওনা হয় যার ॥
কে তোমরা ধন,
হে জগতের পন্ডিত মানুষগন,
কেমনে কবে তোমরা সবে করেছ তা উপার্জন,
কারো সাধন হয় কারো নয় কারো পরাজয় পতন তার কি কারন,
যখন যাবে তার কাছে জায় জায় বালামে সব লেখা আছে নিশ্চিত নিশ্চয় তা করিবে দরশন,
আবার কেমনে কবে কোনখাতে কোনপথে ব্যায় করেছ তোমরা সবে, হিসাব লবেন তা দাদনের মহাজন,
চলো তা দেখি খুলে গুপ্ত নয়ন,
কেমনে চলে এ মহা সৃজন ধ্বংস নিধন,
সারাবেলা বিধির এ নিপূন খেলা পলকে হয় সাধন,
কিসের বেসাতি,
না দিয়ে রাজার খাজনাপাতি,
অবাধ্য যারা ভোগ বিণোদন অন্যায় ও যুলূমে মাতি,
ইতিহাস যা বলে,
সেকথা ওরে মিথ্যে না হলে,
আপন কর্ম্মদোষে পড়ে বিধাতার ক্ষিপ্ত রোশানলে,
অপরাধী আসামী কত কওম নিজের ভূলে হয়ে ঋন খেলাপী নাম লিখিয়ে নাফরমানের দলে,
সব লেখা আছে বিশ্ব ধর্ম্মবইয়ে তোমাদের কাছে নিমেষে হয়েছে নিধন মাটির উপরে তলে ও আকাশে জলে,
ধনজন স্মৃতি চিহ্ন হারা হয়েছে তারা এমন কত রাজা বাদশাহ হাজার হাজার জমিদার ও রাজ পরিবার ॥
এ নহে মোর অভিশাপ, আমিও নহে কোন দরবেশ,
দুনিয়ার এ জীবন আর মানুষের সব বাহাদুরি ও ক্ষমতারই আছে শেষ,
যাবেনা বিফল নিতেই হবে তার যথা প্রতিফল পরিনাম আখেরাত অবধি রহে যেই রেশ,
একদিন মাথায় লয়ে অদেখা বিশাল দায়ঋন সব ছেড়ে সব ফেলে অসহায় হয়ে সবাই হবে নিরুদ্দেশ,
কেমন মানুষ নাই কোন ভাবনা ভয় ও লাজ,
এ জাহান যার তাতো ঐ মহিম ও মহান রাজারই রেওয়াজ,
মূল্যহীন নয় মহামূল্যবাণ মানুষের জীবনের মন্দভালো ছোটবড় সব কথা ও কাজ,
বাদশা ফকির, যত সেনাপতি মহাবীর, নিতেই হবে নিশ্চিত পাবে যে যার আপন অর্জিত শাস্তি পুরস্কার ॥
মানুষের মন,
সে ও ভিজা নরম কাঁদার মতন,
চাপ দিলে ছাপ লাগে আর সে ছবি রহে আজীবন,
কেউ বলে তা কাঁচের মতন একবার ভাংগিলে আরতো জোড়া লাগেনা কখন,
লোকে বলে আমিও সেই দলে, সে নাকি সমান কথা মানুষের মন ভাংগা আর খোদার ঘর মসজিদ ভাংগন,
হে মূর্খ অর্বাচিন বিত্তশালী ধনবানগন,
এ ধন নহে তোমার একার রাখিও তা স্বরণ,
আছে হকদার, ক্ষুদ্র হলেও তার পাওনাটুকু যার করো তা বিলিবন্টন,  
বিদ্যা ধন ও ক্ষমতার আসন যাই বলো কারো সনে পর কি আপন কখনো করোনা এমন আচরণ খবরদার ॥
মহাবিদ্যান ও পন্ডিতগন,
একদিন ওরে সবারই হবেযে মরন,
ঐ মরনে তব ধনজন সবকিছুই করিবে হরন,
বাপ দাদা পূত ও নাতি,
পদতলে না রহে মাটি মাথার উপরে ছাতি,
যদি নাঁচে গানে ও মদ্যপানে ঐ সকলে রহেগো মাতি,
তবে কে কার লবে খবর, করবে দান ও দোয়া কবরে দেবে বাতি,
তোমার সৃষ্টি কূলের যে শ্রেষ্ঠ সবার হে প্রভূ তবে কি তার হবে হার যাবে জাতি,
দায়গুলি মোর না হতে সমাপন যদি আসেরে সমন না হয় তা আর কভূ ভোর আসে এমন রাতি,
ছাত্র বিনা পাঠশালাটা,
কোন কালিমার বন্য ছায়ার ঘনঘটা,
মরা নদীর ভেসে উঠা চরে চলছে এখন ভাটা,
পথের বাঁকে লুকিয়ে থাকা তীক্ষ্ন কাঁটার গুচ্ছ ঝাটা,
দেখি যেন ভিতর হতে সব ঐ জানালা দুয়ারগুলির খিড়কি আঁটা,
তবে ব্যার্থ নয়কি আমার এ বিজনে হাটা আর ডুবেভেসে গহীনে সাঁতারকাটা,
সারা দিবস ব্যার্থ নিরস বাণী ও পাঠ গোধূলী ধূসর দিগন্তহীন মাঠ একেবারে বেকার খাটা,
আলো ও ভালোর চাষ বেসাতি পুলক ও পসার বলো তবে কে হবে বাহক আর কে লবে তার দায়ভার ॥