ভূমিকা - জীবন দরশনে পাওয়া এ এক সাধারণ কলম চিত্র, আধুনিক মেকি সমাজটার । ভিতরে কত অন্যায়, অপরাধ ও কালিমা রয়েছে তার, অন্তরালে স্মৃতির দেয়ালে ঝাপসা মলিন ছবি কষ্ট-বিষাদ ও যাতনার সমাহার । আর বাহিরে মাখানো ভরানো সাজানো নানা রঙের বাহার । অব্যক্ত ও অদৃশ্যমান, নাই কোন যার স্বাক্ষী প্রমাণ, নেই কোন প্রকাশ ও প্রচার । হয়তো রয়েছে তার অনেক কারণ, বিবি সাহেবা কর্তৃক সাহেবেরে তার করা নির্যাতন । জীবন মানে - সুখ নয় তবু সুখের অভিনয়, গোজামিল আর অনেক সহন । তা নহে একদিন একবেলা, নিত্য সারাবেলা আজীবন অবিরাম শুধু ঠেলা আর ঠেলা, এমন একটা বোঝাই ঠেলাগাড়ী । পিপড়ায় পারে, কেন তবে আমি এ রণে যাবো হারি, হোকনা তা যতই ভারী আর ওজন তার ওরে হাজার টন । কেউ কারো নয় এইতো চির সত্য এ জীবন, যতই ভার ও যতই কঠিন নিজেই করিতে হয় নিজের ভার বহন । শোধ হবে তাতে রাজার ঋন ও খুশী হবে দাদনের মহাজন ।  


পাঁচালী-০১


আকাশের নীল খাতায় তার অনেক লেখা,
বহুদিন আগে আর একবার, হয়েছিল তার সনে আমার দেখা,
এক তীর্থ ভ্রমণে যাবার পথে যখন আমরা দুজনেই ওরে ধূসর ঐ মরু প্রান্তরে ছিলেম একা,
ছিল সংসার সবই তার,
তবে ছিলনা যার কোন যাদুর আকর্ষণ, মোহ-সুখ ও ভোগ-বিনোদন কিবা রঙের বাহার ॥  
মনেহয় যেন বড় অসহায় আর,
বড়ই একা এ জগতে যেন কেউ নেই আপন তার,
একদা তার মোখেই শোনা ঐ কষ্টগুলি যার অন্তরালে বুকটা রেখেছিল করে ভার,
বড়ই কাছের মানুষ অতিশয় আপন, সে কি সঠিক নাকি প্রহসন, এ গল্পটা এমনই একজন বুড়ো আদর্শ বাবার ॥
মোর এক বন্ধুর জীবন,
ছিল যার অফুরান বহন, সহন, ত্যাগ ও বিসর্জন,
কেমনে বন্ধু বলি, আজীবন একসংগে চলি, কষ্টগুলি আমি তার বুঝিনি যখন,
রঙীন এ ভুবন ও সাজানো জীবন,
কারো লাগি সহস্র শত ফুটন্ত ফুল বাগিচা আবার কারো তরে তা যেন এক পোড়াবন ।
যে যাই বলুক ওরে, সেতো সফল সেইজন,
প্রাপ্তিও কম নহে তার, আমি নিশ্চিত যার হয়েছে সকল সাধনার সাধন,
কথা মিথ্যে নয়, সেইতো সফল তারই হয়েছে বিজয়, আর নয় কানা তৃতীয় ঐ চক্ষুখানা ফুটেছে যার ॥  
কেন নয়, ঘরে রয়েছে যার,
বলো কি বাকী আর, কোন্ রতন সম্ভার কি চাই তার,
আসল মানুষ ও ধন্য জীবন,
সাচ্চা মুসলমান আর ঐশী আলোয় দীক্ষা পাওয়া ঐ জলেতে ডুবিয়ে নাওয়া সন্তানগণ,  
সেইতো সাফল্য বিজয়,
সব হারিয়েও মরণের কাছে হেরে কিবা ঠকে যাওয়া নয়,
শাস্তি নহে বরং ঢের মহাপুরস্কার,
মহাজনে দিয়েছে এ ভুবনে, এমন সঞ্চয় সম্বল আর মহৎ অর্জন-উপার্জন বলো হয়েছে কজনার ॥  
যা শুনিতেছি আজ এখন,
তার ঐ সফল দুঃসহ কঠিন জীবন রণ,
কেমনে বুঝিব, ভাগ নেবো অল্প তার সে অপার সহন,
ছোট্ট ঠেলাগাড়ীটায়, যেন প্রাণ যায়যায়, হেন এক উঁচু টাল বোঝাই ভার বহন,
লুকানো তার সে গল্প কহন,
বলেনিতো তাই আগে আমি ভাই তা শুনিনি কখন,
এমন বন্ধু কি দরকার, কেন আমি পারিনি একটু ভাগ নিতে তার সে অপার কষ্ট বেদনার ॥
আজ বড় কষ্ট লাগে,
সহানুভুতি ও সমবেদনা জাগে,
নাহয় রেখেছিল সে সযতনে সব লুকিয়ে ঢেকে,
বুঝি এই ভয়, নাজানি হয় জানাজানি, শেষে কে কি কয় তা ফেলে দেখে,
মোখ দেখেকি বলো হায়,
মানুষ চেনা, কারো মনটা দেখা কিবা বুঝা যায়,
বাহির সাজানো কত পরিপাটি বাহারে, সুখ-দুঃক্ষ রয়েছে আহারে ভিতরে লুকানো কেজানে কতটুকু কার ॥    
খেতে কেউ ডাকেনা,
তার লাগি কেউ বসেও থাকেনা,
এলো কি এলোনা খেলো কি খেলোনা কেউ তা গায়ে মাখেনা,
পরিবারের কোন কথাতেই,
কিবা মন্দভালো ছোটবড় কোন কিছুতেই সে নেই,
কোন কাজ নেই, ছাড়া তার শুধু লেখাপড়া আর নিদ্রা যাওয়া, স্নান, নামাজ ও আহার ॥
সুখ কারে কয়,
সবাই করে সুখ সুখ অভিনয়,
আপন গোপন গোজামিলে, মিশে অসীমের নীলে শূন্যতা ভরে রয়,
কারেও কিছু নাহি বলা, আপন ভুবনে আপনার মত চলা সেওতো এক বিশাল বিজয়,
আছেতো তার খানা,
টেবিলে বেড়ে রাখা দিয়ে ঢাকনা,
কিবা হয় ফ্রিজে নাহয় রান্না ঘরে হাড়িতে নিশ্চিত জানা,
তাই এ নিয়ে আর নাই কোন মাথাব্যথা কারো ভাই এতটুকু ভাবনা,
এত সময় কারো নাই, যেন অতিশয় ব্যস্ত সবাই, আপন আপন কাজেতে যে যার ॥
আপন রুচি ও খেয়ালে,
তার পছন্দে হয় বাজার করা গিন্নী সাহেবা চলে,
খুব চটে যান সে কভূ তার টিভি দেখার একটু ব্যাঘাত হলে,
অনেক ভুল ব্যর্থতা ও পরাজয় ঘরের সবাইতো ঐ একই কথা বলে,
ছেলেমেয়েদের কেউ নাই কর্তা সাহেব অথর্ব্য স্বামী ও অভাগা ঐ বাবার দলে,
যদিও স্বজন পড়শী ও পরিচিতগণ সবাই তার সুনাম, সফলতা ও প্রশংসাতেই যায় গলে, বলে সাবাস চমৎকার ॥


পাঁচালী-০২


ঘরে একজনই আসামী,
শুধু ঐ বেগম সাহেবার অযোগ্য স্বামী,
প্রাপ্তিটা নয়, অপ্রাপ্তিটার,
অহেতুক চেঁচামেচি ও চিৎকার,
অনেক অভিযোগ, অভিমান ও ক্ষোভ তার,
সঞ্চিত মনে প্রকাশ বচনে তিক্ত ক্ষিপ্ত আচরণ ও ব্যবহার,
করেছে রাজ্য জয় চোখের জলে, টেনে নিয়ে তার দলে, করে হাহাকার,
অনুভবে চেতনায় টান পড়েছে সন্তুষ্টি ও কৃতঞ্জতায়, তাদের মাতা করেছে সবার বোধ বিবেক বিবেচনা ছারখার ॥
আসেনা কেউ তারে ভাত বেড়ে দিতে,
তেমনি খায় ছোট্টবেলায় যেমনি খেতো বাবার বাড়ীতে,
মায়ের ঘুম না ভাংগিয়ে নিজের হাতে নিয়ে লেখাপড়া শেষ করে দেরিতে,
হারিকেনের মৃদু আলোয় যেন কারো ঘুমের ক্ষতি না হয়, মাটির বাসনে বসে কাঠের পিড়িতে,
পড়ন্ত বেলায় ভাটির টানে মাঝ নদীতে,
আজ যেন সে হায় বালুচরে আটকা পড়ে বন্দি এক অচল বিজন ফেরিতে,
তার ইচ্ছে হলে,
কিবা সময় পেলে যাবে এসে গিলে,
ডাইনিং টেবিলে দিয়ে ঢাকনা, নিশ্চিত জানা নেই কোন মানা, কখনও বাড়া থাকে কখনও থাকেনা খাবার ॥
তাকে পাওয়া যায় ঐ তার ঠিকানা,
পাতানো রয়েছে তার মশারি ও বিছানা,
ছোট্ট কক্ষ আর ছোট টেবিল-চেয়ার একখানা,
বারান্দায় বসেই হয়, চুপচাপ ভাবনার জালবোনা,
পত্রিকা পড়া, ফাঁকা পেলে মাঝেমাঝে টিভির খবর শোনা,
চেয়ারে থাকে বসে নাহলে পায়চারি করে তার ঘরের এক কোণা,
একটা খাতা ও কয়খানা কলম,
অবসর যেন তার নেই একেবারে একদম,
শান্ত মৌন নিরবতা তার প্রিয় সংগ,
হৈচৈ কলরব চিৎকার শব্দ করে তার গবেষণা ভংগ,
বেশী কথাবলা তার পছন্দ কম,
জোরে কথাবলাও তার কাছে যেন বজ্র সম তাই মহাযম,
শুধু লেখা ও পড়া,
তাছাড়া আর কিইবা করা,
এই তার কাজ, যেন প্রিয় কিছু গড়া,
জীবনের ছবিগুলো কলমে-কাগজে আটকে ধরা,
হরদম সম্বল ও সংগী যেন তার,
মোটামোটা কিছু বই আর, সব ভুলে থেকে দম ফালাবার, একটা অতি প্রিয় লেপটপ-ছোট কম্পিউটার ॥
ছিল সারাটা জীবন,
কাজ আর কাজ তার নিত্য অনুক্ষণ,
বাসাভাড়া ও দোকান বাকী দিতেই হবে তাকে সময় মতন,
পায়পায় কত ঋন আর দায়, পিছু লেগে ছিল তার আজও আছে ঐ শত অনটন,
অন্ন বস্ত্র বইখাতা কলম রাবার পেন্সিল ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজের বেতন ও সাপ্তাহিক রেশন,
কিছু বকেয়া দেনার জ্বালাতন, টানাপোড়ন, পেরেশানি, তাড়না, ভাবনা ও পিছুটান সংগী হয়ে আজীবন ছিল তার ॥


পাঁচালী-০৩


তবু পায়ে পায়ে বহুদূর আসা,
তা যেন ছিল তার এক জলহীন মরু পিপাসা,
যদিও ছিলনা আগামী দিনের কোন ভাবনা কিবা রঙীন স্বপ্ন আশা,
তাই বলেকি ছিলনা তার স্ত্রী ও সন্তানের প্রতি পরম অপার আকুল মোহ ভালবাসা,
ক্লান্ত তার ঐ দেহখানি,
ছিল যেন এক ঠেলাগাড়ী কিবা চিটচিটে অঁচল ঘানী,
থামা নেই চলছেই টানি টানি, রয়েছে স্বরণ তার যেতে হবে প্রান্তে সেটুকু জানি,
বধূয়া তার সদা ক্ষিপ্ত অভিমানি,
মসলিন শাড়ী আর সেজে সোনার অলংকারে সাজিবে সে রাজরানী,
জগতে তারা কয়জন, এ জীবনটারে যারা করেছে দরশন, খুলেছে তৃতীয় নয়ন আর বন্ধ মনের সকল জানালা দুয়ার ॥
গড়বো প্রাসাদ,
পেতে জীবনের সুমধুর স্বাদ,
কেমনে দূরিব আমি বেগমের হতাশা বিষাদ,
দেখেছি এ জীবনে আমি, কত সোনার জীবন হয়েছে বরবাদ,
রাজার বিত্তধন ভোগবিনোদন ও সিংহাসন আনে কলংকময় পরাজয় ও হয় মরণ ফাঁদ,  
নহে ক্ষিপ্র মৃগ কিবা কোন খরগোসও নয়,
কচ্ছপের চলন ভারি, গতি তার অতি মন্থর তবুতো সে পেয়েছে বিজয়,
সে ছিল এক দূরন্ত সাহসী সফর, এসেছে তেরোনদী সাতসাগর ও ধূসর মরু সাহারা হয়ে পার ॥
পড়ন্ত বেলা,
একাকি পথ চলা,
কাউকেই কিছু না বলা,
ছিলনা তার কোনই সঞ্চয়,
ভবিষ্যতের দুঃসময়ের ভাবনা ও ভয়,  
আয় উপার্জনটাতো সংসার খরচেরও সমান নয়,
জীবন যদি এক অকূল নদী, দিন এনে দিন খাবার মতন হয়,
একহাতের কামাই, কোন কালো টাকা নাই, সঞ্চয় কেমনে হবে ভাই নিরবে সয়েছে একাই বয়েছে সে ঐ কঠিন ভার ॥
অতি বোঁকা ছিলেম আমি নাহয়,
কিছুই করিনি বা পারিনি করিতে কোন বিজয়,
রাতারাতি হয়ে যায় কোটিপতি, সবারইতো ঐ সাধনা নয়,
করেছি নাকি আমি শুধু নানা ভুল, এনেছে তাই ব্যর্থতা আর পরাজয়,
হয়নি সাধনার সাধন যার, এমনই একজন ঘরে বাহিরে ছিলযে তাই মোর পরিচয়,  
অনুভবে চেতনায়,
সেদিন কিবা আজ কেউ নাহি দেখিতে পায়,
কেন অন্যে বহিবে মোর দায়, এমন জীবন যার, কেবা তার ভাগ নিতে চায় ঐ সে কষ্টগুলি তার ॥


পাঁচালী-০৪


হতে পারে তা এক মূর্খের ভাবা,
আসলে আমি নহে সেইজন, হতভাগা এক হাবা,
অপদার্থ অকর্ম্মন্য নগন্য স্বামী, একেবারে কমদামী এক ব্যর্থ বাবা,
এক মায়ার বাধন ছেলেমেয়েরা ছিল নয়জন,
সমালোচনায় মুখর, দুঃসময়ে হয়ে যায় পর, কত আপন ভাইবন্ধু স্বজন,
কত প্রয়োজন সমবেদনা সাদামাটা অতি সাধারণ, নির্মম এক যাতাকলের পেষণ ছিল এমনই যেন ঐ জীবন সংসার ॥
শুনেছি আমি দিয়ে মন,
তার ঐ দুঃসময়টার করুণ কহন,
যায়নি করিতে পারা তার ব্যায় সংকোচন,
পারিনি আমি হায়, বাড়াতেও কভু মোর আয় উপার্জন,
কেমনে তা হবে সেইতো ছিল বড় দায় মেটানো সবগুলি জরুরী প্রয়োজন,
ইচ্ছে হয় যেমন কিবা যা চাহে মন, না পেলে নিয়তির ছাড় ও বিবেকের সমর্থন তা কিরে হয় জীবন,
কত সীমানা কত বাধ ও বাধা ছিল কতযে অনুশাসন, আমি পারিনি হতে যা কোনদিনই ডিঙিয়ে পার ॥
পাইনি বিত্তধন তবু হইনি কভু কাঙাল,
তবু বাতাসে টাঙিয়ে দিয়ে ছিন্ন আমার মলিন পাল,
পাইনি ছিলনা ওরে, রবির সোনালী আলোয় ভরা নিত্য সকাল,
আসিত সাঝ হয়ে যেন গোঁধূলীর রঙ মাখানো ভয় দেখানো এক ক্ষিণ প্রদীপের হাল,
আজও করতে হবে অল্প টাকার বাজার, আগে কি কি জরুরী দরকার তারপর হবে শাক-সবজী ও ডাল,
ছিল নানা ভাবনার দোটানা দোল,
বড় জোর মাসে একবার হতো পোষা মুরগীর আলুর ঝোল,
মাঝে মাঝে পেতাম দুধকলা একটু গুড় আর কদাচিৎ বড় মাছের ছোট টুকরার পিঠ কিবা কোল,
তাই নিয়ে তুচ্ছ কারণে পিঠাপিঠি ভাইবোনে ঝগড়া মারামারি চিৎকার চেচামেচি পড়তো সে কি মহারোল কান্নার ॥  
চাওয়া ও পাওয়া না পাওয়ার অমিলে ভরা,
সুখের চেয়েও যেন তা সেদিন কষ্ট বিষাদে ছিল কড়া,
এ দেহে থেকেও প্রাণ যেন তা ছিল ম্রিয়মাণ একেবারে আধমরা,
নেই রঙ নেই কোন হরষের খেলা,
নতুন জামা ও খেলনা বেলুনের বিনোদন মেলা,
মরমের কষ্টের ঐ ক্ষণগুলি কেটেছে মোর বিজনে বসে থেকে একেলা,
জীবনের ঐ হিসাবটা যেন ছিল পোড়ামাটির, তাই বুঝি লাগেনি জোড়া ঐ চির, হাতপা ভাংগা ও খোড়া হেন টুটাফাটা ছিল যার ॥  
ঘরের সবার শত অভিযোগ অপবাদ,
সামাণ্য সুখটুকু মোর ভরে দিত ঐ কটু কথার তিক্ত বিষাদ,
চুপ করে সব শোনা, না শোনার ভান করা ছিলনা তাতে মোর কোন প্রতিবাদ,
আগে যেমন ছিল একটু মধুমাখা একটু যাদু ভরানো এখনও তাই চারপাশে ছড়ানো সে এক অদৃশ্য ফাঁদ,
চুপ করে নিতে চাই জীবনের স্বাদ, শুনেছি সেই কবে বাবামার কাছে, আজও তা ঠিক মনে আছে কোন শত্রু নাকি নাই বোবার ॥


পাঁচালী-০৫


বাক কিবা ভাষাহীন,
থাক কপালে কষ্টের ভাবনার চিন,
কোন সে বেদনায় নয়ন বদন হেন বিষন্ন মলিন,
মাথাভারী অনাদায় যেন পড়ে আছে হায় কত দায় দেনা ঋন,
ওরে আমি তাই ইচ্ছে করেই ভাই, হয়েছি মূক-বধীর আর তা হয়েছে অনেকদিন,
আহত পাখীর মত, সারাক্ষণ ক্রন্দন রত, নিরব নাবলা বেদনার বুকেতে লুকানো এক অসীম অস্ফুট হাহাকার ॥
ঝাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝড়,
দুহাতে আঁকড়ে তবু রয়েছি পড়ে এই ঘর,
চেয়েছে মন কত সুখ বিনোদন, দুহাতে ঠেলে তা করে পর,
এই করে করে কোন ফাঁকে পার হয়ে গেছে ওরে মোর জীবনের পয়ষট্টি বছর,
নিত্য ঢেলে জল কি আশায় চারাগুলো লাগিয়ে রাখা,
সে কি আজিকে বিফল শূন্য হাতে কোণঠাসা হয়ে মোর ঘরে বসে থাকা,
চাকরী গেছে এখন আর কাজ নেই, নেই বেতন কোন উপার্জন হাতে মোর তেমন কোন টাকা,
যা পায়নি তার লাগি নাকি জীবন বিফলে,
যা পেয়েছে তার খতিয়ান কই, কি করিবে এখন তার মূল্য দিতে হলে,
আমার দীনতা অক্ষমতা ব্যর্থতা বা অপারগতার,
দেয়না ছাড় পাইনা ছাড়া, নানা ভাষায় নানা সুরে করিত তারা, আজও করে ভর্ৎসনা, নিন্দা ও তিরস্কার ॥
বলো তবে হায় এত করেছি আমি কার লাগি,
রাজার দুয়ারে গিয়ে বারবার দুহাত পেতে তার দান আর সহস্রবার করুণা মাগি,
এত আদর যতন সেবা উৎকন্ঠা দূর্ভাবনা আজীবন, ঘুমটা ছিল যখন অতি প্রয়োজন তখন রাত্রি জাগি,
বাবামা এখন,
বুড়োবুড়ি এই দুইজন,
করেছিল যারা ত্যাগ দিয়ে বিসর্জন,
হয়েছে বাড়তি দায় ঝামেলা ও পিছুটান অকারণ,
যারা ওরে পঁচিশ বছর ধরে পিঠেকাঁধে করে করেছে লালন পালন,
কোন লোভে কোন লাভে কি আশায়,
প্রাণ প্রিয় সন্তান পেটে ধরে আপ্রাণ চেষ্টায় বড় করে বলো বাবামায়,
এত কৃচ্ছতা বলো তবে কার জন্য,
এত সাধনা এত পঠন গেল কই, কেন উগ্র ও বন্য,
তবে এখন কই যাই, এ ঘর-সংসার যদি ওরে মনেহয় যেন এক অরণ্য,  
এত সহন, এত বহন, এত করা তবে কি অর্থহীন অকারণ ঋন করিতে তাদের জীবন সুন্দর ও ধন্য,
তবে অতী সাধারণ সাদামাটা এ জীবন কাদের লাগি, ঐ অথই পাথার সাঁতরে সাঁতরে আমি করেছি পার ॥


পাঁচালী-০৬


সেদিনের ঐ ছোট্ট ছানাগুলির,
বাবামার সোহাগ আদর ছিল যার আশ্রয় নীড়,
আজ ডানা গজিয়েছে, চোখেমোখে মনে এখন কত স্বপ্নআশার ভির,
বড় বড় ঢেউ, আশেপাশে নেই কেউ, নদীর পারে ধরেছে আহারে বিশাল বিশাল চির,
এমন মনেহয় কেন, আমার সামনে যেন, চরভাংগা ঐ রাক্ষুসী নদীর অধীর করা অতি উঁচূ খাড়া তীর,
যেমনই এ সভ্য যূগের চোখে,
মন্দভালো যে যাই বলুক ওরে এ সমাজের লোকে,
যখন কোন নিন্দা মন্দ বিরুপ কিছু শুনি সন্তান ও তাদেরই মায়ের মোখে,
বলো কি করেছ, কি দিয়েছ তুমি আমাদেরকে, তা বর্শার মত যেন বিঁধে এসে মোর বোকে,
গোপনে মনেমনে অন্য পথ বা ঠিকানা খোঁজা, নিজেরে মনেহয় যেন এক বোঝা অতিশয় ভার ॥
সে কি মোর ওরে আসলেই পরাজয়,
তবে কেন নয়, নিজেকে বড়ই অযোগ্য ও অপরাধী বলে মনেহয়,
তাতে মনটা সারাদিন, বাড়ায় ব্যর্থতা ও অক্ষমতার ঋন, আরও বেশী ক্লান্ত ও কাতর হয়ে রয়,
সারাক্ষণ শুধু এই ভয়, আমি যেন একজন চোর, ছিলেম আজীবন মন্দে বিভোর, কাঁটা ঘায়ে নূনের ছিটার শোকে,
পাওয়া না পাওয়ার এই জিত কিবা হার,
কারো কাছে সীমাহীন কষ্টের কারো তরে তা দারুণ মজাদার,
এ খেলা চলছে চলবে,
কোন্ গাছে কেমন ও কত ফল ফলবে,
তাই লয়ে চীরকাল নানা লোকে নানান কথা বলবে,
কেউ শুধু শোনবে আর নিশীদিন সারাবেলা যাতনা তার সইবে, ভেদ বুঝা তার আসলেই খুব কঠিন যার ॥
সবাই কি সবকিছু পারে কিবা পায়,
ওরে তা নহে আবু হকে কহে, কারো তার নিজ যোগ্যতায়,
অনেক জয় পরাজয় ঘটে কিবা হয় কপাল গুনে, তার মানে যা চাহেন দয়াময় বিধাতায়,
অযোগ্য অশিক্ষিত ছোট বংশের সন্তান হায়,
দেখেছি কত হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়,
মিয়ার বেটা, যাই হোক চাচা কি জেঠা ছাতি ধরে তার মাথায়,
আর ঐ ধন শেষে সন্তানেরা দুহাতে তামাসায় লুটায় ও বাতাসে উড়ায়,
কহে গুনীজন শুনেছি হায়,
নাকি শেষে তা শৃগাল কুকুর ও কাকেবকে খায়,  
সব হারামের ধন কিবা অসৎ উপার্জন, তিন পুরুষেই শেষ হয়ে যায়,
পাওয়া না পাওয়ার এই দুনিয়ায়,
কেউ পায় কেউ পায়না কেউবা আবার পেয়েও হারায়,
তা যাই হোক ভাই, কারে দেবে ঐ দোষ কেউতো আর নেবেনা তার দায়,
বিধাতা নির্দোষ, দেয়না দেয় ইচ্ছে হলেই ফের কেড়ে নেয়, হতে পারে তা কর্ম্মফল কিবা পরীক্ষা বিধাতার ॥


পাঁচালী-০৭


সে‘ইতো ওরে দেখেছি জেতে,
ভালো ফসল ফলে তার ঐ ছোট্ট পতিত ক্ষেতে,
হলেও কারো সাময়িক হার,
একটা সময় আসিবেই যখন ওরে তার,
শক্তি রয়েছে যার বেশী সহিবার ও বহিতে বেশী ভার,
সুখতো শুধু মনের ব্যাপার,
সুখ কারে কয়, তা দেখতে কেমন হয় চোখে কার,
মন্দভালো আঁধারআলো সুখদুঃখ হারজিত তা অনুকূলে কিবা বিপরীত সময়টা যার,
পালা বদলের এক মজার খেলা তার আসা যাওয়ার,
হলে বিধাতার সুমতি সব লাভক্ষতি পূষিয়ে যায়, চীরকাল রয়েছে সবকাজে সবখানে জিত কিবা হার ॥
আয়ের তুলনায় ব্যায়টা হায় ছিলযে বেশী,
ছিলনা অসততা কৌশল কুটিলতা কোন সুপারিশ তোষামোদ দূর্নীতি কারচুপি কিবা পেশী,
ছোট চাকুরী কম বেতন,
জানা ছিলনা কেমনে বাড়াই উপার্জন,
এক হাতের সাদা কামাই, ছিল তাই মোর সারাটা জীবন,
দিতে পরিবারের সবার একটু আরাম আর সুন্দর ভবিষ্যত হয়েছে দিতে মোরে সব বিসর্জন,
খরচ অনেক আর উপার্জন ছিল কম,
সেই ছলে, বুঝি আমাকে পেয়েছিল বলে দূর্বল অসহায় ও নরম,
ঐ ভাবনা দিতো মোরে তাড়না, মাঝেমাঝে গোপনে যেন চেপে ধরত আমার দম,
কি করি কই যাই,
ছিলনা কোন পথ যেন কোথাও ঠাই,
কারে বলে আবার আমার অপবাদের ভারটা বাড়াই,
কোনদিকে গিয়ে শেষে দিশা হারাই, সমাধান কোথা পাই খোলা ছিলনা যেন আমার লাগি আর কোন দুয়ার ॥
আজও তা ছেড়ে যায়নি আমায়,
ছিলেম কর্ম্মজীবনে যেমন বড় অসহায়,
অনটনের নিস্পেষণ যেন আজও পিছু পিছু ধায়,
ভাবনাগুলি আসে আর যায়, শুধু মোরে কুড়েকুড়ে খায়,
ঐ সে ব্যার্থতার অভিযোগ ও দায়, নিরবে বয়ে লয়ে এই মাথায়,
এমনই এ জগত সংসার,
সবাই আপন, তবু কেউ যেন নহে কার,
কেউ বহেনা কিবা বহিতে পারেনা যেন কারো সবটুকু ভার,
তবে যার সাধ্য ও মন আছে,
অপার সে সুযোগও রয়েছে যেন তার কাছে,
ছলে দান কিবা সহযোগিতার,
পুণ্যে জীবন ভরে সামাণ্য করে পরের কল্যাণ ও সেবা-উপকার,
হিমশিম পেরেশানি তাড়না, এবার আমায় ছাড়োনা কত সে যাতনা সহিব বহিব আমি আর,
মোর বয়সের ভার,
সাদা চুলদাড়ি ফাঁকা তালুটা মাথার,
দৃষ্টি ক্ষিণ কিছু ঋন ও বাঁকা হয়ে আসা কাঁধ ও ঘার,
আমারে করেছে মূল্যহীন ও পর,
সাধগুলি সব গিলে খেয়েছে, দীনতা আমার ঘর,
হর্ষ বিনোদন দূরাশা ও মিছে তার মনের সব সুখ কেড়ে নিয়েছে যার সীমিত ঐ আয় রোজগার ॥
ছিলনা পৈত্রিক বিত্তধন,
কিবা বিদ্যাও মোর ছিলনা তেমন,
কভু ফিরেও তাকায়নি মোর বড়বড় সব আত্বীয় স্বজন,
দূর থেকে শুধু নিন্দা ও সমালোচনা, এই দোষ ওটা ভালোনা বলেছে শুনেছি সারাক্ষণ,
শুধু একটা বাড়ী নেই বলে,
একটুখানি শুধু ঐ অক্ষমতা ও দীনতার ছলে,
কত ভাষায় কটুকথা শোনায় কেউ নাই দেখি আজ হায় আমার দলে,
কোন কথাই আমারে কেউ বলেনা, বিবেকের তাড়নায় টলেনা আপন খেয়ালে যে যার ইচ্ছেমতই চলে,
চারিদিকে ছিল সীমানার ঘের,
বোধ ও বিবেকের কত বাধা মানা তাও ছিল ঢের,
কেউ নহে কার এ প্রমাণ পেয়েছি শতবার, ক্ষুদ্র কোন ক্ষেত্রও ছিলনা সামাণ্য আশা ও সম্ভাবনা কিবা সহযোগীতার ॥  


পাঁচালী-০৮


কথায় কথায় দেয় মোরে খোটা,
ভাবটা এমন যেন আসবে তেড়ে মারতে মোরে হাতে নিয়ে সোঁটা,  
নাহলে কি চাঁদটারে কভু যায়রে ছোয়া, যতই হওরে তুমি দুধের ধোয়া, হোক সে যতই লম্বা বাঁশের টোটা,  
পুঁজি ছাড়াকি হয় রুজি, বেশী টাকা প্রযোজন,
সুখ বিনোদন ছাড়া সে কিসের জীবন, চাই বাড়ীগাড়ী অনেক বিত্তধন,
কোন কথা বলতে দেয়না করে বারণ,
কোন অপরাধে কেন তারা মোর করেছে বাক হরণ,
কিছু বলতে গেলে অবহেলে দেয় ঠেলে, শোনেনা তা কেউ দিয়ে একটু মন,
আমি নাকি কিছুই জানিনা, বুঝিনা ও পারিনা তাদের সবারই বদ্ধমূল ধারণা এমন,
তারা নাকি সবে তার, পেয়েছে প্রমাণ হাজার, সেকথা তাই বুঝি মোরে তা করায় স্বরণ দিয়ে ঐ অপবাদ বারবার ॥
আমার বাবার ছিল একটাই ঘর,
সুফী ও সাধক বাবার, বয়েছে দিয়ে মাথার উপর,
এমনই তুমুল ঝড়, কাটিয়ে গেছেন কঠিন সময় সারা জনম ভর,
নিজের কোন জায়গা ছিলনা, বাবার পৈত্রিক ঐ জায়গাটাও ছিল ক্ষুদ্র পরিসর,
আমার কোনদিন তাই,
গাঁয়ের বাড়ীতে আর বাড়ী করা হয় নাই,
ভাড়া বাসায় আমার পরিবারকে এই শহরই দিয়েছিল ঠাই,  
কারো চোখে হায় কেন পড়েনা,
কেউ যেন তা কভূ দেখেনা কিবা গণনায়ও ধরেনা,
কেন মোর ছেলেমেয়েদের জীবন হয়েছিল সুন্দর কেউ তা বিবেচনা করেনা,
চাকুরীজীবি ঐ এক দরিদ্র পিতার, শুধু হার নয় অনেক বিজয় ও প্রাপ্তিও ছিল তার, পূণ্যময় শত অবদান ও জয় এক পাহাড় ॥
ছোট্ট সে ঘর আহা কত প্রিয় ছিল আমার,
আজ কেন হয়েছে যেন তা এক ব্যর্থতা ও হতাশার কারাগার,
বহুদিনে তিলেতিলে সযতনে কত কষ্টে প্রাণপণে আপন হাতে গড়া ঐ সংসার,
পার হয়ে আসা অনেক ভালবাসা, অনেক স্মৃতি অন্তরে তার চড়াই উৎরাই ও জোয়ার ভাটার,
এ ভবে যেটুকু পড়ে রবে শুধু বিত্ত নয়,
সহন, বহন, সততা ও সাধনাটার, নহে কোন অবক্ষয়,
নহে দায়ঋন কোন কালিমা নয়, সামাণ্য যেটুকু সফলতা ও পূণ্যটারই হয়,
নহে ব্যর্থতা ও পরাজয়, আমার মরণে তাদের সবার দুই জীবনে তারা যেন হয় তার গর্বিত ভাগিদার ॥
ক্রোধ আবেগ ও মোহ ভালো নয়,
জীবনের সঠিক হিসাবটা সবারযে কষিতেই হয়,
রয়েছে সবখানে ভাটিতে উজানে কিছু হারজিত কিবা জয়পরাজয়,
আদায় করা শোকর আর, প্রাপ্তি ও সফলতাটা করিতে স্বীকার, কেন এত কুন্ঠা ও ভয়,
লভিতে আরও ভালো,
চাই মনের তীক্ষ্ণ আলো, নাহলে রয়েছে নিদান ও ভয়, হরিতে পারে সবটুকু সাফল্য ও করিতে সুখ সংহার ॥
কত বাবামার মন হতাশ মলিন,
লেখাপড়া শিখে যাদুরা সবাই এখন হয়েছে স্বচ্ছল ও স্বাধীন,
এ কোন দীক্ষা পেলো অনুভবে চেতনায় যেন সব এলোমেলো, কেন এমন হলো যেন নাই কোন দায়-ঋন,
গুরুজনকে দেয়না ছাড়,
আধুনিক যুগের এ কোন বাহার,
যেমনই মেজাজ তেমনই রুক্ষ বচন তার,
তাদের নাকি নাই, জানা ও শেখার কিছুই বাকী আর,
গড়েছে এক সুবিশাল প্রাচীর ক্ষোভ, ভেদাভেদ আর অতুষ্টি ও হতাশার,
অনেক দেখেছে, নাকি আমার কাছ থেকে আর নেই বাকী তাদের কিছুই জানা বা শেখার,
কেন এমন কর্কশ ব্যবহার,
অনেক পেয়েও একটু না পাওয়ার উৎকট হাহাকার,
বাবার প্রতি সন্তানের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিনয় হয়েছে শূন্য, উধাও ও উজার,
শিখিয়েছে তাদের মায়, শুধু ভুল আর অক্ষমতা ছাড়া কোন অবদান নাকি নেই তাদের বাবার,
অবঞ্জা করে যেন ক্ষোভে ফেটে পড়ে, শান্তিটারে যাতনায় ভরে, করে অযাচিত অকারণ চেঁচামেচি ও চিৎকার ॥


পাঁচালী-০৯


আধুনিক শিক্ষায় যারা লভেছে উঁচূ জাত,
হোক জাগরণ, সব দেখে হতাশায় অসহায় এক বাবার আর্ত দৃষ্টিপাত,
দুদিনের দুনিয়ায় তারা না হয় যেন দিকহারা ও পথভ্রষ্ট,
কে দেবে জবাব,
কবে হবে আত্বার সনে পরমাত্বার সদ্ভাব,
আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা কোন কারণে এ সমাজটা হলো নষ্ট,
বিশাল এক মন,
দিগন্ত প্রসারিত তৃতীয় নয়ন,
নেই অর্থবিত্তধন শূন্য হাত, তবু দেখিতে শুভ্র প্রভাত, নিরব আকুল নিবেদন এক বাবার ঝেড়ে নাবলা শত কষ্ট,
সবটুকু পাওয়া ধূলায় লুটাতে চায়,
শুধু এক জায়গায় আমার সকল ব্যার্থতা ও অক্ষমতার দায়,
কষ্ট পাই যখন দেখি মোর প্রাপ্তি ও সফলতার, আর নাই সান্তনার জায়গাটুকু ম্লান হয়ে যায়,
বারবার ক্ষিণ করে দেয় হীনতা এসে, মনের সুখটা যেন কেড়ে নেয় শেষে সামাণ্য ঐ সুখের গর্ব আমার ও দাবীটুকু সততার ॥
দূর হতে বসে দেখেছে তামাসা,
খর্ব করা বিষাদে ভরা ঐ সুখটুকু মোর সর্বনাশা,
কত সমালোচনা ও নিন্দা মোর দীনতা লয়ে করেছে তারা হাসিহাসা,
পেতে আর খেতে, সবাইকি উঠে মেতে, কিসের এত মাখামাখি উঠাবসা ও যাওয়া আসা,  
গাছতলে বসে কি লয়ে কেমনে করে সে সন্তান মানুষ করা ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার বানাবার
এতবড় আশা,
যার নাই সামাণ্য মাথা গোঁজার ঠাই,
তবু দেখি যেন সততা আর নীতি ও আদর্শের লড়াই,
আর নাকি লোকের কাছে তার, হাত না পাতার হামেশা করে সে ঐ বড়াই,
দামাল এ প্রকৃতিটারে মাথা পেতে লয়ে বুকভরে আশা,
যখন এত জয় খড়কূটোতে কেন লয়না সে গড়াই বাবুই পাখীর মত ছোট্ট একটা বাসা,
সুখে থাকার ফুটানি করে,
দেশে দেশে বেড়ায় ঘুরে সে অবিরত সফরে,
চড়ই পাখীর মত আরামে থেকে অট্টালিকায়, পরের বাড়ীতে সোনালী স্বপ্নগুলি বিমর্ষ ও
কোনঠাসা,
কেন চাহিব, মানুষের করুণার কি দরকার,
বিধাতার ঐ অফুরন্ত ভান্ডার রয়েছে যার লক্ষ কোটি খোলা দুয়ার,
ধনীর দুয়ারে গিয়ে ভিখ মাগিলে কঠোর হৃদয়ে মানবতা জাগিলে হয়ত শেষে ঢেউ লাগিত মোর পরিবারের গায়েতে এসে করুনার ॥
বড় হয়ে গেছে সব ছেলেমেয়েগণ,
এখন আর নেই আগের দুনিয়া সেই, বদলেছে ভুবন,
তাই আমিও করেছি ঠিক, নেই প্রয়োজন অযথা এনিয়ে আর কথোপকথন,
দন্দ বিরোধ ও অপ্রীতির চেয়ে ভালো নিরব বিজন গম্ভীরতা আমি এবার তাই করেছি পণ,
ঐ দলের নেতা তাদেরই মাতা সব কথায় সব কাজে শুধু আমার সনে বাধায় বিরোধিতা ও করিছে তাই সমর্থন,
তুলে ধরে মোর অক্ষমতা পরাজয় ও ব্যার্থতা খেয়েছে তাদের সবার মাথা ভক্তি শ্রদ্ধা বিনয় ও কৃতঞ্জতা সব করেছে যা হরণ,
চোখ কান ফুটেছে ডানা গজেছে সবার,
কন্যা দুইজন লভেছে মাস্টার্স এমবিএ ও বিসিএস ক্যাডার,
পুত্র একজন এমবিবিএস বিসিএস ডাক্তার ও অন্যজন আইনবিদ বা লইয়ার,
অন্যরাও ভাই গড়েছে সবাই একটা সুন্দর জীবন যে যার মত করে চমৎকার,
কি মূল্য কিবা তুল্য তার,
রুদ্ধ যার যেন চারদিক ও সবকটি দুয়ার,
সমাজে দেখি আধুনিক শিক্ষার একি বিভৎস্য করুণ বাহার,
সব কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রয়েছে যেন একটা করে হিংস্র পশু বানাবার সরকারী খামার,
মানুষ না হয়ে পশু হয়,
কেন এত অবক্ষয় ও পরাজয়,
কেন পায়না কেউ খুঁজে,
সবাইকি তবে রয়েছে চক্ষু বুজে,  
সঠিক দিক, আলোর পথ ও ভালোর রথ, শিক্ষার মূল ও তার সুফল করে ভুল শুধু বারবার ॥


পাঁচালী-১০


বুঝা অতি ভার তাদের মতিগতি,
করেনা আলোচনা চাহেনা মতামত কিবা অনুমতি,  
শলা পরামর্শ সেতো রহমত ও বরকতের আদর্শ তাতে কি এমন ক্ষতি,
কারেও কিছু নাহি বলে,
আসে যায় ও খায় যে যার খেয়ালে ইচ্ছে মত চলে,
মন বিনিময় করা নিজ পছন্দের জীবন সংগীটা আর,
কারো চাই সাদাকালো হোক যাই একটা টাকার খনি কিবা বিশাল সোনার পাহাড়,
নিরব দর্শক হয়েও কষ্ট পাই, যখন কিছুই বলার বা করার নাই, বন্দি আমি ক্ষুদ্র আপন গন্ডিতে সীমানার,
কোথায় সুখ সাফল্য রয়েছে কার,
শুনি না পাওয়ার অস্ফুট ক্ষিপ্ত তপ্ত হাহাকার,  
সে কি নয় ওরে এ যুগের কাছে বিদ্যা ও বিদ্যানের হার,
এক ডানপিটে দূরন্ত কুমন্ত্রনা আর রঙীন বেসামাল ডিজিটাল অহংকার,
ওরে বোঁকা সবইতো মোহ কিবা ধোকা রুপগুন ক্ষমতা অর্থবিত্ত ধন সবইতো ঐ দাতার,
নহে মালিকানা কিছুই ওরে নহে তোমার,
সবাইতো দেখি অবুঝ কানা, শুধু তা দুদিনের ভোগদখলের অধিকার,
আমিতো সব পারি ও সব জানি,
এই ধারণা করেছে গ্রাস তৃতীয় নয়নের দরশনখানি,
আনব আমার সুখ আর সাফল্যগুলি যত দরকার দুহাতে ধরে খুঁজে ও টানি,
সব বুঝি সব জানি জ্ঞান আছে কাড়িকাড়ি,
তবে কেন যাবো তার কাছে, ছোট হবো দেবো ছাড়ি যাবো হারি,
করিবনা দোষ কিবা ভুল স্বীকার, কেনইবা মানবো হার কোন কমতি বা ঘাটতিতো নেই আমার ॥
অ কর্ম্মহীন উপার্জনহীন ক্লান্ত বৃদ্ধ বাবা,
কাজের উপরে থাকা আর, নিজের কামাইয়ে চলা খাওয়ার, সে আনন্দ-সুখ কিরে আর ফিরে পাবা,  
কালের নির্মম চক্র ফেরে, অনটন ও নিদানের ঘেরে, বদলে সময় এখন যেন সে সবার চোখে অথর্ব্য হাবা,
কোণঠাসা অসহায় একা রেখেছে তারে রাহুতে গিলে খাচ্ছে কুড়েকুড়ে তিলেতিলে নির্জনতা ও নিরবতার অদেখা থাবা,
অতি চতুর ওরে হদ্দ বোঁকার দল,
কেন জানেনা তারা যেমন কর্ম্ম তেমনই তার হয়যে ফল,
যতনে আদরে কোকিলের বাচ্চা করে পালন ধূর্ত কাকে সে কেমন বোকা ও পাগল,
হার কিবা ঠক জিত,
তার ফলাফল হতেও পারে বিপরীত,
সাফল্য ও সুখ কেজানে ওরে কার চোখে তা কেমন,
কারো কাছে ধন ভোগবিনোদন কেউ বলে না মানুষ হওয়াই বড়কথা লভে সুন্দর জীবন,
সেতো সবারই জানা,
যুগের হাল তাদেরে করেছে বেহাল কানা,
ক্লান্ত পেরেশান ছুটছে কুহেলিকার পিছু হারিয়ে সবকিছু সম্বল ও ঠিকানা,  
দিনের শেষে বেচুইন মুসাফির বেশে পেয়ে পরওয়ানা লাভক্ষতি আর দেনাপানার ঐ মস্ত হিসাবখানা,
বিজয় কাফেলা ফেলে,
ভিনদেশে চলে গেলে তার সময় হলে,
আবু হকে বলে, সময় হলে পাবে সকলে তার সব কাজের বিনিময় প্রতিদান নায্য সঠিক শাস্তি কিবা পুরস্কার ॥


পাঁচালী-১১


স্বামী নয় যেন কাজের লোক এমনই ধিক্কার ধুরছে,
কাজ না জানা কাজ না করা যেন বসে খায়, অকারণ তাই ঘুরছে,
ঐ একই কথার তীক্ষ্ণ বাণে, রোজই কঠিন আঘাত হানে, যেন সারাক্ষণ শুধু চূরছে ।
অকারণ করে দূরদূর উড়াঝাড়া,
ভাবটা এমন যেন তেড়ে আসে করে তাড়া,
আমি যেন তার কামলা,
বসেবসে যেন শুধু তার খাই ভরে গামলা,
আমি বসে খাই, একেবারে কাজ নাই, করিনা কোন কামাই,
সে সংসারের সব কাজ করে, দিনের অর্ধ সময় কাটে তার রান্নাঘরে, হিংসায় মরে যায় বুঝিবা তাই ।
সে যেন এক ব্রাম্মন
তার বচন আচরণ ও ভাবটা এমন,
আর আমি যেন অবহেলার নমশূদ্র ঘৃন্য হরিজন,
ছোয়া না যেন হায় কভু ওরে লাগে তার গায় ভুলেও কখন,
মেনে লওয়া হার, সেইতো বুঝি উত্তম,
হয় হোক হারাম, সব সুখ ও আরাম, শান্তি ও দাম সবকিছু কমকম ।  
সবাই যদি হয় তার,
পক্ষ লয় তাদের মা ঐ মহিলার,
দন্দ লড়াই কি লাভ তাতে আর কিইবা লাভ দরকার,
ছেড়ে দিয়ে সব তার ঐ বিধাতার হাতে মেনে লই ও নিরবে সহি সে অত্যাচার ।
আমারই নাহয় হলো হার,
দিলেম বিসর্জন দিয়ে সবকিছু ছাড়,
বহাল হোক ও বহাল থাক একক আধিপত্য তার,
কোথা পাবো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, অডিও-ভিডিও প্রমাণ, কে হবে স্বাক্ষী আর কে করিবে হায় তার বিচার ।
সব ঘটে অন্তরালে কেউ নাই তা দেখার,
বৈরী আচরণ কবেইতো দিয়েছে করে বিছানা আলাদা তার,
শুধু অপবাদের নির্মম শিকার,
সীমানা এখন বড় অসহায় ঐ বৃদ্ধ বাবার,
কেন শুধু তাই করিছে প্রচার,
কুৎসা, নিন্দা, বদনাম ও অপবাদই হলো অর্জন আর পাওনা তার,
মসজিদ ও ঘর, বন্ধ হয়েছে আসা-যাওয়ার পথে কেনাকাটা করা, যাওয়া দোকান ও বাজার,
কোথা যাবো ভাই, মোর আর কেহ নাই, আমার একজনই আপন আর একটাই ঠাই, মহারাজার ঐ মহারাজ দরবার ।
এত ত্যাগ ও এত সহন তবু নগন্য,
কাউকে নাহি কহে, মৌন রহে ও গোপনে বহে, ধন্য ধন্য,
ফেলেছে তারে ঠেলে ঐ দলে, যারা একেবারে অপদার্থ, অযোগ্য ও অকর্ম্মন্য,
এমনই স্বামী এমনই এক পিতা,
ঘরে যার কেহ নাই, তবু বাহিরে অনেক বন্ধু ভাই ও মিতা,
আমি জানি তার সব কারণ,
ছিল আজও আছে একটা বদ্ধমূল ধারণা এমন,
দেইনি কিছুই তাদেরে আমি তাদের তরে কিছুইতো করিনি তেমন,
আমি নাকি এমনই একজন, আমার নাকি নাই কখনও ছিলনা মন, তাদেরে কিছু দেওয়া বা করার মতন ।
একবার ভয়াল ঘূর্নিঝড়ে,
গায়ের বাড়ীতে বাবার ঘরটা গিয়েছিল পড়ে,
কি করি এখন, ঘরটা আমি মেরামত করি কেমন করে,
গহীন রাতের অন্ধকারে বন্দি হয়ে থেকেও ঐ ভগ্ন ঘরের ভিতরে,  
বৃদ্ধ অসহায় বাবা উঠেছিল কেঁদে অঝোরে,
বলে এসব দেখার আগে, কেন আমি ওরে,
বাবারে, হায় সেদিন পড়ে ঘরের নীচে কেন আমি যাইনি মরে,
আমার হাতেও ছিলনা কোন টাকা, তবু ঐ দুঃসময়ে মম অক্ষমতা কেমন করে বলি বাবারে ।
চলছিলাম খুড়িয়ে খুড়িয়ে আমি, স্ত্রী ও সন্তানের কাছে সব ঢেকে,
সাত হাজার টাকা আনি, বউয়ের তিনভরি সোনা আমারই দেওয়া প্রথমে বন্ধক রেখে,  
শেষে দিয়েছি বিক্রি করে যখন আর তা শোধিতে নাহি পারি,
আর তা গড়ে দেওয়া হয়নি পরে, সেইযে আমি তার কাছে হয়েছি ঋনি ও গিয়েছি হারি,
বউয়ের সোনাদানা নেই, হয়নি জায়গা কেনা ও বানানো বাড়ী,
জীবনে সে বলেছে কতবার, যাবে চলে বাবার বাড়ী আমার এ ঘর-সংসার জনমের তরে ছাড়ি ।
আজও তার যাওয়া হয়নি, সে যায়নি,
জানি আমি আসলে, ঐ বেচারা সুখওতো সে পায়নি,
তাই বুঝি আজও সে হয়, সময় সময় ভীষণ উগ্র, ক্ষিপ্ত ও তীব্র অভিমানি,
আমি শুধু গোঁজামিলে,
সবটুকু অপবাদ ও অপমান খেয়ে গিলে,
নিরবে তা করছি হজম,
দাঁতে দাঁত কামড়ে, খিঁচে থেকে কিছুক্ষণ দম,
জানিনা কবে পাবো মুক্তি ও ছাড়,
হতে তার ঐ সব অপবাদ, অত্যাচার ও দূর্ব্যবহার,
কবে পাবো আমি পার, কেজানে হয়েছে তিক্ততা এই দুজনার, কত লাভক্ষতি কিবা জিত-হার কতটুকুইবা কার ॥  


পাঁচালী-১২
    
দিনভর কাজ করে দহেমনে ক্লান্ত,
কই এত পেরেশানি তাড়না, অনটন ও ভাবনা তবু হয়নিতো ক্ষান্ত,
তবু খুঁজে বেড়াতে ও প্রাণভরে দেখতে বাসনা হায় কি আছে কোথায় এ জীবন আর ভুবনটার কোথা শেষ প্রান্ত,
দেখি যখন সবার বিষন্ন বদন, ফিরে এসে আমি ঘরে,
কি জবাব দেই বলো আমি তাদেরে, তারাযে আমারে কেবলই প্রশ্ন করে,
সবার চাওয়ার সোনার হরিণ কিবা ঐ সুখপাখীটা কোথা হতে বলোনা আমি আনবো ধরে,  
তুমি কেন পারোনা, রাতারাতি হয় কোটিপতি মানুষে কেমন করে, ঝলসানো ঐ জৌলুস যা দেখি ঘরেঘরে,
আমি এক ডানাভেজা পাখী, চুপচাপ ভিতরের ছোট কোন ডালে বসে থাকি, হয়ে কাবু ও কাতর অদেখা দূরন্ত দামাল ঝড়ে ।
বড়ই নিরুপায়,
মনতোরে সুখ চায়,
চোখগুলিও দেহটারে জ্বালায়,
কেমনে আমার দিনমাস ও বছর যায় ওরে,
নিত্য নবনব কত কঠিন পরীক্ষায় পাশ কিবা ফেল করেকরে,
সেকি মিছে বলছি হয়ে, অতিশয় কমদামী অসীম এক নিদানে আমি রয়েছি পড়ে,
হবে সবকিছু কেনা মিটিবে দায়দেনা ও সব প্রয়োজন, চাইনাতো বাবা প্রাসাদ মোরা ও সোনার খনি কিবা টাকার পাহাড় ॥
আজও কখনও ঘরের সবাই একত্র হলে,
আর হেন কোন অতীত প্রসংগ তাদের সামনে উঠে এলে,
অবজ্ঞায় ও অবহেলে, ফেলে দিতে চায় যেন তারা সবে মোরে ঠেলে,
কারণ জানা আমিযে একাই শুধু আমার দলে, কখনও একটু কোন সুযোগ পেলে,
আমিও তাই নিরবতা ও একাকিত্ব মানি, স্বচ্ছন্দে থাকি ও একটুখানি সুখ পাই আড়ালে থেকে ও সবারে এড়িয়ে চলে,
কথার তীক্ষ্ণ বাণে আমারে করিতে চায় ও করে নাজেহাল ও ঘায়েল,
বাবা কেন কথা বলো আর, তুমিতো সব পরীক্ষায় মোদের সবার কাছে সেই কবেই করেছ ফেল,  
এই হলো মোর কষ্টের পাঁচালীর উপসংহার,
অনেক না পাওয়ার মাঝে রয়েছেযে আমার,
অসীম সান্তনা ও বিধাতার দরবারে শুকরিয়া অপার,
জানি তাদের ঐ হিসাবটা শুধু আমার ব্যর্থতা ও অক্ষমতা আর তাদের না পাওয়ার,  
কি পেয়েছ আর,
যা আছে তোমাদের কাছে তা আছে কজনার,
কেনো তোমরা গণনায় ধরোনা আর কোন হিসাব ও মূল্যায়ণ করোনা ওরে বলো তার ॥
বাবায় বলে, অনেক দোষ আমার কেনাকাটার,
বুঝতে পারি আমার কোন কথা-কাজ কিছুই পছন্দ হয়না তার,
তাই বহুদিন থেকে, এখন আমি আর করিনা এ সংসারের কোন কেনাকাটা ও বাজার,
এটা হয়েছে অনেক দাম, ওটা তোমাকে দিয়েছে ওজনে কম,
কি এনেছ এটা চাষের মাছ, এতবড় মাছটা তাও আবার পড়েছে নরম,
এবারের চালগুলি ভালোনা, ভাতেও তেমন বাড়েনা এমন কথা শোনতে হয় হরদম,
গরুর মাংসেও দিয়েছে তোমারে হাড় অনেক বেশী,
নিত্য এত কে বুঝাবে তারে, এখন আর নেই মনের সেই জোর দূর্বল হয়েছে তার পেশী,
খেতে বসে তরকারি মজা না হলে,
এটা খামারের ওটা হাইব্রিড কত কথা সে আমারে বলে,  
গিন্নীর নিন্দা আর না দিয়ে জবাব তার সমালোচনার, মন আমারে চুপিচুপি বলে আমিই যেন মেনে নিই তার কাছে হার ॥
জানি ওরে যত দোষ,
তার সবইতো আমার, আমিযে ভাই নন্দঘোষ,
আমিও সামলে নেই হজম করি সবকথা তার ও আমার মনের কষ্ট কিবা রোষ,
মাঝির মনে ধরেনা যারে,
শুনেছি তার নায়েও নাকি হয়না ঠাই লয়না তুলে তারে,
হোকনা গরীবের সংসার,
যারে দেখতে নারি চলন বাঁকা হয়যে তার,
অনেক কষ্টে আপন হাতে দিনে ও রাতে গড়া এ সবইতো আমার,
এ কোন অনিয়মের জের,
নাকি তা নির্মম ভাগ্যের ফের,
কেন আমি মন পেলামনা তার, আপনইবা বলো হয়েছি আর হবো কেমনে কবে কার ॥


পাঁচালী-১৩


এ বিশাল রাজ্যটা ছিল তার,
মুকুট কিবা সিংহাসন কিছুই ছিলনা যেই রানী সাহেবার,
আমি এক ন্বিঃস্ব নিরীহ ও নগন্য অধম রায়ত ছিলাম, কোন সংগী আপন স্বজন কেউ ছিলনা যার,
চল্লিশ বছরের সাধনা শ্রম ও রণ,
এই হলো তার গল্পটা সেই মোর প্রিয়সী আর দ্বৈত জীবন,
কিছু পাওয়া আর,
কিছু না পাওয়া ও তার শত কষ্ট অপবাদ ও নিন্দার,
অনেক সাধ বাসনার জীবনের দিনগুলি মোর হারিয়ে যাওয়া অনেক ত্যাগ ও বির্সজন এই নিয়ে মোর ছিল সংসার ॥
বুকভরে এখন নেবো দম,
তবে আর কিসের ভয় কিসের সরম,
সারাটা জীবনইতো সবকিছু মোর ছিল অতি কম কম,
তবুতো কোনদিন ওরে মনটাতো বলেনি আমারে চলো চলে যাই আশ্রম,
আজ কেন মন তাই বলে সারাক্ষণ, যদি হয় সুখ-আরাম যন্ত্রনাও কম তবে সেইতো উত্তম,  
সুখ ও আরাম হেথা যেমনই হোক,
তাতে যাই ভাবে কিবা যাই বলে বলুক সাধারণ লোক,
হলেও কিছুটা নিঃসংগতার চাপ ও শোক,
হয়তো মরণ কালে কেউ রবেনা পাশে মোখে দিতে মোর জল একঢোক,
তাতে কি যতদিন আছে আয়ু, পাবোতো একটু সুখ ও মুক্ত বায়ু, হতে মুক্তি তিক্তরসে সিক্ত ও বিরক্ত এ মরম,
ব্যর্থতার অপবাদ ও জ্বালাতন আর কটুকথার মানষিক নির্যাতন সেতো নিশ্চয়ই হয়ে যাবে শেষ কিবা অনেক কম,
ঐ সে নিঝুম নিরবতা,
আমি তার সনেই সদা বলবো কথা,
নহে ভোগবিনোদন স্বপ্নআশা ও অনটনভরা এ জীবনের দুঃক্ষব্যাথা,
হে প্রভূ আমি ধন্য তবু, শোকরিয়া পরম,
তাই হবে আমার সব পরাজয় ও ব্যর্থতার অপবাদের কষ্টের মলম,
দিয়েছ ওরে তুমি মোরে তব এ ভুবন ও জীবনের শত রুপ ও রঙের ছবি আঁকার,
তব মহিমার, রঙতুলি নয় একটু সান্তনার কাগজ ও কলম, নয়ন ভরে দেখা আর সে শোভা লেখিবার ॥    
দোষ দেবো কেমনে বলো আমি তার,
পায়নিতো সে যা ছিল তার প্রয়োজন, পাওনা ও অধিকার,
তাই বুঝি ঐ সাধ আহলাদগুলি কখনও নিরবে কখনও সরবে করেছে তার সদা হাহাকার,
আহা নিয়তি ছিলযে এমন,
তার উপর, দৈবাত দস্যুর মত এসে অনটন,
দিয়েছে হানা, শোনেনি মিনতি মানা, সামাণ্য যেটুকু ছিল তা’ও করেছে হরণ,
জীবনের মোহ বাসনা বিলাস অপার,
করে অনুক্ষণ জ্বালাতন, আমার ঐ স্বপ্ন আশার যত সুখ, সখ, রঙ, সাধ ও বাহারী বাসনার ॥
আজব সহস্র পরিবার,
আজব এ বিশ্বজগত সংসার,
কেউ অন্ধ, কেউ চালবাজ,
এ জগতে কেউবা হয় চরম স্বার্থবাজ,
কেউ হাত পেতে শুধু নিতে চায় নেই তাতে কোন লাজ,
কেউ আবার হায় শুধু ঘুরে বেড়ায়, বসে খেতে চায় আরামে দিন যায় না করে কাজ,
সুখ আরাম পিয়াসি, নিতে চাহেনা মাথায় কোন দায়,
সব দেখেশুনে জেনে বুঝেও চোখ বুজে রয়, হেয়ালি উদাসী হয় এবং তা এড়াতে চায়,
এক ঘরেই এমন,
অবিবেচক রয়েছে কতজন,
কেনযে হেন, মানব দেহের গাধা গরু শৃগাল কুকুর,
বোধ বিবেকের মনের জগত থেকে যেন রয়েছে তারা বহুদূর,
কারো সুখ-দুঃখের ভাগ লয়না, দরদী হয়না, সে এক অন্যসুখের অচিনপুর,
আবার কেউ পারেনা তবু যেন হারেনা ছাড়েনা হাল, করে সবকিছু দেখভাল একাই সদা তৈয়ার চাহে বহিতে সবটুকু ভার ॥
সে মোর ব্যর্থতা ছিল, তা আমি কভু নাহি মানি,
জয়-পরাজয় কিবা ঠক-জিত হার কারে কয় তা’ওতো আমি সঠিক জানি,
এমন ভাগ্যবান আছে কয়জন,
সব পেয়েছে, যা ছিল ওরে তার প্রয়োজন,
লোকের কথায় লোকের ভাষায় যখন খারাপ হয়ে যায় মন,
ভাবে, কেন রেখেছে মোরে হেন অসহায় করে, কি চাহে ঐ মহারাজা মহাজন,
এ সবইতো তার,
নেয়ামত কিবা দান ও উপহার,
যাই হোক বেশীকম জানি সেতো শুধু দুদিনের তরে দেওয়া ধার,
এ গল্পটা বিধাতার, সে এক বৈচিত্রময় সৃজন জগত ও জীবনের সহস্র অরুপ বাহার,
কমবেশী যাই হোক যার, মহান স্রষ্টা, পালক ও দাতার, ভিখারী-রাজা সবাই পোষ্য তার, বিশ্বজোড়া একখানা পরিবার ॥